ফুটবলে জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার বাফুফের নতুন পার্টনারের

ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের ক্লাব শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলা বাংলাদেশী ফুটবলার হামজা দেওয়ান চৌধুরী দেশে আসছেন আগামীকাল সোমবার। এ মাসের ২৫ তারিখ শিলংয়ের জওহর লাল নেহেরু স্টেডিয়ামে গড়াবে ভারতের বিপক্ষে এএফসি বাছাইপর্বের ম্যাচ। দুটি ইস্যুতে যখন দেশের ফুটবল আলোচনায়, তখনই বড় সুসংবাদ পেল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। পাঁচ বছরের জন্য ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংক পিএলসিকে (ইউসিবি) জাতীয় পুরুষ দলের স্পন্সর হিসেবে পেল ফেডারেশন। এক যুগেরও বেশি সময় বাংলাদেশ ফুটবলে কোনো স্পন্সর ছিল না; বাফুফের বর্তমান সভাপতি তাবিথ আউয়ালের নতুন কমিটির মেয়াদ চার মাস পেরুতেই জাতীয় দলের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ইউসিবিকে পেল বাফুফে।

আজ রবিবার গুলশানে ইউসিবি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে চুক্তি সাক্ষর করে দুই পক্ষ। এসময় বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল ছাড়াও ফেডারেশনের বেশ কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। চুক্তি সাক্ষরে ইউসিবির পক্ষে ছিলেন চেয়ারম্যান শরীফ জহির। নতুন এই চুক্তি সাক্ষর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের ফুটবলে আরও সাফল্য ও জনপ্রিয়তার ধারায় ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করছেন দুটি পক্ষ। এক পৃষ্ঠার ছাপানো প্রেস রিলিজে বাফুফে চেয়ারম্যান তাবিথ আউয়াল বলেছেন, ‘ফুটবলের বিকাশে কর্পোরেট সহযোগিতা অপরিহার্য। ইউসিবির মতো প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা শুধু জাতীয় দলের উন্নয়নই নয়, বরং বাংলাদেশের ফুটবলকে বিশ্ব দরবারে আরও দৃঢ় অবস্থানে নিয়ে যাবে।’

এছাড়া বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল ইউসিবির সঙ্গে বাফুফের পথচলাকে স্পন্সর নয় পার্টনার হিসেবে দেখছেন, ‘ইউসিবি ও বাফুফে স্পন্সর নয়, একে অন্যের পার্টনার। আমরা একে অন্যের সহযোগী। সামনের দিনগুলোতে এক সঙ্গে আলোচনা করেই পথ চলব।’ জাতীয় পুরুষ দলের পেছনে বছরে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় হয় ফেডারেশনের। ইউসিবি জাতীয় দলের পৃষ্ঠপোষক হওয়ায় সংস্থাটির জন্য স্বস্তির হলেও চুক্তি সাক্ষরের পর সাংবাদিকদের টাকার অঙ্ক উল্লেখ করেননি বাফুফে সভাপতি, ‘অন্য চুক্তির মতোও আমরা এই চুক্তির আর্থিক বিষয় উল্লেখ করছি না। তবে অবশ্যই আমাদের ম্যাচ খেলা, ক্যাম্পÑ এসকল বিষয়ে তারা আর্থিক সহায়তা দেবে, পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিংও করবে।’

ইউসিবি ভালোভাবেই বাফুফেকে পৃষ্ঠপোষকতা করবে সেটা ধরেই নেওয়া যায়; তবে কিছু অতীত তিক্ত ইতিহাস সামনে আসছে। বাফুফে বিগত সময়ে অনেক পৃষ্ঠপোষক পেলেও দীর্ঘ মেয়াদে স্থায়ী হয়নি। ফেডারেশনের নতুন কমিটির জন্য এটি অবশ্যই চ্যালেঞ্জের, তারপরও আশাবাদী বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল, ‘ইউসিবি আমাদের পার্টনার হিসেবে র‍্যাংকিংয়ে উন্নতি চায় এবং খেলার মানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রত্যাশা করে। আমরা সেটা চেষ্টা করব। পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠান অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করার আগে সেই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বচ্ছতা দেখে। সম্প্রতি ফিফা বাফুফের ওপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে।’ ফিফা থেকে বাফুফের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বাফুফের জন্য স্বস্তির। সেই সঙ্গে নতুন করে স্পন্সর, কিট স্পন্সর পাওয়া, জানা গেছে ঈদের পর মেয়েদের জাতীয় ফুটবল দলকে পৃষ্ঠপোষক করতে এগিয়ে আসবে অন্য একটি প্রতিষ্ঠান। সবকিছু ‍মিলিয়ে দারুণ সময় পার করছে বাংলাদেশ ফুটবল। এখন এটা ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ কীভাবে উতরে যায় বাফুফে সেটিই দেখার বিষয়।

এদিকে, ইউসিবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান শরীফ জহির বলেছেন, ‘বাংলাদেশর ফুটবলের গৌরবময় এতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আমরা গর্বিত। ইউসিবি জাতীয় দলের সাফল্যে ভূমিকা রাখতে প্রুতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ফুটবলকে আরও জনপ্রিয় করতে কাজ করে যাবে।’ বাফুফের সঙ্গে এর আগেও কাজ করেছে এই ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানটি। এবার পাঁচ বছরের বড় চুক্তিতে যাওয়ার পেছনে ইউসিবির চেয়ারম্যান শরীফ জহির বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার জন্মলগ্ন থেকে ইউসিবি খেলাধুলাকে মূল্যায়ন করে আসছে। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল; বাংলাদেশেও জনপ্রিয় হওয়ার সকল উপাদান রয়েছে। আমরা মনে করেছি এখনই বাংলাদেশের ফুটবলে সহায়তা করার উপযুক্ত সময়। তাই বাফুফে সভাপতির আহ্বান পাওয়া মাত্রই সাড়া দিয়েছি। যাতে ফুটবল সেই হারানো গৌরব ফিরে পায় এবং ফিফা র‌্যাংকিংয়ে উন্নতি করে।’