মরূদ্যানে শিরোপা ফয়সালার লড়াই
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৫ ১১:২৮ এএম
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৫ ১১:২৯ এএম
সংগৃহীত ছবি
অপয়া রবিবারে বসেছে শিরোপার মঞ্চ। রোহিত শর্মাদের ভয় শুধু এখানেই। সপ্তাহের এই দিনটিতে ফাইনাল বসলে শিরোপা খোয়ায় ভারত। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মিশনও থামবে আজ। শাপমুক্ত হলেই কেল্লাফতে। দুবাইয়ের স্লো এবং লো পিচে ভারতীয় স্পিনারদের তাণ্ডব আর ব্যাটিংয়ে ঝলক— সব মিলিয়ে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে নিউজিল্যান্ডের। তবে দাপুটে টপ অর্ডার, স্পিনের ঝলক আর পেসের তোপে ব্ল্যাক ক্যাপসরাও নাছোড়বান্দা। দলের অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনারের কণ্ঠে তাই অনেকটা এমন প্রত্যয়, ‘এতদূর এসেছি, সহজে ছেড়ে দেব না।’
কিউইরা বরাবরই মিষ্টভাষী। প্রতিপক্ষের স্তুতি গেয়ে মাঠে নামেন। সমীহ করেন কিন্তু বাইশ গজে নামতেই বদলে যান। বোলিং আর ব্যাটিং তো আছেই, ফিল্ডিংয়েও রাঙান চোখ। মোদ্দাকথা কিউইরা দল হিসেবে লড়েন। নাকানিচুবানি খাওয়ান। জয়টাও শেষে তাদের পক্ষেই আসে। শিরোপা ফয়সালার মঞ্চে আজ কেউ কাউকেই ছেড়ে কথা বলবে না। ভারতের দুর্দান্ত সব স্পিনের বিপক্ষেই লড়াই চলবে টিম নিউজিল্যান্ডের।
কিউইদের বড় শক্তিও সেখানে। দল হিসেবে তারা নিজেদের দিনে যেকোনো কঠিন প্রতিপক্ষকেও পরাস্ত করে দিতে পারে। তার প্রমাণও ভূরি ভূরি। এবারের আসরেই স্যান্টনার ব্রিগেড সেমিফাইনালে হটিয়ে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। দুর্বার প্রোটিয়াদের হটানোর আগে তারা নাকানিচুবানি খাইয়েছে স্বাগতিক পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে। ভারত এখনও অপরাজিত। টুর্নামেন্টের শুরুতে বাংলাদেশ, পাকিস্তানকে হারানোর পর কিউইদেরও মাটিতে নামিয়েছিল। ফাইনাল নিশ্চিতের লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়াকে তুলোধুনো করেছেন রোহিতরা। এবার ফাইনালের মহারণ।
গ্রুপ পর্বে ভারতের কাছে হারলেও ফাইনালে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ভালো ক্রিকেট খেলেছি। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। আমাদের লক্ষ্য শিরোপা জেতা। ভারতকে হারাতে হলে তাদের চেয়েও ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে।’
ভারতের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ড বরাবরই একটু পিছিয়ে থাকে। ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত দুদলের ১১৯ বারের দেখায় ৬১ বারই হেরেছে কিউইরা। বাকি ৫০ বারে জিতেছে। তবে এই টিম ইন্ডিয়ার বিপক্ষেই সুখস্মৃতি আছে কিউইদের। ২০০০ সালে আইসিসির নক আউট টুর্নামেন্টে ভারতকে মাটিতে নামিয়ে শিরোপা জিতেছিল ক্রিস কেয়ার্নসদের দল। এরপর থেকেই শিরোপা খরা। মাঝে একবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে উঠলেও, অস্ট্রেলিয়ার কাছে খোয়াতে হয় শিরোপা।
