জাতীয় অ্যাথলেটিকস
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:০১ পিএম
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:০৬ পিএম
মঙ্গলবার ৪৮তম জাতীয় অ্যাথলেটিকসে রেকর্ড গড়েছেন নাজিমুল হোসেন রনি। প্রবা ফটো
৪০০ মিটার হার্ডেলসে জোড়া রেকর্ড দেখেছে জাতীয় স্টেডিয়াম। মঙ্গলবার ৪৮তম জাতীয় অ্যাথলেটিকসে নারী ও পুরুষ বিভাগে রেকর্ড গড়েন মোসাম্মৎ বর্ষা খাতুন ও নাজিমুল হোসেন রনি। তবে রনির রেকর্ডটি বেশ পুরোনো। প্রায় ৩২ বছর আগের গড়া আব্দুল রহিম নঈমের রেকর্ড ভেঙেছেন তিনি। ১৯৯৩ সালে ৪০০ মিটার হার্ডেলসে ৫১ দশমিক ৮৭ সেকেন্ডে এই রেকর্ড গড়েছিলেন নঈম। তার রেকর্ডটি ভাঙতে এদিন রনি সময় নিয়েছেন ৫০ দশমিক ৮৪ সেকেন্ড।
মাত্র তৃতীয়বার প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়ে বিরাট রেকর্ড গড়লেন নাজিমুল। প্রথম প্রচেষ্টায় রৌপ্য, দ্বিতীয়বার স্বর্ণপদক এবং তৃতীয়বার এসেই জাতীয় অ্যাথলেটিকসে ভাঙলেন পুরনো এক রেকর্ড। দারুণ এই অর্জনের পর সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এমন একটা রেকর্ড গড়ে খুশি লাগারই কথা। আমার কোচ এবং সহপাঠিরা আমাকে নিয়ে বলতেন এই রেকর্ডটা আমার দ্বারা ভাঙা সম্ভব। অবশেষে সেটি করতে পেরে আলহামদুল্লিাহ।’
‘অবশ্যই নিজের চেষ্টা ছিল, আমার প্রশিক্ষকও আমাকে নিয়ে করেছেন, মোটকথা সবার দোয়া এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এটা করতে পেরেছি।’ যোগ করেন নাজিমুল।
২০১৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবহিনীতে যোগ দেন নাজিমুল। বাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগে অ্যাথলেটিকস সম্পর্কেই কোনো ধারনা ছিল না বলে জানান। ২০২১ সালেই প্রথমবার আর্মির মেইন টিমে সুযোগ হয় এই অ্যাথলেটের। ওই বছরই নিজের পারফরম্যান্সের মূল্যায়নে জাতীয় পর্যায়ে দৌড়ানোর সুযোগ পান তিনি। তবে সে বছর আর্মির আন্তঃইউনিটে দৌড়ান ৪০০ মিটার স্প্রিন্টে। সেখানে স্বর্ণ পদক জেতেন নাজিমুল। পরবর্তীতে অবশ্য পছন্দের ইভেন্ট হার্ডেলসেই মনোযোগ দেন ২৬ বছর বয়সি এই অ্যাথলেট। তাতেই বাজিমাত করেন নাজিমুল।
অ্যাথলেটিকসে আসার পেছনের গল্প বলেছেন বগুড়া থেকে উঠে আসা নাজিমুল, ‘আর্মিতে আসার পরই আমি অ্যাথলেটিকসে আসি। ওখানে আন্তপ্রতিযোগিতা হয়, সেখান থেকে বের হওয়া, পরবর্তিতে আর্মির মেইন টিমে, এরপর ন্যাশনাল কম্পিটিশনে আসি।’
ভবিষ্যতে আরও বড় কিছুর স্বপ্ন দেখেন নাজিমুল, ‘অ্যাথলেটিকস নিয়ে আমার পরিকল্পনা হচ্ছেÑ সামনে আমি সাফ গেমসে ভালো ফলাফল অর্জন করা। যে টাইমিং করেছি… আরেকটু চেষ্টা করলে হয়ত হয়ে যাবে। তবে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে যদি আরেকটু সহযোগিতা করা হয় তবে অনেকটা সহজ হয়ে যাবে।’
