প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৫ ২০:৪৭ পিএম
ইংলিশ অধিনায়ক হিসেবে শেষবার নেমেছিলেন জশ বাটলার। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বেশিদূর যেতে পারেননি। ট্রফির মিশনেও সূচনাতেই বিদায় নিয়েছে ইংল্যান্ড— ছবি: সংগৃহীত
করাচিতে ব্যাটিং, বোলিং না ফিল্ডিং—কোনো বিভাগেই লড়তে পারেনি ইংল্যান্ড। জশ বাটলারদের দুঃস্মৃতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ইংলিশ বধে আফগানিস্তানের বিদায়ও নিশ্চিত করেছে প্রোটিয়ারা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বসেছে বি গ্রুপের টেবিলের শীর্ষে। এই গ্রুপ থেকে বিদায় নিয়েছে আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ড। প্রোটিয়াদের সঙ্গী হয়েছে স্টিভ স্মিথের অস্ট্রেলিয়া। এবার ফাইনালে ওঠার প্রতিপক্ষ পাওয়ার অপেক্ষা।
ট্রফির মিশনে টিকে থাকতে আফগানদের পক্ষে
আসতে হতো অসম্ভব কিছু সমীকরণ। সেটাও অন্যদের হাতে। হাসমতউল্লাহ শহিদীদের তাকিয়ে থাকতে
হচ্ছিল ইংল্যান্ডের দিকে। কিন্তু ইংলিশরা দুইশর নিচে গুটিয়ে যাওয়ায় বিদায় ঘণ্টা বেজে
যায় আফগানদের। ম্যাচের মাঝপথে সেমি নিশ্চিত হওয়া প্রোটিয়ারা পরে ইংলিশদের দেয় টানা
তিন হারের স্বাদ। জেতে ৭ উইকেটের ব্যবধানে।
ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে রবিবার শুরুতে
প্রোটিয়া পেসতোপে পড়ে ইংল্যান্ড। আসা-যাওয়ার মাঝে থাকা ইংলিশরা টেনেটুনে পার করে দেড়শ
রান। প্রথম ওভারে উইকেট হারানো বাটলার ব্রিগেড থামে চল্লিশ ওভারের আগেই। ৩৮.২ ওভারে
সব উইকেট হারিয়ে ১৭৯ রান আনে ইংলিশরা। যা পেরোতে ২৯.১ ওভার খরচ করে প্রোটিয়ারা। বি
গ্রুপে এরআগে দক্ষিণ আফ্রিকা হারায় আফগানিস্তানকে, পয়েন্ট ভাগাভাগি করে অস্ট্রেলিয়ার
সঙ্গে।
তিন ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে এই গ্রুপ
থেকে আগেই শেষ চার নিশ্চিত করেছিল অস্ট্রেলিয়া। গতকাল ম্যাচের আগ অবধি আফগানিস্তান
ও দক্ষিণ আফ্রিকা ছিল সেমির দৌড়ে। দুই দলেরই ছিল সমান ৩ পয়েন্ট করে। তবে নেট রান রেটে
আফগানদের (-০.৯৯০) চেয়ে অনেক ব্যবধানে এগিয়ে ছিল প্রোটিয়ারা। তবে অতশত হিসাবনিকাশেরও
দরকার পড়েনি। আফগানদের বিদায় করার পর ইংলিশদেরও স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে এইডেন মার্করামের
দল। এই মুহূর্তে ৫ পয়েন্ট নিয়ে মার্করামরা আছে শীর্ষে। ৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে থেকে শেষ
চার নিশ্চিত করেছে অস্ট্রেলিয়া।
আগে ব্যাট করা ইংল্যান্ড স্কোরবোর্ডে
৩০০ রান তুলে যদি অন্তত ২০৭ রানের ব্যবধানে জিততে পারত, তাহলেই কেবল রান রেটে দক্ষিণ
