চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতিতে ধাক্কা
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:৩৮ পিএম
ছবি: বিসিবি
২০ ওভার পর্যন্ত দেখেশুনেই খেলছিল বাংলাদেশ। এরপর হতশ্রী ব্যাটিং প্রদর্শনী। ১০৪ রানে ৩ উইকেট হারানো দল পরের চল্লিশ রান যোগ করতে হারায় আরও ৪ উইকেট। তাতেই পথ হারানোর জোগাড় হয়। একটা সময় পর্যন্ত মনে হচ্ছিল, নাজমুল হোসেন শান্তর দল বোধহয় ২০০ রানেরও নাগাল পাবে না। সেই শঙ্কা থেকে অবশ্য মুক্তি দেন পেসার তানজিম সাকিব। রানপ্রসবা উইকেটে অচেনা–অখ্যাতদের নিয়ে গড়া পাকিস্তান শাহিনসের বিপক্ষে টাইগাররা টেনেটুনে আনে ২০২ রান। সেই পুঁজি যথেষ্ট বানাতে পারেননি টাইগার বোলাররা।
সোমবার আইসিসির একাডেমি মাঠে ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়েও ধুঁকেছে বাংলাদেশ। ব্যাটিং ব্যর্থতার ম্যাচে বড় হার এড়াতে পারেনি শান্ত ব্রিগেড। মোবাশ্বির খান ও মোহাম্মদ হারিসের ফিফটিতে ৭ উইকেটের জয় তুলেছে শাহিনস। বোলিংয়ে লড়াই করতে না পারার দিনে শান্ত ব্রিগেড বার্তা পেয়েছে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মূলপর্বে তাদের ভোগাতে পারে ব্যাটিং। শান্তদের আউটের ধরন, খেলার অ্যাপ্রোচ এবং শট সিলেকশনও পড়ছে সমালোচনায়। ৫০ ওভারের ক্রিকেটটা বাংলাদেশ অন্য দুই ফরম্যাটের চেয়ে ভালো খেলে। কিন্তু সেখানের ব্যাটিংয়েও দিচ্ছে অশনিসংকেত। সব উইকেট হারানোয় আজ বাড়তি ব্যাটার পরখ করার সুযোগও পায়নি টাইগ্রেসরা। বোলারদের কেউও পারেননি ম্যাচের মোড় ঘোরাতে।
দুবাইয়ে বসা ম্যাচটিতে বাংলাদেশের হয়ে কেউ ফিফটির দেখা পাননি। সর্বোচ্চ ৪৪ রান এসেছে সহঅধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাট থেকে। সৌম্য সরকার ফিরেছেন ৩৫ রান করে। বাকিদের সবাই ছিলেন আসা-যাওয়ার মাঝে। ব্যাটিংয়ে দায়িত্ববান ইনিংস খেলতে পারেননি কেউই। অনেকেই ছিলেন খাপছাড়া। এমনকি পুরো পঞ্চাশ ওভারও ব্যাট করতে পারেনি দল। উসামা মীরের তোপে বাংলাদেশ থেমেছে ৩৮.২ ওভারেই। এদিন স্কোরবোর্ডে মিরাজ ও সৌম্য বাদে সবচেয়ে বেশি রান এনেছেন সাকিব। যিনি মূলত একজন পেসার। তানজিম সাকিবের ২৭ বলে ৩০ রানের ইনিংসে ভর করেই বাংলাদেশ পেরোয় দলীয় ২০০ রান।
টাইগারদের ব্যাটিংয়ে অশনিসংকেতের কারণ, টপঅর্ডারে ব্যর্থ হওয়া, ইনিংস বড় করতে না পারা এবং জুটি গড়তে ব্যর্থ হওয়া। ওয়ানডে ক্রিকেটে যা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তার ওপর ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ যে মাঠে খেলবে, সেই দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামটি হবে রানপ্রসবা উইকেটের। বার্তা সংস্থা পিটিআই বলছে, ভারতের ম্যাচের জন্য দুটি অব্যবহৃত ও তরতাজা পিচ নির্দিষ্টভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। যাতে বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটাররাও সুবিধা করতে পারেন।
পিটিআই জানিয়েছে, অনূর্ধ্ব এশিয়া কাপ ও আইএল টি-টোয়েন্টির ম্যাচ হলেও দুবাইয়ের দুটি পিচ ব্যবহার করা হয়নি। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জন্য সেগুলো তরতাজা থাকবে। মূল পরিকল্পনা ছিল পিচ বেশি ব্যবহারে যেন নিচু ও মন্থর না হয়ে যায়। ব্যাটার-বোলার উভয়কেই সমানভাবে সহায়তা করবে এই উইকেট। সাধারণত দুবাইয়ের উইকেট হয় পেসবান্ধব। পেস বোলাররা সেখানে সুবিধা পেয়ে থাকেন, ব্যাটাররাও রান করতে পারেন। তবে অব্যবহৃত কিংবা তরতাজা উইকেট হলে সুবিধা আদায় করতে পারেন স্পিনাররা। স্কোয়াডে এরই মাঝে পাঁচজন স্পিনার রেখেছে ভারত। তাদের ব্যাটিং লাইনআপও বেশ লম্বা। সেই হিসেবে স্পিনের বিপক্ষেও লড়তে হবে বাংলাদেশি ব্যাটারদের।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে যাওয়ার আগে বাকি সাত দল ম্যাচ খেলেছিল। শুধু বাংলাদেশ অনুশীলন চালিয়েছিল মিরপুরে। শান্তরা ওয়ানডে ফরম্যাটে স্বীকৃত ম্যাচ খেলেছে, তাও কয়েক মাস আগে। তা ছাড়া সদ্যই শেষ হয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ। টি-টোয়েন্টির আবহ থেকে বের হয়ে মূল প্রস্তুতিরও চ্যালেঞ্জ ছিল শান্তদের। যেখানে মোটাদাগে ব্যর্থ হয়েছেন তারা।
পাকিস্তান শাহিনসের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল কন্ডিশন এবং নিজেদের আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবার। সেই লড়াইয়ে ব্যাটাররা মোটেও সুবিচার করতে পারেননি নামের প্রতি। ওপেনিংয়ে নামা তানজিদ তামিম ৬ রানের মাথায় বোল্ড হয়ে ফিরেছেন। তিনে নামা শান্তও হয়েছেন ব্যর্থ। চোট কাটিয়ে ফেরা অধিনায়কের ব্যাটে আসে মোটে ১২ রান। পরের জুটিতে সৌম্য ও মিরাজ অনেকদূর টেনেছিল বাংলাদেশকে।
তবে ব্যক্তিগত ৩৫ রানের মাথায় রান আউটের ফাঁদে পড়েন সৌম্য। পরে তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাটে আসে ২০ রান। মুশফিকুর রহিম (৭) হন ব্যর্থ, রান পাননি জাকের আলী (৪)। শেষদিকে রিশাদের ১৪, নাসুমের ১৫ এবং তানজিম সাকিবের ৩০ রানে টেনেটুনে আসে ২০০ রান। বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসে শুরুতেই ধাক্কা দিতে ৭৬ রান করেন হারিস ও ফিফটি এনে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন মোবাশ্বির। মিরাজ, সাকিব ও নাহিদ নেন একটি করে উইকেট। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ে ভারতকে মোকাবেলা করবে শান্ত ব্রিগেড।