ছেলেদের এই বিভাগে দ্বিতীয় হয়েছেন মোহাম্মদ মাসুদ রানা। আর্মির এই অ্যাথলেট সময় নিয়েছেন ৫৩ দমমিক ০৬ সেকেন্ড। আর তৃতীয় হওয়া বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর মোহাম্মদ রবিউল ইসলামে টাইমিং ৫৩ দশমিক ২৬ সেকেন্ড।
জাতীয় অ্যাথলেটিকসের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার ৪০০ মিটার হার্ডেলসে নারী বিভাগে রেকর্ড গড়েন বর্ষা খাতুন। সময় নিয়েছেন ১:০৪.৬১ সেকেন্ড। তিনি ভেঙেছেন ২০২২ সালে গড়া লিবিয়া খাতুনের রেকর্ড; নড়াইলের অ্যাথলেটিকস রেকর্ডটি গড়েছিলেন ১.০৪.৭০ সেকেন্ড দৌড়ে। দুই বছর আগের রেকর্ড ভেঙে বেশ উচ্ছ্বসিত বর্ষা, ‘এবার আগে থেকেই আমি এবং আমার কোচ চেয়েছিলাম রেকর্ড করব। ইনশাআল্লাহ সেটা করতে পেরেছি সেজন্য খুবই খুশি।’
প্রায় ১২ বছর ধরে খেলছেন বর্ষা। বয়সটা ২৪ বছর পেরিয়েছে। আগেও স্বর্ণ পদক জিতেছেন, তবে রেকর্ড এবারই প্রথম। ৪০০ মিটারে এর আগে ২০২২ সালে সিনিয়র পর্যায়ে গোল্ড মেডেল জেতেন বর্ষা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ২০১৫ সাল থেকে কর্পোরালে আছেন বর্ষা।
তবে এদিন রেকর্ড গড়া বা স্বর্ণ পদক জেতা মোটেও সহজ ছিল না বর্ষার জন্য। কেননা ইনজুরি নিয়েই দৌড়েছেন তিনি। সেটি জানিয়েছেন নিজেই, ‘আমার পায়ে ব্যাথা ছিল। নিক্যাপ পড়ে দৌড়েছি। এটা পড়েই ১৫ দিন ধরেই অনুশীলন করেছি। পেইনকিলার খেয়েছি। অনুশীলন এভাবেই করেছি, মনোবল হাই করেছি, আর সেখান থেকেই আত্মবিশ্বাস পাওয়া।’
জুনিয়র পর্যায়ে কখনও দৌড়ানো না হলেও সরাসরি সিনিয়র পর্যায়ে এ নিয়ে ১২ বার দৌড়েছেন বর্ষা। অ্যাথলেটিকসে আসার পেছনের গল্প জানান বর্ষা, ‘আমি জেলা পর্যায়ে খেলেছি, এরপর বিজেএমসির কোচ আমির আলীর স্যার আমার খেলা দেখেন। তারপর ওখান থেকে উনি আমাকে চট্টগ্রাম বিজেএমসিতে নিয়ে যায়। সেখানে আমি দুই বছর অনুশীলন করি। ভালো রেজাল্ট করায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ে নেয় আমাকে। এরপর তো এখানেই ১২ বছর ধরে আছি।’
এসএ গেমস নিয়ে বর্ষা জানান নিজের ইচ্ছার কথা, ‘এখন যে রিদমে আছি আশা করি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মেডেল জিততে পারব।’ এশিয়ান অ্যাথলেটিকসে এর আগে একবার যাওয়ার কথা ছিল বর্ষার; কিন্তু ইনজুরির কারণে যেতে পারেননি মাগুররা এই অ্যাথলেট। এবার সেই সুযোগ আসলে দারুণ কিছু করে দেখাতে চান তিনি।
নারীদের ৪০০ মিটার হার্ডেলসে এদিন দ্বিতীয় হয়েছেন অনন্যা বিশ্বাস। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই অ্যথলেট সময় নিয়েছেন ১.০৫.২০ সেকেন্ড। আর তৃতীয় হওয়া বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিবি আসমার টাইমিং ১.০৭.২৩ সেকেন্ড।