প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ২০:০০ পিএম
‘আমি এখন আর জন্মদিনের উপহার চাওয়ার পর্যায়ে নেই’Ñ সংবাদ সম্মেলনে কথাটা বলেই হেসে ফেলেন ফিল সিমন্স। বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন মাস তিনেক হলো। কয়েক দিন আগে নতুন চুক্তির পর জিম্বাবুয়ে সিরিজই সিমন্সের প্রথম পরীক্ষা। সিলেটে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ মাঠে নামার দুই দিন আগে ৬২ বছর পূর্ণ করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক এই ক্রিকেটার। জীবনের নানা বাঁকে ক্রিকেটের সঙ্গে তার জন্মদিন কেটেছে অনেকবার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন, পরে কোচিংয়েও সমৃদ্ধ হয়েছে অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা এখন সিমন্সকে যদি জন্মদিনের উপহার দিতেই চান, তাহলে সেটা কী হলে ভালো হয়, তা পরের কথায়ই জানিয়ে দিলেন এই কোচ, ‘তারা যদি উপহার দিতে চায়, প্রথম ম্যাচটি জিতলেই হবে (হাসি)। আমার এটুকুতেই হবে।’
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগামী রবিবার মাঠে গড়াবে
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। স্বাভাবিকভাবেই ঘরের মাঠে ফেভারিটের
তকমাটা বাংলাদেশের ওপর। জিততেই হবেÑ এমন একটা বাড়তি চাপও থাকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে
খেলতে নামলে। তাহলে কি জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করবে বাংলাদেশ? প্রথম টেস্টের আগে গতকাল
শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন জানতে চাওয়া হয়েছিল সিমন্সের কাছে। তবে টাইগার কোচ এখনই এত
দূরে চোখ রাখতে চান না, ‘আমি হোয়াইটওয়াশের ব্যাপারে জানি না। একবারে একটি পদক্ষেপ নেওয়ার
পক্ষে আমি। এখানে প্রথম টেস্ট হবে। এটি জিতলে আমরা পরের ম্যাচ নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু
করব, সিরিজ জেতার কথা আলোচনা করব। প্রথম টেস্ট জেতার জন্য আমাদের প্রথম দিন জিততে হবে।
আমি এভাবেই ভাবতে পছন্দ করি। এখনই চট্টগ্রাম নিয়ে ভাবতে পারব না। আপাতত সিলেট টেস্টে
মনোযোগ দিতে হবে।’
লম্বা সময় ধরে জাতীয় দলের বাইরে ছিল নাজমুল হোসেন শান্তরা। এ সময়
বেশিরভাগ ক্রিকেটারেরই ব্যস্ততা ছিল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে। জিম্বাবুয়ে সিরিজকে সামনে
রেখে গত ১৪ এপ্রিল থেকে সিলেটে শুরু হয় জাতীয় দলের প্রস্তুতি। ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের
বিপক্ষে খেলার প্রায় চার মাস পর সপ্তাহখানেক অনুশীলন শেষে আবার সাদা পোশাকের ক্রিকেটে
মাঠে নামছে বাংলাদেশ। তবে ক্রিকেটারদের প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি দেখছেন না সিমন্স,
‘প্রস্তুতি বেশ ভালো হয়েছে। এখানকার ফ্যাসিলিটিজ আমার মনে হয় স্বপ্নের মতো। আপনি যা
চান, তাই করতে পারবেন। হোটেলটা খুব দূরে নয়। আমরা অনেক কাজ করতে পেরেছি এই অল্প সময়েই।’
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে এখন পর্যন্ত টেস্টে মুখোমুখি হয়েছে ১৮ ম্যাচে।
বাংলাদেশ জিতেছে ৮ ম্যাচ। ৭ ম্যাচ জিতেছে জিম্বাবুয়ে। বাকি তিন টেস্ট পরিত্যক্ত। সবশেষ
তারা টেস্টে মুখোমুখি হয়েছে ২০২১ সালে। চার বছর আগে হারারেতে সেই টেস্টে বাংলাদেশ জিতেছিল
