চ্যাম্পিয়নস ট্রফি
হেলাল নিরব
প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:১৪ পিএম
মিরপুরে নাজমুল হোসেন বড়মুখ করে বলেছিলেন, ‘চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতেই তবে ফিরব।’পাকিস্তান ‘এ’ দলের কাছে হারার পর বাংলাদেশের অধিনায়ক গর্জে উঠেছিলেন, ‘ঝড় আসছে।’ সেই ঝড়ের চিহ্নমাত্রও দেখা যায়নি। ভারতের কাছে নাস্তানাবুদ হয়েছিল শান্ত ব্রিগেড। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে উল্টো পথেই হাঁটে টাইগাররা। ট্রফির মিশনে মোটাদাগে ব্যর্থ টাইগাররা শুরু থেকেই শুনিয়েছেন, ‘পরের ম্যাচে ফিরব।’
সেই ফেরাটা আর হয়নি। প্রতিশ্রুতির মধ্যেই আটকে থেকেছে সব। কোচ থেকে অধিনায়ক হয়েও খেলোয়াড়-টিম টাইগার্সের সবাই ব্যর্থতার দায়ও নিয়েছেন। ভারতের কাছে হারের পর তাওহীদ হৃদয় একবাক্যে বলেছিলেন, ‘আমরা পারিনি। তবে কিউইদের বিপক্ষে সেরাটা দেব।’কোচ ফিল সিমন্সের সুরও ছিল একই। গতকাল কিউইদের কাছে পর্যুদস্ত হয়ে শান্তও বলেছেন, ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে আমরা ফিরব।’ এ যেন দায় নিয়ে দায়িত্ব শেষ করার চেষ্টা।
টাইগারদের দায়িত্বের নমুনা দেখা গেছে ব্যাটিংয়ে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ঘরে নিয়ে ফেরার স্বপ্ন ভেঙেছে চতুর্থ দিনেই। বাংলাদেশ গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচের একটি এখনও খেলেনি। তাতেই ধূলিসাৎ স্বপ্ন। পছন্দের ফরম্যাট ওয়ানডেতেও ধুঁকেছে বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে টপ অর্ডারের হতশ্রী দশা, কখনও ধুঁকেছে মিডল। কখনও রান পায়নি লোয়ার মিডল অর্ডার। পাকিস্তান ও দুবাইয়ের রানপ্রসবা উইকেটেও টাইগাররা থেমেছে আড়াইশ রানের নিচে। ছোট্ট পুঁজিতে আশা দেখালেও তা তাসকিনদের বোলিং ইউনিট বেশিদূর এগোতে পারেনি।
শান্ত সবচেয়ে বেশি বিরক্ত এলোমেলো ব্যাটিংয়ে। ম্যাচ হারার পর দায় দিয়েছেন ব্যাটারদের ওপর। নিয়েছেন নিজের ওপরও। সবশেষে টাইগার অধিনায়ক প্রচ্ছন্ন হুমকিও ছুড়ে রেখেছেন, পাকিস্তানকে হারিয়ে ফিরব। ট্রফি নিয়ে ফিরতে চাওয়া শান্তর স্বপ্ন ও বাস্তবতার পরিধি কমেছে। এবার একটি হলেও জয় চায় টাইগার দলপতি। যদিও আখেরে সেটি আসবে কি না, তাও নিশ্চিত না। টানা দুই ম্যাচ হেরে ছিটকে গেছে স্বাগতিক পাকিস্তান। সেই ঝাঁজ বাংলাদেশের ওপর মেটানোর প্রত্যয়ও শুনিয়েছেন দলটির অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান। তা ছাড়া রাওয়ালপিন্ডির রানপ্রসবা মাঠে বাংলাদেশের হয়তো আড়াইশ রান পর্যন্ত যেতে পারবে। সেই রান পাড়ি দেওয়া খুব একটা কঠিন হয়তো হবে না স্বাগতিকদের। এসব শুধু অনুমান এবং সম্ভাবনা। ব্যাটিং, বোলিং এবং পরিসংখ্যান ঘাঁটলে বাংলাদেশের পক্ষে বাজি হয়তো খুব কম মানুষই লাগবে। সেই আত্মতৃপ্তির লড়াই আগামীকাল বৃহস্পতিবার।