সবশেষ কয়েক বছরে আইসিসির বিভিন্ন ছয়টি টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছিল নিউজিল্যান্ড। জিতেছে মোটে একটিতে। এবার সেই খরা কাটাতে চায় স্যান্টনার ব্রিগেড, ‘আমরা ২৫ বছর চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা জিততে পারিনি। এবার ট্রফি জয়ের সেরা সুযোগ আমাদের সামনে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। দলের সবাই শিরোপার জন্য মুখিয়ে আছে। আশা করি, সাফল্য নিয়েই মাঠ ছাড়তে পারব।’
তবে শিরোপার মিশনে কাউকে ছাড় দিতে চান না রোহিত ব্রিগেড, ‘আমাদের সামনে আরও একটি ফাইনাল। টানা তিন বছর আইসিসির তিনটি ফাইনাল খেলছি। ওয়ানডে বিশ্বকাপে ব্যর্থ হলেও টি-টোয়েন্টির শিরোপা জিতেছি। এবার লক্ষ্য চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা। গত আসরে আমরা শিরোপা জিততে পারিনি। শিরোপা পুনরুদ্ধার করাই মূল লক্ষ্য।’
রবিবার বলেই হয়তো খানিকটা বেশি ভয় ভারতের। এই বারটি দলটির জন্য অপয়া। ২০০০ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হেরেছিল এদিনে, এরপর ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল, ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনাল এবং ২০২৩ বিশ্বকাপ ফাইনালও বসেছিল রবিবার। হেরেছিলও ভারত। এবারও সেই শঙ্কা। তবে ফাইনালে টিম হিসেবে খেলা নিউজিল্যান্ডকে বড় প্রতিপক্ষ মানছেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত, ‘এবারের আসরে দারুণ পারফরমেন্স করেছে নিউজিল্যান্ড। গ্রুপ পর্ব ও সেমিফাইনালে ভালো খেলেছে তারা। বিশেষভাবে সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে লড়াই করার সুযোগই দেয়নি নিউজিল্যান্ড। ফাইনালে কিউইদের সমীহ করতে হবে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে।’
আইসিসির ট্রফি বসলেই ভারতের অঘোষিতভাবে যেন ফাইনালের একটি স্লট বরাদ্দ থাকে। এবারও তেমন। দুবাইয়ের পিচ মাথায় রেখে ভারত আজও তিন স্পেশালিস্ট স্পিনার নিয়ে খেলতে পারেন। দুর্দান্ত ফর্মে আছেন স্পিন অলরাউন্ডার অক্ষর প্যাটেল। মিতব্যয়ী বোলিং করছেন রবিন্দ্র জাদেজা। কূলদীপ যাদব কিংবা বরুণ চক্রবর্তীও হচ্ছেন ম্যাচ উইনার। এরা সবাই প্রয়োজনে ব্যাটটাও ধরতে জানেন। ভারতের শক্তিই এখানে। তবুও মাঠের বিবেচনায় ভারত থাকবে ফাইনালে এগিয়ে।
তাদের স্পিন ও পেসের বিরুদ্ধে লড়ে কিউইদের দাঁড় করাতে হবে বড় স্কোর। পরে লড়তে হবে বিরাট কোহলি, রোহিত ও শুভমান গিলদের লম্বা ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে। তার ওপরে বেন সিয়ার্স, লকি ফার্গুসনের পর ম্যাট হেনরিকে হারিয়ে বসতে যাচ্ছে নিউজিল্যান্ড। ভারতের ত্রাস হয়ে থাকা হেনরি শেষ পর্যন্ত চোটে পড়ে ছিটকে গেলে, ভারতের পক্ষেই ভালো হবে।
এবার অপেক্ষার পালা। কয়েক ঘণ্টা পরই বসবে শিরোপা ফয়সালার ম্যাচ। কিউইদের দলগত পারফর্ম নাকি ভারতের দুর্দান্ত ফর্ম— কারা হাসে শেষ হাসি, তা জানতেও কমে আসছে অপেক্ষা।