২২০ রানে। এবারও ঘরের মাঠে সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবে নাজমুল হোসেন শান্তর
দল। সাধারণত টেস্টে ঘরের মাঠের সুবিধা কাজে লাগাতে দেখা যায় দলগুলোকে। বাংলাদেশও কি
ওই পথে হাঁটবে, স্পিন সহায়ক উইকেট হবে নাকি পেসবান্ধব? সংবাদ সম্মেলনে আসা ফিল সিমন্সের
কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ‘কেমন উইকেট চান?’ টাইগার প্রধান কোচ সিমন্সের উত্তরে ছিল
ভবিষ্যতে চোখ রাখার বার্তা, ‘আমরা টেস্ট দলটাকে যেদিকে নিয়ে যেতে চাই, ও রকম খেলতে
চাই।’
সিমন্স বলেছেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা আছে, প্রপার উইকেট প্রস্তুত করার।
আমরা একটা নির্দিষ্ট ওয়েতে খেলি, এজন্য আমাদের জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে স্পিন উইকেট তৈরির
দরকার নেই। প্রপার উইকেট বানিয়ে টেস্ট ম্যাচ জেতার চেষ্টা করব। স্পিন উইকেট বা পেস
উইকেট তৈরির দরকার নেই।’
সিমন্স যতই বলুক স্পোর্টিং উইকেটের কথা, সিলেটে পেসবান্ধব উইকেট হবে
বলেই ধারণা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের এক্স ফ্যাক্টর হতে পারেন তরুণ গতিময় পেসার
নাহিদ রানা। তবে শুধু নাহিদ নন, জিম্বাবুয়ের দীর্ঘকায় পেসার ব্লেসিং মুজারাবানিও হতে
পারেন স্বাগতিকদের জন্য হুমকি। ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার এই পেসার পছন্দের উইকেট পেলে
যে খুব ভয়ংকর হবেন, তাও মনে করিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ কোচ, ‘পেসারদের পক্ষে উইকেট থাকলে
বিশ্বের যেকোনো দলের বিপক্ষেই সে (ব্লেসিং মুজারাবানি) হুমকি। তার উচ্চতা অনেক বেশি,
এটা তাকে ভিন্ন রকম সুবিধা দেয়। তবে তার বিপক্ষে ছেলেরা খেলেছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেও
দেখা হয়েছে। তার সম্পর্কে ধারণা আছে। কীভাবে খেলতে হবে, নিশ্চয়ই সেই ধারণা হয়ে যাবে।’
নাহিদকে নিয়ে সিমন্সের ভাষ্য, ‘এটা মুজারাবানির মতোই ব্যাপার। তারা তাদের মতো করে ব্যাটারদের
বেকায়দায় ফেলতে পারে, যার জন্য প্রায় সব পেসারই মুখিয়ে থাকে। ঠিক জায়গায় বল করতে পারলে
অবশ্যই জিম্বাবুয়ের ব্যাটারদের চ্যালেঞ্জে ফেলতে পারে।’
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর সাদা বলের ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিয়েছেন বাংলাদেশের
সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। এখন তিনি খেলেন শুধু টেস্ট। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে
এ সংস্করণে তার আছে সুখস্মৃতি, শেষ তিন টেস্টের দুটিতেই ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। রঙিন
পোশাককে বিদায় বলার পর প্রথম সিরিজে মুশফিকের ওপর কতটা নির্ভর করবে বাংলাদেশ? সিমন্সের
উত্তর, ‘সে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অনেক কিছু দিয়েছে। মাহমুদউল্লাহও তার কাছে বাংলাদেশ
ক্রিকেটের অনেক ঋণ, বিশেষত গত কয়েক বছরে সাদা বলের ক্রিকেটে তারা যা দিয়েছে। আপনার
প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয়, সে সর্বোচ্চ পেশাদার। আমি জানি, সে এখন রান করতে চায়। সে
ভালো করতে চায়, কঠোর পরিশ্রম করছে রান করাটা নিশ্চিত করতে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তার
অসাধারণ রেকর্ড আছে। কিন্তু এখন শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।’