চ্যাম্পিয়নস ট্রফি
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:০৯ পিএম
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:০৯ পিএম
শান্ত লড়লেও মিডলে কেউ ধরতে পারেননি হাল। জাকের টেনে নিয়েছে বাকি পথ— সংগৃহীত ছবি
টাইগারদের যা ঘাটতি তার প্রায় পুরোটা জুড়েই ব্যাটিং। এই শঙ্কা চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে যাওয়ার আগ থেকেই। ব্যাটিংটা ঠিকঠাক না হলে তো আর বোলারদের কিছুই করার থাকে না। সেই ব্যাটিংয়েই গলদঘর্ম দশা নাজমুল হোসেন শান্ত ব্রিগেডের। একদিন টপ অর্ডারে ধস নামে তো অন্যদিন মুখ থুবড়ে পড়ে মিডল অর্ডার। কোনোদিন আবার ব্যর্থ হয় গোটা ব্যাটিং ইউনিট। এর ব্যাতিক্রম হয়নি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও।
ভারতের বিপক্ষে ট্রফির মিশন শুরুতে নাকানিচুবানি খায় টপ অর্ডার। গতকাল সোমবার রাওয়ালপিন্ডিতে শুরুর শঙ্কা কেটেছিল। কিন্তু খেই হারায় মিডল অর্ডার। ৯৭ রান পর্যন্ত দুই উইকেট হারানো দল পরের ২০ রান তুলতে হারায় আরও তিন উইকেট। এখানেই থমকে যায় টাইগারদের ইনিংস। রানপ্রসবা উইকেটে কমে আসে রান তোলার গতি। তিনশ বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটাররা গুনে গুনে ১৮১টি বল দেয় ডট। তাতেই টেনেটুনে স্কোর আসে ২৩৬ রানে। এইটুকু আসতে আবার লোয়ার অর্ডারের বড় অবদান। ভারতের বিপক্ষে সব উইকেট হারালেও গতকাল অবশ্য পুরো ওভার খেলতে পারে টাইগাররা।
পিন্ডিতে টাইগারদের পিন্ডি চটকান মিচেল ব্রেসওয়েল। কিউই এই স্পিনারেই ধুঁকেছে বাংলাদেশ। রান পায়নি, শট খেলতে পারেনি, কখনও তড়িঘড়ি করে বাঁচিয়েছে উইকেট। তবে ব্রেসওয়েল ক্ষতিটা করেই দিয়েছেন। ২৬ রান খরচায় ফিরিয়েছেন চার ব্যাটারকে। এর আগে এত মিতব্যয়ী কখনও ছিলেন না ডান-হাতি এই অফ স্পিনার। বাংলাদেশের ব্যাটারদের নাকের জলে চোখে জলে করে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে রেকর্ড বোলিংটাও করে নিয়েছেন। এর আগে ৩৬ রানে ৪ উইকেট তুলেছিলেন ব্রেসওয়েল। গতকাল ছিলেন আরও বেশি আক্রমণাত্মক। তার অফ স্পিনে কুপোকাত হয়েছেন ওপেনার তানজিদ হাসান, মিডলের তাওহীদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ। মূলত টাইগারদের মিডল ডুবিয়েছেন ব্রেসওয়েল। বাংলাদেশও তাতে ডুবেছে।
এদিন অবশ্য দারুণ শুরু পেয়েছিল বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটি লম্বা সময় টিকে ছিল। শুরুর ১০ ওভারে ৬০ রান জমা করেও নিয়েছিল। কিন্তু পথ হারানোর শুরু শতরান পূরণের একটু আগে। সৌম্য সরকার ও তানজিম হাসান সাকিবকে বাদ রেখে এদিন দল সাজায় টাইগারদের টিম ম্যানেজমেন্ট। পজিশনে উন্নতি নিয়ে ওপেনিংয়ে আসেন শান্ত। অধিনায়ক দুর্দান্ত শুরু করেন। তানজিদকে নিয়ে ৮ ওভারেই তুলে নেন ৪৫ রান। বড় শট খেলতে গিয়ে তানজিদ (২৪) ফেরেন ব্রেসওয়েলের বলে। সেই শুরু এবং বাংলাদেশকে ধরাশায়ী করেই পরে থামেন কিউই স্পিনার। ব্রেসওয়েলের সঙ্গে তোপ দাগেন উইল ও’রাউকি।
৯৭ রানে ২ উইকেট হারানো দল ১১৮ রান আনতেই হারিয়ে বসেন টপ অর্ডারের পাঁচ উইকেট। তিনে নামা মেহেদী হাসান মিরাজ (১৩) ফেরেন ওরোর্কের বলে। এরপর আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান তাওহীদ ফেরেন ৭ রানে। মুশফিকুর ব্যর্থ হন আরেকবার। আনেন মোটে ২ রান। দলকে চাপ কাটাতে আসা মাহমুদউল্লাহও পূরণ করতে পারেননি দায়িত্ব। দলে ফেরা মাহমুদউল্লাহ আনেন মোটে ৪ রান। তবে একপাশ আগলে তখনও লড়ে যাচ্ছিলেন অধিনায়ক শান্ত।
ওয়ান ডে ক্যারিয়ারের ১০ ফিফটি আনার দিনে অধিনায়ক অবশ্য ইনিংস সেঞ্চুরি অবধি নিয়ে যেতে পারেননি। ১১০ বলে ৭৭ রানে থামেন শান্ত। দুর্বল শটে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ফেরার আগে ৯ চারে ফিফটি ছাড়ানো ইনিংস খেলেন টাইগার কাপ্তান। শেষের দিকে সাতে নেমে দলের স্কোর দেড়শ রানের পর দুইশ ছাড়িয়ে দেন জাকের আলী। রান আউট হয়ে ফেরার আগে জাকেরে ব্যাটে আসে মূল্যবান ৪৫ রান। ২৫ বলের ক্যামিওতে ২৬ রান যোগ করে দেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। তাসকিন আহমেদ আনেন ১০ রান। তাতেই সংগ্রহ দুইশ ছাড়িয়ে পৌঁছায় আড়াইশর কাছে।
অতিরিক্ত ডট বলে চাপে পড়া দল শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেট হারিয়ে ২৩৬ রান পর্যন্ত যেতে পারে। নিউজিল্যান্ডের হয়ে এদিন সর্বোচ্চ ৪ উইকেট তুলে নেন ব্রেসওয়েল। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইলিয়াম ও’রাউকি নেন ২ উইকেট। একটি করে উইকেট পুরেছেন কাইল জেমিসন ও ম্যাট হেনরি। তাদের স্পিন ঘূর্ণি আর পেস তোপে দিশাহারা বাংলাদেশ টেনেটুনে দুইশ পেরিয়ে কিছুদূর হাঁটে। রাওয়ালপিন্ডির এই রানপ্রসবা মাঠে যা যথেষ্ট নয় বটে!