প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১২:৩৪ পিএম
কোচ পিটার বাটলারের অধীনে অনুশীলনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বিদ্রোহ করা ১৮ নারী ফুটবলার
অবশেষে বাংলাদেশ নারী ফুটবলে উড়ল সাদা পতাকা। বিদ্রোহের পথ থেকে সরে এলেন নারী ফুটবলাররা। আড়াই সপ্তাহ ধরে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল দেশের নারী ফুটবলে। পিটার বাটলার কোচ থাকলে তারা অনুশীলনে ফিরবেন নাÑ এমন ঘোষণা দেন সাবিনা খাতুনসহ সাফ শিরোপাজয়ী ১৮ জন ফুটবলার। আর সাবিনাসহ বিদ্রোহীরা থাকলে তিনি থাকবেন নাÑ এমন হুঙ্কার দেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল ইংলিশ কোচ বাটলার। দুই পক্ষই ছিল তাদের দাবিতে অনড়। শেষ পর্যন্ত নমনীয় হয়েছে ঊভয়পক্ষই। অভিমান ভেঙে কোচ বাটলারের অধীনেই অনুশীলনে ফিরতে রাজি বিদ্রোহীরা। বাটলারও প্রতিহিংসাপরায়ণ না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সবার প্রতি।
শান্তির পতাকা উড়লেও, আসন্ন দুবাই সফরে দলের সঙ্গে থাকার সুযোগ নেই বিদ্রোহীদের। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে দুটো প্রীতি ম্যাচ খেলার উদ্দেশ্যে বাটলারের তত্ত্বাবধানে দুবাই যাবে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। বলা বাহুল্য, সাফ শিরোপাজয়ীদের ছাড়াই যাচ্ছে বাটলার ব্রিগেড।
বিদ্রোহী নারী ফুটবলাররা অনুশীলনে ফিরতে রাজি হয়েছেন, এই সুসংবাদ দেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। রবিবার বাফুফে ভবনে আয়োজিত সংবাদ মাধ্যমে জানান, সভাপতি ও আমার পক্ষ থেকে মেয়েদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলাম। ধারাবাহিকভাবে চেষ্টা করেছি আমরা। আজকেও তাদের সাথে বসেছিলাম আমি। এখন যেটা বলতে পারি, মেয়েরা ফিরবে, ট্রেনিংয়ে ফিরবে; কিন্তু এখন ফিরবে না। কেননা, আমাদের ক্যাম্প বন্ধ হয়ে যাবে ২৪ ফেব্রুয়ারি। আর আমরা আরব আমিরাতে যাব দুটা ম্যাচ খেলতে। কিরণ বলেন, ‘ক্যাম্প বন্ধ হয়ে যাবে ২৪ ফেব্রুয়ারি। টিমও সেদিন চলে যাবে আরব আমিরাতে। এই সময়ে সিনিয়র মেয়েরাও (১৮ বিদ্রোহী ফুটবলার) চাচ্ছে একটা ছুটিতে যেতে। এরপর আবার তারা ক্যাম্পে ফিরবে এবং অনুশীলন শুরু করবে।’
সংকট দূরীকরণে রবিবার বাফুফে ভবনে মেয়েদের সাথে আবার আলোচনায় বসেন কিরণ। সেখানেই বিদ্রোহীরা চুক্তিতে ও অনুশীলনে যোগ দেবেন বলে জানান কিরণ। এর আগে আজ দুপুরে বিদ্রোহ করা ফুটবলারদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বাফুফে নারী বিভাগের প্রধান। সেখানে বেশকিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনার এক পর্যায়ে সাবিনারা নিজেদের আল্টিমেটাম প্রত্যাহারের কথা জানান বলে দাবি করেন কিরণ। তবে ১৮ ফুটবলারের সঙ্গে কিছু আলোচনা বাকি আছে বলে জানিয়েছেন তিনি, ‘নারী উইং, বাফুফে সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি, কোচ এবং মেয়েরা একসঙ্গে বসে যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল, সেটা মিটিয়ে দেওয়া হবে। যেহেতু পরবর্তী সময়ে একসঙ্গে অনুশীলন করতে হবে, কেউ কারও প্রতি অসন্তোষ থাকলে পরবর্তী সময়ে ভালো কিছু হবে না।’
এর আগে বাফুফের নারী উইং থেকেও একাধিকবার বৈঠক হয় মেয়েদের সঙ্গে। কিন্তু এই ১৮ ফুটবলার তাদের সিদ্ধান্ত বদলাতে রাজি হননি। অবশেষে তারা পরিহার করলেন বিদ্রোহের পথ।
২৬ ফেব্রুয়ারি আরব আমিরাতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ আর আগামী ২ মার্চ একই দলের সঙ্গে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। সাবিনা-মনিকাসহ ১৮ ফুটবলারের কেউই দুবাই সফরের স্কোয়াডে থাকছেন না।
এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি বাফুফে ভবনের সামনে সংবাদ মাধ্যমের সামনে কোচ বাটলারের বিরুদ্ধে তিন পৃষ্ঠার লিখিত অভিযোগ তুলে ধরেন সাবিনারা। বাটলারকে কোচ রেখে দেওয়া হলে অনুশীলনে যোগ দেবেন না এবং সবাই একযোগে অবসরে চলে যাবেন বলে হুমকি দেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বাফুফে। সেই কমিটি তদন্ত শেষে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর বিদ্রোহী ফুটবলারের অনুশীলনে ফেরার আহ্বান জানান বাফুফে সভাপতি।
সাবিনাদের প্রতি কিছুটা নমনীয় হয়েছেন কোচ বাটলারও। গতকাল গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমি একজন কোচ ও বাবা। আমারও একটি মেয়ে ও ছেলে আছে, আমি তাদের অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও নম্র হতে শেখাই। আমি শুধু এটাই চাই যে, আমাকে সম্মান করা হোক, কিন্তু তা হয়নি। আমি নির্বোধ নই এবং বুঝতে পারি যে, কিছু ব্যক্তিকে রক্ষা করার জন্য একটি খেলা হচ্ছে। তবে আমি প্রতিহিংসাপরায়ণ বা খারাপ মানুষ নই। আমি অবশ্যই জাতীয় দলের জন্য সৃষ্টিশীল খেলোয়াড়দের মূল্যায়ন করব।’
২৪ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা দেবে বাংলাদেশ দল। একই দিন ১৮ জন ফুটবলারও ছুটি পাবেন এবং ক্যাম্প ছাড়বেন। এরপর ছুটি শেষে ক্যাম্পে ফিরে সাবিনারা বাফুফের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবেন এবং অনুশীলন করবেন বাটলারের অধীনে, জানান কিরণ।
যতই শান্তির পতাকা উড়ুক বিদ্রোহীদের বাটলার কতখানি স্বাভাবিক চোখে দেখবেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। বাটলারের কথায়, ‘যেখানে আমাদের হাতে অনূর্ধ্ব-২০ বয়সি এমন কঠোর পরিশ্রমী এবং নম্র খেলোয়াড় রয়েছে; সেখানে আশা করি, আমাকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী খেলোয়াড়দের সাথে কাজ করতে বাধ্য করা হবে না।’