প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৫ ২২:২৬ পিএম
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৫ ২৩:৩৯ পিএম
ভয় ছিল ভারতের। তবে ‘রবিবারের ফাইনালে হারার’ সেই শাপ কাজ করেনি। উল্টো ভারত মেরেছে এক ঢিলে দুই পাখি। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে রোহিত শর্মারা গড়েছেন ইতিহাস। একই সঙ্গে নিউজিল্যান্ডকে দিয়েছেন ২৫ বছর পুষে রাখা কষ্টের শোধ। শিরোপার মঞ্চে প্রাথমিক কাজ সেরে রাখে স্পিনাররা। বাকিটা সিদ্ধহস্তে সামলে নেন রোহিত ব্রিগেড। তাতেই ঘরে আসে নবম আসরের ট্রফি। মিনি বিশ্বকাপ খ্যাত আসরটিতে ভারতই এখন সর্বোচ্চ শিরোপাধারী দল।
আজ রবিবার দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারি ছিল দর্শকে ঠাসা। ভারতকে সমর্থন করতে আসা সমর্থকদের হতাশ করেননি রোহিতরা। চার স্পিনারের ঘূর্ণিতে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৫১ রান আনে নিউজিল্যান্ড। জবাবে অধিনায়ক রোহিতের তাণ্ডব এবং দায়িত্বশীল মিডলের ব্যাটে ৬ বল ও ৪ উইকেট থাকতেই লক্ষ্য ছোঁয় ভারত। নিশ্চিত করে আইসিসি টুর্নামেন্টের আরেকটি শিরোপা।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সর্বোচ্চ পাঁচবার শিরোপার মঞ্চে লড়েছে ভারত। এর মাঝে দুবার হয়েছে স্বপ্নভঙ্গ। ২০১৯ সালে পাকিস্তানের কাছে হারার আগে ২০০০ সালে ভারত ট্রফি খুঁইয়েছিল নিউজিল্যান্ডের কাছে। এবার ভুল করেনি। ২০০২ (শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে) ও ২০১৩ সালের পর আবারও ঘরে তুলেছে ট্রফি। ভারতের এ নিয়ে তিনটি ট্রফি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দুটি ট্রফি আছে অস্ট্রেলিয়ার।
আট জাতির আসরটির আয়োজক মূলত পাকিস্তান। তবে হাইব্রিড মডেলে ভারত খেলেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। বাকি দলগুলো যখন লাহোর-করাচি-দুবাইয়ের বিমান ধরেছে, তখন দুবাইয়ে নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছে ভারত। তা নিয়ে কত না সমালোচনা। তবে আলোচনা-সমালোচনার টুর্নামেন্টে রোহিতরা পথ হারাননি। নিরপেক্ষ ভেন্যু থেকেই জিতে ফিরছে শিরোপা।
এদিন টসভাগ্য রোহিতের পক্ষে আসেনি। ভালো শুরুও পেয়েছিল নিউজিল্যান্ড। ফাইনালে উদ্বোধনী উইকেটে ৫৭ রান তুলেছিলেন দুই ওপেনার। ২৩ বলে ১৫ রান করে ইয়াং ফেরেন। এরপর ৬ রানের ব্যবধানে দুই ব্যাটিং স্তম্ভ রবিন্দ্রা ও উইলিয়ামসনও সাজঘরে ফেরত যান। ৭৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে নিউজিল্যান্ড। রবিন্দ্রা থামেন ৩৭ রান করে। উইলিয়ামসন করেন মাত্র ১১ রান। চতুর্থ উইকেটে ম্যাচ ধরার চেষ্টা করেন টম লাথাম ও ড্যারিল মিচেল। দেখেশুনে তাদের ধীরগতির ৩৩ রানের জুটি ভাঙে লাথাম ফেরায়। ১৪ রান করে স্পিনার জাদেজার বলে এলবিডব্লিউ হন। পঞ্চম উইকেটে গ্লেন ফিলিপসকে নিয়ে ৫৭ রানের জুটি করেন মিচেল। ফিলিপসকে (৩৪) আউট করে এ জুটিও ভাঙেন বরুণ। ষষ্ঠ উইকেটে মাইকেল ব্রাসওয়েলকে নিয়ে ৪৬ রানের আরও একটি জুটি করেন মিচেল। এরপর থেমে যায় মিচেলের লড়াকু ১০১ বলে ৬৩ রানের ইনিংসটিও। মোহাম্মদ শামির বলে রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ হন মিচেল। শেষ দিকে নিউজিল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে কিছু রান জমা হয় ব্রাসওয়েলের হার না মানা ফিফটিতে। ৩ চার ২ ছক্কায় ৪০ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন। তবে কিউইরা আড়াইশ রানের বেশি যেতে পারে না।
এদিন দুবাই দেখেছিল স্পিন ঝলক। ভারত শুরুটা করে উইল ইয়ংকে ফিরিয়ে। পরে চার স্পিনার ভাগাভাগি করে নেন পাঁচ উইকেট। কিউইদের একটি উইকেট নেন পেসার শামি। মিচেল স্যান্টনার পড়েন রান আউটের ফাঁদে। রোহিত-গিল-শামিদের হাত ফসকানোর দিনে দুটি করে উইকেট নেন বরুণ ও কুলদীপ। একটি করে শিকার জাদেজা ও অক্ষরের। ভারতের হয়ে ৪ স্পিনার করেন ৩৮ ওভার। কুলদীপ-জাদেজারা খরচ করেন মোটে ১৪১ রান। দুই পেসার শামি ৯ ওভার করেন। হার্দিক তিন ওভারে খরচ করেন ৩০ রান।
মাঝারি লক্ষ্যে শুরুতেই তাণ্ডব চালান রোহিত। চার-ছক্কায় ধুন্ধোমার ব্যাটিং গড়ে লক্ষ্যও কাছে নিয়ে আসেন। তবে নাটক তখনও বাকি। বিনা উইকেটে শতরান পেরোনো ভারত ১৭ রানের মাঝে হারায় তিন টপ অর্ডার। তাতেই পড়ে চাপে। সেই চাপ খানিকক্ষণ পর পর বাড়ে। পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচে রোহিত আনেন ৮৩ বলে ৭৭ রান। আরেক ওপেনার শুভমান গিল খেলেন ৩১ রানের ইনিংস। কোহলি এদিন ফেরেন চরম ব্যর্থ হয়ে। টপের ধাক্কা সামাল দেয় মিডল। সেখানেও জাগে শঙ্কা। ১৮৩ রানের মাথায় শ্রেয়াশ আইয়ার ফেরেন ৪৮ রান করে। এরপর পথ দেখানো অক্ষর প্যাটেল ২৯ রান করে ফেরেন। তাতেই জমে ওঠে শিরোপার লড়াই। তবে কেএল রাহুলের ৩৩ বলে ৩৪ রান ও জাদেজার ৯ রানে রোমাঞ্চ চড়ানো ম্যাচে সমস্যা বাড়েনি ভারতের।
২০০০ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারত হেরেছিল রবিবারে। এরপর ২০০৩ সালে বিশ্বকাপ ফাইনাল, ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনাল এবং ২০২৩ বিশ্বকাপ ফাইনালও বসেছিল রবিবার। হেরেছিলও ভারত। অপয়া দিনে এবার ভুল করেনি রোহিত ব্রিগেড।