ভিনিসিয়ুসের শেষ মুহূর্তের গোলে ব্রাজিলের নাটকীয় জয়

নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে খেলা চলছিল অতিরিক্ত সময়ে। এ পর্যন্ত দুই দলের স্কোর ছিল ১-১-এ সমতা। তাতে ব্রাজিলের ষষ্ঠ স্থানে নেমে যাওয়া ছিল স্রেফ কয়েক মিনিটের ব্যাপার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়নি সেলেসাও সমর্থকদের। দলের বিপদের মুহূর্তে ত্রাতা হয়ে হাজির হলেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। সঙ্গে ভাগ‍্যেরও একটু ছোঁয়া পেলেন রিয়াল মাদ্রিদের এ তারকা ফরোয়ার্ড। তাতেই কলম্বিয়াকে হারিয়ে পূর্ণ ৩ পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছেড়েছে দরিভাল জুনিয়রের দল।

২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে নভেম্বরে দুই দলের প্রথম দেখায় কলম্বিয়ার মাঠে ২-১ গোলের ব্যবধানে হেরেছিল ব্রাজিল। ঘরের মাঠে ফিরতি দেখায় বাংলাদেশ সময় শনিবার সকালে একই ব‍্যবধানে জিতে মধুর প্রতিশোধ নিয়েছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। স্পট কিকে ম্যাচের শুরুতেই সেলেসাওদের এগিয়ে দেন ফরোয়ার্ড রাফিনিয়া। বিরতির আগেই অবশ্য কলম্বিয়াকে সমতায় ফেরান লুইস দিয়াজ। দ্বিতীয়ার্ধে বেশ নাটকীয়তার পরে অন্তিম সময়ে জয়ের ব‍্যবধান গড়ে দেন ভিনিসিয়ুস।

এ জয়ে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ২৬ মার্চের সুপার ক্লাসিকোর আগে প্রস্তুতিটা বেশ ভালোভাবেই সেরে রাখল সেলেসাওরা। ১৩ ম্যাচে ৬ জয়, ৩ ড্র ও ৪ হারে ২১ পয়েন্ট নিয়ে লাতিন অঞ্চলের পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে হলুদ শিবির। সমান ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে কলম্বিয়া নেমে গেছে ৬-এ। ১২ ম্যাচে ৮ জয়, ১ ড্র ও ৩ হারে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে আর্জেন্টিনা। সমান ম‍্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে ৩-এ নেমে গেছে উরুগুয়ে। চিলিকে ১৩ ম‍্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে গোলপার্থক‍্যে পিছিয়ে ৪-এ প্যারাগুয়ে।

বিআরবি গারিঞ্চা স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতেই লিড নেয় নেইমারবিহীন ব্রাজিল। ডি-বক্সের ভেতর ভিনিসিয়ুসকে কলম্বিয়ার দানিয়েল মুনিয়োস ফাউল করায় পেনাল্টির সংকেত দেন রেফারি। ষষ্ঠ মিনিটে স্পট কিক থেকে গোল করে দলকে লিড এনে দেন কাতালানদের হয়ে মৌসুমজুড়েই অবিশ্বাস্য ফর্মে থাকা রাফিনহা। সেই লিড অবশ্য ধরে রাখতে পারেনি ব্রাজিল। ৪১ মিনিটে লুইস দিয়াজের গোলে ম্যাচে সমতা আনে কলম্বিয়া। হামেস রদ্রিগেজের অ্যাসিস্টে গোল করে কলম্বিয়াকে স্বস্তি এনে দেন লিভারপুলের এ ফরোয়ার্ড।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ব্রাজিলকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ পান ভিনিসিয়ুস। ৪৭তম মিনিটে রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ডের আড়াআড়ি শট ঝাঁপিয়ে ব‍্যর্থ করে দেন কামিলো ভার্গাস। ৬৩তম মিনিটে রদ্রিগেজের ফ্রি কিকে দাভিনসন সানচেসের শট বেশ ওপরে উঠে গেলে ফিস্ট করেন আলিসন বেকার। সেটাতে খুব একটা জোর না থাকায় যায়নি বেশি দূর, স্বাগতিকদের একজনের পায়ে লেগে জড়ায় জালে। তবে ফিস্ট করার সময় হেফারসন লের্মা ব্রাজিল গোলরক্ষককে ফাউল করায় মেলেনি গোল।

দুই মিনিট পর দারুণ সুযোগ নষ্ট করেন রাফিনিয়াও। ভিনিসিয়ুসের কাটব‍্যাকে বিপজ্জনক জায়গায় বল পেয়েও শট লক্ষে রাখতে পারেননি বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড। ৭১তম মিনিটে মাথায় সংঘর্ষে চোট পান আলিসন ও সানচেস। কিছুটা সময় শুয়ে থাকেন দুজনই। পরে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়েন কলম্বিয়ান ডিফেন্ডার। চালিয়ে যেতে পারেননি আলিসনও, হেঁটে মাঠ ছাড়া ব্রাজিল গোলরক্ষকের জায়গায় নামেন বেন্তো। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে এরপর দারুণ জমে ওঠে লড়াই। ৮৪তম মিনিটে অনেক ওপর দিয়ে মেরে দলকে হতাশ করেন জোয়েলিন্তন।

ম্যাচ তখন এগিয়ে যাচ্ছিল ড্রয়ের দিকে। রেফারি নির্ধারিত সময় শেষে যোগ করেন আরও ১০ মিনিট। অতিরিক্ত সময়ের অষ্টম মিনিটে দূরের পোস্টে হেড করতে গিয়ে পোস্টে লেগে চোট পান ব্রাজিল ডিফেন্ডার গিয়ের্মে আরানা। হেডও লক্ষে রাখতে পারেননি তিনি। আর শেষ বাঁশি বাজার এক মিনিট আগে বক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক শটে বলে জাল জড়ান রিয়াল মাদ্রিদ তারকা ভিনি। ঝাঁপিয়েও নাগাল পাননি কলম্বিয়ান গোলরক্ষক ভার্গাস। তবে ভাগ‍্যেরও বেশ সহায়তা ছিল এ গোলে। মাঝপথে সফরকারীদের একজন হেড করে দিক পাল্টে না দিলে হয়তো নাগালেই পেতেন তিনি।