আফ্রিকাকে টপকে যেতে পারত আফগানিস্তান। সেটি তো হয়নি, উল্টো ব্যাটিং ব্যর্থতায় পড়ে
ইংলিশরা। দেড়শ পেরোতেই ধুঁকতে থাকে। এদিন প্রোটিয়াদের হয়ে তোপ দাগেন মার্কো জানসেন।
৩৯ রান খরচায় প্রোটিয়া পেসার ফেরান ইংলিশদের তিন টপ অর্ডারকে। শুরুতেই ধস নামানো জানসেনের
প্রথম ওভারেই ফেরেন ফিল সল্ট (৮)। ওই স্পেলের পরের ওভারে জেমি স্মিথকে রানের খাতাই
খুলতে দেননি জানসেন। আরেক ওপেনার বেন ডাকেটকে স্রেফ বোকা বানিয়ে নিয়েছেন তার ফিরতি
ক্যাচ। ইনিংসের শুরুতে ধুঁকতে থাকা ইংলিশদের ডাকেট দেখাচ্ছিলেন পথ। তাকে ২৪ রানে ফিরিয়ে
লড়াইয়ে তেজ কমিয়ে দেন। এরপর দৃশ্যপটে আসেন ওয়াইন মুল্ডার, লুঙ্গি এনডিগি ও কাগিসো
রাবাদা। তিন পেসার নেন আরও পাঁচ উইকেট। কেশব মহারাজ মাঝে ফেরান হ্যারি ব্রুক ও লিয়াম
লিভিংস্টোনকে। তাতেই মুখ থুবড়ে পরে ইংলিশরা।
প্রোটিয়া পেসের বিপক্ষে লড়ে দলের হয়ে
সর্বোচ্চ ৩৭ রান করেন জো রুট। বিপদ হয়ে ওঠা রুটকে ক্লিন বোল্ড করে ফেরান মুল্ডার। স্কোরবোর্ডে
৯ রান আসতে প্রথম উইকেট হারানো ইংলিশরা ৩৭ রানে হারিয়ে বসে তিন উইকেট। একটু বিরতির
পর শুরু হয় আবার উইকেটের পতন। ৯৯ রানের মাথায় ব্রুক ১৯ রানে ফিরলে আবারও চোখেমুখে সর্ষে
ফুল দেখে ইংলিশরা। শেষদিকে পেসার জোফরা আর্চারের বদৈালতে দেড়শ পেরিয়ে সামনে এগোয় ইংল্যান্ড।
অধিনায়ক হিসেবে বিদায় বলে দেওয়া বাটলার এদিনও পারেননি। দলকে যেমন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে
ট্রফির মিশনে রাখতে পারেননি, তেমনি কালও বিপদ বাড়িয়ে ফিরেছেন। নেতা হিসেবে শেষ ওয়ানডে
ম্যাচে করেছেন ২১ রান। দলের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান আসে আর্চারের ব্যাটে। তিনিই ইংলিশদের
পুঁজি বাড়িয়ে দেন ১৭৯ রান।
ছোট সেই পুঁজি ধুন্দুমার ব্যাটিংয়ে
পেরিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। অবশ্য প্রোটিয়াদের শুরুটাও ভালো হয়নি। ত্রিস্টান স্টাবসকে
শূন্যরানেই ফেরান আর্চার। এরপর রায়ান রিকেলটনকে ফেরান ২৭ রানে। এখানেই থেমে থাকে ইংলিশ
বোলারদের সাফল্য। পরে বাটলারের ব্যবহার করা পাঁচ বোলারকে চার-ছক্কায় ওড়ান রাশি ফন দার
দুসেন ও ক্লাসেন। ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফেরা ক্লাসেন খেলেন ক্লাসিক ইনিংস। দলকে যদিও জিতিয়ে
ফিরতে পারেননি। তবে প্রত্যাবর্তনের দিনে খেলেন ৬৪ রানের দাপুটে ইনিংস। ৫৬ বলের ইনিংস
সাজান ১১ চারের মারে। ইংলিশদের দুঃখ বাড়িয়ে থামেন রাশ ফন ডার দুসেন। প্রোটিয়াদের গ্রুপসেরা
বানিয়ে ৭২ রান করে থামেন দুসেন। দুই ফিফটিতে পর্যদুস্ত হওয়ার আগে ১২৭ রানের জুটিতে
পাত্তায় পায়নি ইংলিশরা। নিয়মরক্ষার ম্যাচে হারটাও এসেছে বেশ বড়সড়।