তার আগে আইসিসির আরেকটি ট্রফিতে ব্যর্থ হওয়ার দায় নিয়েছেন শান্ত। হতাশ টাইগার অধিনায়ক বলেছেন, ‘আমরা সিরিজ জিতলেও বেশিরভাগ সময় ঘরের মাঠে জিতি। দেশের বাইরে সিরিজ কমই জেতা হয়। আইসিসি ইভেন্টেও একই অবস্থা। এক দিন বোলিং ভালো হয় না, আরেক দিন ব্যাটিং খারাপ হয়, আরেক দিন ফিল্ডিং খারাপ হয়। কেমন যেন এলোমেলো ক্রিকেট হয়। আমাদের এটা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হবে। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিংয়ে সম্মিলিতভাবে ভালো করার উপায় বের করতে হবে।’
ট্রফির মিশনে টিকে থাকার লড়াইয়ে বাংলাদেশ ডোবে দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ে। আসরে সবচেয়ে শঙ্কার হয়েছিল ব্যাটারদের ব্যাটিং স্টাইল ও ডট বল খেল। সোমবার কিউইদের বিপক্ষে ৩০০ বলের খেলায় ১৮১ বল ডট খেলেছেন টাইগার ব্যাটাররা। প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ১৫৯ বল ডট দিয়েছিল বাংলাদেশ। ভারত ও নিউজিল্যান্ড দুই ম্যাচ মিলিয়ে বাংলাদেশ ডট দিয়েছে ৩৪০ বল বা ৫৬ দশমিক ৪ ওভার। শান্তর মতে এটাই তাদের দুর্ভাগ্যের কারণ, ‘অবশ্যই এই জায়গায় আমাদের উন্নতির সুযোগ রয়েছে। আমরা নিয়মিত ৩০০ করি না, এটা মেনে নিতেই হবে। বড় জুটি গড়তে পারলে এত বেশি ডট বল হয়তো হতো না।’
শান্তর দলে আনফিট সৌম্য সরকার খেলেছেন, মাহমুদউল্লাহর ফিটনেস নিয়েও শঙ্কা আছে। মুশফিকুর রহিমের ফর্ম নিয়েও বিস্তর সমালোচনা। তবুও সিনিয়র কোটায় কি অটো চয়েজে দলে এরা? শান্ত কথাটির উত্তর দিয়েছেন একটু কঠিন করেই, ‘না না। এই টিমে কেউ অটোচয়েজ না।’পরে দিয়েছেন ব্যাখ্যা। সবশেষ সিনিয়রদের পাশে দাঁড়িয়ে ব্যর্থতার পুরো দায় মাথা পেতে নিয়েছেন শান্ত, ‘আমি চাই না দুই সিনিয়রকে (মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ) আলাদাভাবে দেখাতে। একটি দল হিসেবে, আমরা ম্যাচটি ভালো খেলিনি। এটা সিনিয়রদের থেকে আকাশছোঁয়া প্রত্যাশা রাখার বিষয় নয়। আমরা ব্যাটিং গ্রুপ হিসেবে ভালো পারফর্ম করতে পারিনি।’
ব্যাস, পারিনি। এখানেই শেষ। শান্তদের এই বাজে ব্যাটিং নিয়ে সমালোচনা হয়। আরেকটি টুর্নামেন্ট আসে তখন আবার স্বপ্ন দেখে ষোলো কোটি মানুষ। কিন্তু শান্তরা স্বপ্ন দেখায় এবং ব্যর্থ হয়ে স্রেফ ‘সরি’বলেন। নিজেদের শোধরানোর নিবেদন দেখা যায় না কারও মধ্যেই।