প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:৪১ পিএম
লড়াইয়ের বার্তা শুনিয়ে রেখেছিলেন হাসমতউল্লাহ শহিদি। টস জিতে তাই কালক্ষেপন করলেন না। অস্ট্রেলিয়াকে জানিয়ে দিলেন ব্যাটিং নেবেন। মুম্বাইয়ের সেদিনের স্মৃতিকেও যেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক সামনে রাখলেন। তবে ব্যাটিংয়ে তেমন লড়তে পারলেন না। শুরু থেকে ধুঁকতে ধুঁকতে এগোল। তবুও দুই ফিফটিতে আড়াইশ পেরিয়ে অনেকটা এগিয়ে থামে এশিয়ার দেশটি।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে গতকাল বসেছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে টিকে থাকার লড়াই। সেমিফাইনালের স্বপ্ন দেখা আফগানরা দূরে মাত্র একটি জয়ের। সেই জয় পেতে অস্ট্রেলিয়াকে হারাতেই হবে। পুঁজি ২৭৩ রানের। অজিদের লম্বা ব্যাটিং লাইন আপ এবং লাহোরের রানপ্রসবা পিচ শঙ্কা জাগাচ্ছে। তবে ব্যাটাররা যা করার করে দিয়েছেন। এবার গুলবাদিন নাইব-রশিদ খানদের বোলিং খেল দেখানোর পালা।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আফগানদের বিপক্ষে দারুণ শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। ১ উইকেট হারিয়ে ৭ ওভারেই তুলে ফেলে ৬৭ রান। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ট্রফির মিশন শুরু করা স্টিভ স্মিথের দলেরও চাওয়া স্রেফ জয়। জশ বাটলারদের বিদায় করা আফগানদেরও অভিন্ন চাওয়া।
এদিন ব্যাটিংয়ে বাকিদের ব্যর্থতায় শুরুতে হাল ধরেছিলেন সেদিকউল্লাহ আতাল। শেষদিকে বিপর্যয় সামলে নৈপুণ্য দেখান আজমউল্লাহ ওমরজাই। দুই ব্যাটারের কল্যাণে সেমিফাইনাল নিশ্চিতের লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়াকু পুঁজি পায় আফগানিস্তান। বাঁচা-মরার ম্যাচে আফগানদের হয়ে ওপেনিংয়ে আবারও ব্যর্থ হন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি করে আশা জাগানো গুরবাজ ফেরেন এদিন কোনো রান না করেই। এ নিয়ে তিন ম্যাচে তিনি যথাক্রমে ১০, ৬ ও শূন্যরানে ফিরলেন। তার বিদায়ে ৩ রানেই ভাঙে ওপেনিং জুটি।
৩ রানে ১ উইকেট হারানোর পর জুটি গড়েন সেদিকুল্লাহ আতাল ও ইব্রাহিম জাদরান। তাদের ব্যাটে ভর করে ঘুরে দাঁড়ায় আফগানরা। ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠতে থাকে এই জুটি। দলীয় ৭০ রানে এই জুটিকে থামিয়ে অজিদের স্বস্তি এনে দেন অ্যাডাম জাম্পা। আগের ম্যাচে ১৭৭ রান করে রেকর্ড সৃষ্টি করা ইব্রাহিম জাদরান খেলেন ২২ রানের ইনিংস। তার বিদায়ে ভাঙে ৬৭ রানের জুটি।
ইব্রাহিম জাদরানের বিদায়ের পর ২১ বলে ১২ রান করে ফিরে যান রহমত শাহ। তার দ্রুত বিদায়ে ৯১ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে আফগাররা।
এরপরেই জুটি গড়ে দলকে টানেন অধিনায়ক শহীদি ও আতাল। একপ্রান্ত আগলে রেখে আতাল ফিফটি তুলে নেন ৬৪ বলে অর্ধশতক। অর্ধশতক তুলে নেওয়ার পর দেখেশুনে খেলে শতকের দিকে এগোতে থাকেন আতাল। তবে ৯৫ বলে ৮৫ রান করে স্পেন্সার জনসনের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যান। তার বিদায়ে ভাঙে আরেকটি ফিফটি রানের জুটি। আতালের বিদায়ের পর বেশি সময় ক্রিজে থাকতে পারেননি শহীদিও। ৪৯ বলে ২০ রান করে অ্যাডাম জাম্পার বলে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। তার বিদায়ে ১৭৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে আফগানরা।
দলের বিপদ আরও বাড়িয়ে দ্রুত সাজঘরে ফিরে যান মোহাম্মদ নবি ও গুলবাদিন নাইব। তাতেই দুইশ রানের আগেই ৭ উইকেট হারায় আফগানরা। তবে দলকে পরে অনেকটা পথ এগিয়ে দেন ওমরজাই ও রশিদ খান। তবে থিতু হয়েও ইনিংস বেশিদূর নিয়ে যেতে পারেননি রশিদ খান। ১৭ বলে ১৯ রান করেন। ২৩৫ রানে ৮ উইকেট হারানো দলকে বাকি পথ দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে টানেন ওমরজাই। আতালের পর তিনিও তুলে নেন অর্ধশতক। ফেরার আগে ৬৩ বলে ৬৭ রান করে করেন ওমরজাই। তার বিদায়ের পর নির্ধারিত ৫০ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২৭৩ রান সংগ্রহ আনে আফগানরা। অজিদের পক্ষে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন স্পেন্সার জনসন ও অ্যাডাম জাম্পা। ব্যাটারদের লড়াই আপাতত শেষ, এবার পালা আফগান বোলারদের।
অ্যাডাম জাম্পা আশাবাদী তারা দিনটি নিজেদের করবে। ইনিংস শেষে অজি স্পিনার বলেছেন, ‘এই লক্ষ্যে আমরা খুশি। তারা আগেও আমাদের বিপক্ষে দারুণ করেছিল। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রেসার বাড়িয়েছিল। কিন্তু এদিন আমাদের পক্ষেই থাকবে।’
লাহোরে দুর্দান্ত ছিলেন জাম্পা। ৪৮ রান খরচায় দুটি উইকেটও নিয়েছিলেন, ‘পিচ সত্যিই বদলেছে। পাওয়ার প্লের আগে কয়েকটি ওভার করেছিলাম। আমি তখন কিছু বাড়তি সিম পেয়েছিলাম। পরে বল পুরোনো হতেই সেটি স্কিড করা শুরু করেছিল।’ জাম্পার কথা মতো, দুর্দান্ত শুরু করা অস্ট্রেলিয়াকেও অবশ্য্ই ভুগতে হবে এই পিচে।