প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৫ ২০:২৬ পিএম
চলতি বছর বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় কোনো সিরিজ খেলেনি। এখন পর্যন্ত টাইগাররা অংশ নিয়েছে কেবল চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। মিনি বিশ্বকাপের ব্যর্থ মিশন শেষে ক্রিকেটাররাও এখন নিজেদের ঝালিয়ে নিচ্ছেন ঘরোয়া লিগে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খানিকটা লম্বা বিরতিতে থাকলেও বাংলাদেশের জন্য সামনে অপেক্ষা করছে ব্যস্ত ক্রিকেট সূচি। ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়ে এ মাসেই শুরু হচ্ছে নাজমুল হোসেন শান্তদের ব্যস্ততা। এরপর সে ব্যস্ততা এতটাই বিশাল থালা সাজিয়ে আসবে যে, ক্রিকেটাররা খেলতে খেলতে দম ফেলার সুযোগ পাবেন কি না, সে শঙ্কাও আছে।
২০২৭ সালের মার্চ পর্যন্ত বিস্তৃত আইসিসির বর্তমান ভবিষ্যৎ সফর পরিকল্পনাতেই
(এফটিপি) হবে খেলার বন্যা, আছে এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। বর্তমান
এফটিপির ২৩ মাসে বাংলাদেশ দল পরপর দুই মাস খেলাবিহীন থাকবে শুধু এ বছরের ডিসেম্বর ও
আগামী বছরের জানুয়ারিতে। বাকি সময়টায় এক মাসের বেশি ফাঁকা সময় নেই কখনই। এ তো গেল শুধু
সময়ের হিসাব। এবার টাইগারদের ব্যস্ততাটাকে এবার খেলার সংখ্যা দিয়েই বোঝানো যাক। দুই
বছরের কম এই সময়ে বাংলাদেশ দল শুধু দ্বিপক্ষীয় সিরিজই খেলবে ১৬টি। এর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ
সিরিজ অর্থাৎ টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি সবই আছে, এমন সিরিজ তিনটি। তিন ওয়ানডে ও তিন
টি-টোয়েন্টির সিরিজ পাঁচটি, দুই টেস্ট ও তিন ওয়ানডে হবে একটি সিরিজে।
এফটিপি অনুযায়ী আগামী ২৩ মাসে ১৬টি দ্বিপক্ষীয় সিরিজে বাংলাদেশের
টেস্ট খেলার কথা মোট ১৮টি, ওয়ানডে ৩২টি ও টি-টোয়েন্টি ৩২টি। এর বাইরে এ বছরের সেপ্টেম্বরে
আছে এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি ও আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আগামী দুটি বড় আসর টি-টোয়েন্টি সংস্করণের বলে এর আগে ২০ ওভারের
ক্রিকেটেই জোর দেবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। মে মাসে পাকিস্তান সফরে ৩ ওয়ানডে
ও ৩ টি-টোয়েন্টির সিরিজটি যেমন দুই বোর্ডের সমঝোতায় রূপান্তরিত হচ্ছে ৫ টি-টোয়েন্টির
সিরিজে। এফটিপিতে নতুন ঢোকা আগামী জুলাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজটিও হবে ৩
টি-টোয়েন্টি ম্যাচের।
২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত প্রধান কোচের দায়িত্ব পাওয়া ফিল
সিমন্সের অধীনে ব্যস্ত এই সময় বাংলাদেশ দল পার করবে। ২০২৭ বিশ্বকাপ অবশ্য চলতি এফটিপির
মধ্যে পড়েনি। বর্তমান এফটিপি শেষ হবে ২০২৭ সালের মার্চে; আর দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে
ও নামিবিয়ায় ওয়ানডে বিশ্বকাপ হওয়ার কথা সে বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে। বিসিবিও পরিকল্পনা
সাজাচ্ছে এফটিপি ছাপিয়ে আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপে চোখ রেখে। এ নিয়ে বিসিবির পরিচালক ও
ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমূল আবেদীন ফাহিম বলেছেন, ‘সামনে আমাদের অনেক খেলা।
সেগুলোসহ ২০২৭ বিশ্বকাপ মাথায় রেখেই আমরা এগোব। পরিকল্পনা নিয়ে কিছু প্রাথমিক আলোচনা
হয়েছে। ৮ এপ্রিল কোচ ঢাকায় এলে বিস্তারিত আলোচনা হবে।’
ক্রিকেটে টানা খেলার চাপ মানেই কঠিন ও ক্লান্তিকর সময়। আবার এ-ও ঠিক,
সব সংস্করণ মিলিয়ে এমন টানা খেলার সুযোগ সব সময় পায় না বাংলাদেশ দল। নাজমুল আবেদীন
এটাকে তাই একটা সুযোগ হিসেবেই দেখছেন, ‘এত খেলা তো আমরা সব সময় পাই না, এবার পাচ্ছি।
এটাকে চাপ না ভেবে একটা সুযোগ হিসেবে নিতে চাই। বোর্ডের দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে ২০২৭ বিশ্বকাপের
আগের সময়টায় জাতীয় দল ও “এ” দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটারকে খেলার সুযোগ দিতে। সব খেলায়
একই খেলোয়াড় না খেলিয়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলাতে। নতুনদের সুযোগ দেওয়ার এটা একটা দারুণ
সুযোগ।’
টানা খেলা থাকবে বলে ক্রিকেটারদের চোটমুক্ত রাখার স্বার্থেই বিশ্রাম
দিয়ে খেলানোর নীতিতে হাঁটা ছাড়া উপায় নেই। পর্যাপ্তসংখ্যক খেলোয়াড় যেন যেকোনো সময়ে
সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার ডাকে সাড়া দিতে প্রস্তুত থাকতে পারেন, লক্ষ রাখতে হবে সেদিকেও।
বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান অবশ্য জানিয়েছেন, জাতীয় দলে খেলোয়াড় সরবরাহের ধারা
ঠিক রাখতে ‘এ’ দল ও হাই পারফরম্যান্স দলের খেলা বাড়ানোয় গুরুত্ব দেওয়া হবে। নাজমুল
হাসান পাপনের আগের বোর্ড পরিকল্পনা সাজালেও সেটি সেভাবে বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। তবে
দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ক্রিকেটের উন্নয়নে নানা
পদক্ষেপ এগিয়ে নিচ্ছেন। সেই প্রসেস অনুসরণ করে ক্রিকেটাররা দেশের ক্রিকেটকে কতটুকু
এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
বাংলাদেশের সূচি
এপ্রিল, ২৫ : বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে দুই টেস্ট (হোম সিরিজ)
মে, ২৫ : বাংলাদেশ-পাকিস্তান পাঁচ টি-টোয়েন্টি (অ্যাওয়ে সিরিজ)
জুন, ২৫ : বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা দুই টেস্ট, তিন ওয়ানডে, তিন টি-টোয়েন্টি
(অ্যাওয়ে সিরিজ)
জুলাই, ২৫ : বাংলাদেশ-পাকিস্তান তিন টি-টোয়েন্টি (হোম সিরিজ)
আগস্ট, ২৫ : বাংলাদেশ-ভারত তিন ওয়ানডে, তিন টি-টোয়েন্টি (হোম সিরিজ)
সেপ্টেম্বর, ২৫ : এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি (নির্ধারণ হয়নি)
অক্টোবর, ২৫ : বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ তিন ওয়ানডে, তিন টি-টোয়েন্টি
(হোম সিরিজ)
নভেম্বর, ২৫ : বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড দুই টেস্ট, তিন ওয়ানডে, তিন টি-টোয়েন্টি
(হোম সিরিজ)
ফেব্রুয়ারি-মার্চ, ২৬ : টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ (ভারত)
মার্চ-এপ্রিল, ২৬ : বাংলাদেশ-পাকিস্তান দুই টেস্ট, তিন ওয়ানডে, তিন
টি-টোয়েন্টি (হোম সিরিজ)
এপ্রিল, ২৬ : বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড তিন ওয়ানডে, তিন টি-টোয়েন্টি
(হোম সিরিজ)