রুবেল রেহান, শিলং থেকে
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৫ ১৬:৫৫ পিএম
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৫ ১৭:০৪ পিএম
জওহর লাল নেহেরু স্টেডিয়াম
মেঘালয়ের পাহাড়বেস্টিত রাস্তা ধরে ডাউকি থেকে যেতে হয় শিলং শহরে। ট্যাক্সিতে শহরের পুলিশবাজার মোড়ে পৌছাতে সময় লাগে সাড়ে তিন ঘন্টা থেকে চার ঘন্টা। মেঘের আলিঙ্গন গায়ে মেখে যতটা পথ সামনে এগিয়েছি রোমাঞ্চ ভর করেছে ততটাই। পাহাড়ঘেরা মেঘালয়ে আসতে আসতে সমতল ভূমি খুব একটা চোখে পড়েনি। খুব বেশি স্টেডিয়াম না থাকার কারণটাও বোধকরি তাই; এর মধ্যেই হাতে গোনা যা দু’একটি স্টেডিয়াম চোখে পড়েছে; তা ছিল মূলত ফুটবলের টার্ফ।
ভারতের যে কোনো জায়গায় ঘুরতে বেরুলে ব্যাট বল হাতে দেখা যায় তরুণদের। কিন্তু মেঘালয় রাজ্যের, বিশেষকরে এখানকার রাজধানী শিলংয়ের আবহ কিছুটা ভিন্ন। ডাউকি থেকে শুরু করে শিলং, আসার পথে দেখা মেলে ফুটবল পায়ে কারিকুরি করছে ফুটবলপ্রেমিরা। এখানকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় ক্রিকেট নিয়ে তাদের খুব একটা আগ্রহ নেই। অনেকে তো জানেনই না যে আজ থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ক্রিকেট ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট আইপিএল (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ)! ক্রিকেট উন্মাদনার দেশে যেন এক ফুটবলের শহর শিলং।
এএফসি বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলতে এই শহরেই এখন অবস্থান করছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। আগামী ২৫ মার্চ শিলংয়ের জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে গড়াবে চির প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের মধ্যকার ম্যাচটি। আইপিএল নিয়ে খুব আগ্রহ না থাকলেও এখানকার মানুষের মধ্যে এই ম্যাচ নিয়ে আছে তুমুল আগ্রহ।
কেমন আগ্রহ তা জানতেই একটু খোজ খবর নিতে বেড়িয়ে পড়ি শিলংয়ের রাস্তায়। পোলো স্পোর্টস গ্রাউন্ডের একটু আগে দেখা মেলে স্থানীয় পর্যায়ে খেলা এক ফুটবলারের সঙ্গে। জার্সি, বুট পড়া দেখে বুঝতে অসুবিধা হয়নি বাটকুপার ননি একজন ফুটবলার। পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলে বলেন, এখানকার স্থানীয় লিগে নিয়মতই খেলেন তিনি।
বাটকুপারের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দেই ক্রিকেট দেখেন কিনা, উত্তরে একবাক্যেই বলেন, না। তবে পছন্দের ফুটবলার কে সেটি বলতেই প্রথমে বললেন ভারতের কিংবদন্তি ফুটবলার সূনীল ছেত্রির কথা। শিলংয়ের স্থানীয় কোন ফুটবলারকে চেনেন প্রশ্ন করলে বলেন ইউগুয়েন লিংদোর কথা। খানিক বাদে এখানকার আরও একজন বলেন এই ফুটবলারের কথা।
হোটেল রুমে এসে নিউজ লিখতে বসার আগে ইন্টারনেটে খোজ নিয়ে দেখি ভারতের জার্সিতে খেলা এবং শিলং থেকে উঠে আসা এখানকার সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবলার ইউগুয়েন লিংদো। ভারতের জাতীয় দলে ২১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত খেলেছেন এই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার। শিলংয়ে জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইউগুয়েন ভারতের জার্সিতে খেলেছেন ২৪ ম্যাচ। ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (আইসিএল) বেঙ্গালুরু, পুনে, ইস্ট বেঙ্গলের হয়ে খেলেছেন তিনি। ক্লাব ফুটবল ছাড়ার আগে নামের পাশে আছে ২২৪ ম্যাচে ৪৪ গোল। তার প্রতি এখানকার মানুষের ভালোবাসাও অসীম। অনেকে তাকে অনুসরণ করেই গায়ে জড়াতে চান ভারতের জার্সি।
জওহর লাল নেহেরু স্টেডিয়ামের মূল ভেন্যুর পাশে আছে তিনটি গ্রাউন্ড। একটি ক্রিকেটের অন্য দুটি ফুটবলের। ফুটবলের একটি গ্রাউন্ডে আজ (শনিবার) স্থানীয় পর্যায়ের একটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় দুপুর একটার পর থেকে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে সেই ম্যাচটি উপভোগ করতে ছাতামাথায় নিয়ে সাইড লাইনে বসে খেলা দেখেন মাঠে আসা প্রায় শতাধিক ফুটবলপ্রেমি।
এই তিন গ্রাউন্ড ছাড়াও আছে বড় একটি ঘাসের মাঠ, এছাড়াও বাচ্চাদের ফুটবল অনুশীলনের জন্য আছে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট টার্ফ। সেখানেই দেখা মেলে ক্ষুদে ফুটবলারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এক এক ভদ্রলোকের সঙ্গে। নাম অবিন্না। এসেছেন নাইজেরিয়া থেকে। বাংলাদেশ থেকে ফুটবল ম্যাচ কাভার করতে এসেছি বলতেই মুখের কথা টেনে বললেন, ও আই নো বাংলাদেশ। এরপর বাংলাদেশে ২০১৭ সালে ঘুরতে এসেছিলেন এবং বাংলাদেশের লিগে তাদের দেশে অনেক ফুটবলার আছে বলেও জানান অবিন্না।
নাইজেরিয়া থেকে ভারতে শিলং আসেন খুব ছোট বয়সে। প্রায় ২০ বছর ধরে আছেন ভারতে, এখানকার ক্ষুদে ফুটবলারদের ফুটবল শেখান বর্তমানে ৩২ বছর বয়সি অবিন্না। তার কাছেই জানতে চাই শিলংয়ে ক্রিকেট না ফুটবল জোয়ার বেশি? উত্তরে কিছুটা মুচকি হেসে বললেন, এখানে ক্রিকেট বা অন্য কোনো খেলা নিয়ে কারও আগ্রহ নেই। তবে ফুটবল নিয়ে পাগলামি অন্য পর্যায়ের।
সুমিত দাসের কথাই ধরা যাক, ভদ্রলোক পেশায় একজন সেলসম্যান। ওষুদের কোম্পানিতে কাজ করার ফাকেই সময় পেলে যান ফুটবল ম্যাচ উপভোগ করতে। পোলো গ্রাউন্ডেই হয় আইসিএলের ম্যাচ। লিগের খেলা এই শহরে পড়লেই সন্ধায় মাঠে উপস্থিত হয়ে যান সুমিত। আর ক্রিকেট? ভদ্রলোক নিজের দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা আইপিএল নিয়েই রাখেন ধারণা। আজ থেকে আইপিএল শুরু জানেন? না, সুমিতের উত্তর।
বিশ্ব আসরে ক্রিকেটের ভিন্ন ফরম্যাটে একাধিক শিরোপা জেতা দেশে সুমিতেই এই উত্তরই বলে দেয়, শিলং ক্রিকেট না, ফুটবলের শহর।