রুবেল রেহান
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:৫২ এএম
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:৫৭ এএম
সর্বশেষ মৌসুমে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ থেকে অবনমন হয় ব্রাদার্স ইউনিয়নের। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শেখ জামাল ধানমন্ডি ও শেখ কামাল ক্রীড়াচক্র মৌসুমে না আসায় লিগে খেলার অনুমতি পায় ব্রাদার্স। ওই মৌসুমে ফেডারেশন কাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয় গোপীবাগের ক্লাবটি। নতুন মৌসুমে অবশ্য ঘুরে দাঁড়িয়েছে তারা। ফেড কাপে বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে ‘এ’ গ্রুপে রানার্সআপ হয়ে কোয়ালিফাই করেছে পরের রাউন্ডে।
আমরা নতুন কোনো খেলোয়াড় দলে ভিড়াতে চাচ্ছি না এবং যে দলটা আছে সেটাই ধরে রাখতে চাইছি। এই দল নিয়েই আমরা ফেড কাপের শিরোপা জেতার আশা রাখি।
—আমের খান
ম্যানেজার, ব্রাদার্স ইউনিয়ন
ফেড কাপে এবার এসেছে বেশ কিছু পরিবর্তন। নতুন ধাঁচে কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনাল না হয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের আদলে হচ্ছে এই প্রতিযোগিতার প্লে-অফ রাউন্ড। গ্রুপ রানার্সআপ হওয়ার এলিমিনেটর এবং কোয়ালিফায়ার খেলে ফাইনালে জায়গা করে নিতে হবে ব্রাদার্সকে। সে অনেক দূরের পথ। তারপরও এখন পর্যন্ত ফেড কাপে সফলই বলা যায় প্রতিযোগিতার তিনবারের চ্যাম্পিয়নদের (১৯৮০, ১৯৯১, ২০০৫)। নতুন মৌসুমে এভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে আছে ক্লাব সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা। তবে মাঠের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়। বিশেষ করে ফরোয়ার্ড সাজ্জাদ হোসেন, দলটির বিদেশি রিক্রুট সেনেগালের স্ট্রাইকার মুস্তফা দ্রাম্মেহ ও গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা।
ফেড কাপের চার ম্যাচে ব্রাদার্সের হয়ে সমান তিনটি করে গোল সাজ্জাদ ও দ্রাম্মেহর। গ্রুপ পর্বে আর কোনো খেলোয়াড়ের এর চেয়ে বেশি গোল নেই। তিন গোল করে সবার ওপরে বসুন্ধরা কিংসের ডিফেন্ডার তপু বর্মণ। এদিকে মিতুল মারমার সঙ্গে তিন ম্যাচে নিজেদের জাল অক্ষত রেখেছেন ব্রাদার্সের আশরাফুল রানা। দলটির টিম ম্যানেজার আমের খানের চোখেও এই তিন তারকার অবদান চোখে লেগেছে। দল পরের রাউন্ডে যাওয়ায় তাদেরকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন সাবেক এই ফুটবলার, ‘আমি যদি পারফরম্যান্স হিসেবে দেখি, গোলরক্ষক আশরাফুল রানা তিনটা ক্লিনশিট রেখেছে, সেক্ষেত্রে আমি বলব তাদের এই পারফরম্যান্সের কারণেই ব্রাদার্সের আজকের এই অবস্থান। সাজ্জাদের একটা হ্যাটট্রিক আছে, তো তাদের পারফরম্যান্স তারা করেছে, নিঃসন্দেহে বলতে হবে তারা দুর্দান্ত খেলেছে।
এই প্রতিযোগিতার নতুন মৌসুমে ‘এ’ গ্রুপে ছিল বসুন্ধরা কিংস, ফর্টিস এফসি, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ও বাংলাদেশ পুলিশ। চার খেলায় তিন জয়ে ৯ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ সেরা কিংস। সমান ৭ পয়েন্ট পেয়েছে ফর্টিস ও ব্রাদার্স। তবে হেড টু হেড জয় এবং গোলগড়ে এগিয়ে থাকায় পরের রাউন্ড নিশ্চিত করেছে ব্রাদার্স। তিন তিনটি সেরা দল থাকার পরও প্লে-অফে জায়াগ করে নিয়েছে ব্রাদার্স। দলটির এমন উত্থানের পেছনে আমের খান কৃতিত্ব দিতে চান ক্লাবটির ম্যানেজমেন্টকে। অর্থাৎ ৫ আগস্টের পর নতুন করে যারা ক্লাব পরিচালনা করছেন তাদেরকেই। মরিচাপড়া ক্লাবটির হাল ধরেছেন ইশরাক হোসেন। দায়িত্ব নিয়ে নতুন কিছু খেলোয়াড় দলে ভিড়িয়েছেন তিনি। এ ছাড়া অর্থের জোগানটাও যে খুব গুরুত্বপূর্ণ, সেটিও স্বীকার করেছেন আমের খান। তার ভাষায় এটিকে তিনি উল্লেখ করেছেন ‘ক্যাশ ফ্লো’ হিসেবে। আর সেটি খুব ভালোভাবেই দিয়ে যাচ্ছে বর্তমান ক্লাব ম্যানেজমেন্ট। যার রিফ্লেকশন পড়েছে মাঠের পারফরম্যান্সে।
এখান থেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যই ব্রাদার্সের। সেক্ষেত্রে আসন্ন দলবদলে নতুন করে কোনো খেলোয়াড় চুক্তিবদ্ধ করতে যাচ্ছেন কি না— জানতে চাইলে ক্লাবের ম্যানেজার আমের খান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আপাতত আমরা নতুন কোনো খেলোয়াড় দলে ভিড়াতে চাচ্ছি না এবং যে দলটা আছে সেটাই ধরে রাখতে চাইছি। এই দল নিয়েই আমরা ফেড কাপের শিরোপা জেতার আশা রাখি।
দলে যারা আছেন তাদের নিয়ে ফেড কাপ শিরোপা জেতার স্বপ্ন ফরোয়ার্ড সাজ্জাদেরও, আমরা লোকাল খেলোয়াড় যারা আছি... ছন্দটা ধরে রাখলে ভালো কিছু হবে আশা করি। এবার ফেড কাপে চার ম্যাচের মধ্যে তিনটি খেলার সুযোগ পেয়েছেন সাজ্জাদ। এর মধ্যে ওয়ান্ডারার্সের বিপক্ষে করেছেন হ্যাটট্রিক। এ ছাড়া তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ছিল ফর্টিসের বিপক্ষে। ১-০ গোলে জেতা ম্যাচে রাব্বির গোলে অ্যাসিস্ট করেছিলেন সাজ্জাদই। প্রতিযোগিতায় দুই ম্যাচে তিন গোল ও এক অ্যাসিস্ট করে খুশি সাজ্জাদ, ‘আমার কাজ হলো মাঠে পারফরম্যান্স করা। মৌসুম শুরুর আগে আশা ছিল ১৪-১৫টা গোল করব। মাঝে কয়েক ম্যাচে ইনজুরিতে ছিলাম এবং কোচও কয়েক ম্যাচে আমাকে মাঠে নামাননি। পরে অনুশীলন দেখে কোচ আমাকে সুযোগ দেন। এর পরেরটা তো আপনারা জানেনই।’