এম. এম. কায়সার
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ০৩:০৯ এএম
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ০৩:১৩ এএম
ম্যাজিশিয়ান!
নয়তো কী? এই ফুটবলার বলকে দিয়ে কথা বলাতে পারেন! বলও যেন তার কথা শোনে। বাঁ পায়ের জাদুতে আর্জেন্টিনাকে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছেন মেসি। শনিবার রাতে আর একবার জেতালেন। ম্যাচের ৩৫ মিনিটে ডি বক্সের ভেতর থেকে বাম পায়ে কোনাকুনি শট নিলেন। অস্ট্রেলিয়ার গোলকিপার রায়ান শুয়ে পড়ে চেষ্টা চালালেন। কিন্তু বল জালে (১-০)।
মেসির এই গোলেই আর্জেন্টিনা পেয়ে গেল বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের পথ। আর দ্বিতীয়ার্ধে অস্ট্রেলীয় গোলকিপার ম্যাথু রায়ানের ভুলে আলভারেজ ‘বোনাস গোল’ জানিয়ে দিল আর্জেন্টিনার এই দলে গোলস্কোরার আরও আছে। এই অর্ধে একটি গোল হজম করে আর্জেন্টিনা এও জানিয়ে দিলো কোয়ার্টার ফাইনালে দলের ডিফেন্স নিয়ে কাজ করার আরও অনেককিছু আছে।
ম্যাচের শেষভাগে এসে লাতোরো মার্তিনেজ সহজ গোল মিস করে এও জানিয়ে দিলেন এই আর্জেন্টিনায় গোল মিসের লোকও আছে!
২-০ গোলের লিড নিয়ে সহজ জয়ের পথেই ছিলো আর্জেন্টিনা। কিন্তু ৭৭ মিনিটের সময় গুডউইন প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে প্রচন্ড গতির শট নেন। নিশ্চিতভাবে বল পোস্টের অনেক বাইরে দিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু এনজো হার্নান্দেজের শরীরে লেগে বলের দিক বদলে যায় দ্রুত। সেটা এতই দ্রুত যে পোস্টে দাঁড়ানো আর্জেন্টাইন গোলকিপার মার্তিনেজ নড়ে ওঠার সুযোগও পেলেন না। আত্মঘাতী গোলে বল জালে (২-১)।
খেলার ধরনের বাইরে পাওয়া এই গোলের অস্ট্রেলিয়া আক্রমণের তেজ বাড়ায়। কিন্তু আর্জেন্টিনা ছিলো আরো বেশি তেজি। ম্যাচের শেষ মিনিটে অস্ট্রেলিয়ার বদলি খেলোয়াড় কুয়েলের শটে গোলরক্ষক মার্তিনেজ যে গোল বাঁচালেন সেজন্য পুরো আর্জেন্টিনা তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে।
২-১ গোলের জয়ী এই আর্জেন্টিনা শেষ আটে লড়বে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে, ৯ ডিসেম্বর।
কি করেননি মেসি এই ম্যাচে? বল পায়ে যা করার তার সবকিছুই করে দেখালেন ম্যাজিশিয়ান! সেন্টার স্পট থেকে বল পায়ে যে দৌঁড় দিলেন, তাতে আশপাশ জুড়ে থাকা অস্ট্রেলীয় মার্কার খসে পড়লো। কেউ তাকে আটকাতেই পারছে না। বল পায়ে এই একটানেই মেসি মনে করে দিলেন ’৮৬র ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই রান উইথ দ্য বলের ম্যারাডোনাকে!
বিশ্বকাপে মেসির গোল নিয়ে একটা সমালোচনা ছিলো, তার আগের সব গোলই কেবল গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচে। নকআউট ম্যাচে মেসির কোন গোল নেই। মেসি নকআউটে দলকে জেতাতে পারেন না। সেই জবাবও দিয়ে দিলেন ম্যাজিশিয়ান এই ম্যাচে। বিশ্বকাপে সবমিলিয়ে তার গোলসংখ্যা এখন ৯। আরেকটি গোল করলে স্বদেশি গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার বিশ্বকাপের ১০ গোলের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবেন মেসি।
৩৫ মিনিটের মেসির গোলের আগ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া যা খেলছিলো তাকে বলে ডিফেন্সের মোড়কে আচ্ছাদিত ফুটবল। গোল করবো না এবং গোল খাবোও না-এই দর্শন নিয়েই নকআউটে নেমেছিলো যেন অস্ট্রেলিয়া। খেলা যত দেরি পর্যন্ত নেওয়া যায়-সেই পরিকল্পনাই ছিলো তাদের। অবাক করার তথ্য হলো মেসির সেই গোলের আগ পর্যন্ত আর্জেন্টিনাও গোলের ক্লিয়ার কাট কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। বাম পায়ের যে শটে মেসি গোল করলেন সেটা ছিলো ম্যাচে তার প্রথম শট। অস্ট্রেলিয়ার গোলপোস্টে নিশানা। প্রথম সেই শটই অব্যর্থ.. গো..ও..ল!
এটি ছিলো মেসির ক্যারিয়ারের ১০০০তম ম্যাচ। আর আর্জেন্টিনার অধিনায়ক হিসেবে শততম ম্যাচ। মাইলস্টোনের ম্যাচে দারুণ গোলে দলকে তুলে আনলেন বিশ্বকাপের শেষ আটে। বিশ্বকাপ ট্রফি থেকে মেসির আর্জেন্টিনার এখন মাত্র তিন ম্যাচ দূরে। হাত বাড়িয়ে ট্রফিটা ডাকছে মেসিকে।