প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:০২ পিএম
জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার সঙ্গে ঘরোয়া পারফরম্যান্সের কোনো সম্পর্ক নেই, এটা অনেক দিন থেকেই চলে আসছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। ব্যতিক্রম হয়নি এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির স্কোয়াডেও। চলতি বিপিএলে যারা আলো ছড়াচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই থেকেছেন উপেক্ষিত। বিপরীতে চ্যম্পিয়নস ট্রফির স্কোয়াডে একটা বড় অংশই এই বিপিএলে এখনও হয়ে আছেন নামের ভার।
চলতি বিপিএলে
এরই মধ্যে শেষ হয়েছে অর্ধেক খেলা। ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করে শেষ হয়েছে সিলেট পর্বের
খেলা। এরপর শুরু হবে চট্টগ্রাম পর্ব। এই অর্ধেক পথে ব্যাট হাতে দেশি-বিদেশিদের মধ্যে
সবচেয়ে উজ্জ্বল জাকির হাসান। এবারের আসরে এখন পর্যন্ত আড়াইশোর্ধ্ব রান করা একমাত্র
ব্যাটার তিনি। ৬ ম্যাচে ৫০.২০ গড়ে ২৫১ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। স্ট্রাইক রেটও ১৪৯.৪০।
বাদ পড়াদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত নাম লিটন কুমার দাস। ৬ ম্যাচে ২৪০ রান করেছেন এই মারকুটে
ওপেনার। স্ট্রাইক রেট ১৬৪.৩৮। গড় ৪৮.০০। আগের ম্যাচেই দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে বিপিএলের
ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরি করেছেন লিটন।
এবারের টুর্নামেন্টে
দেশীয়দের মধ্যে এখন পর্যন্ত দুশ রানের নাগাল পেয়েছেন ৫ জন ব্যাটার। এদের মধ্যে মাত্র
একজনই ডাক পেয়েছেন চ্যম্পিয়নস ট্রফির দলে। ৭ ম্যাচে ৩৫.১৪ গড়ে ২৪৬ রান করেছেন ছোট
তামিমখ্যাত ওপেনার তানজিদ হাসান। তার স্ট্রাইক রেট ১৩৮.২০। গড় ও স্ট্রাইক রেটে তার
চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে জাকির ও লিটন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সেরা দশেও রান সংগ্রহকারীদের
তালিকায় জাতীয় দলে জায়গা পাওয়াদের মধ্যে আছেন কেবল তানজিদ। এই বিপিএলে এখন পর্যন্ত
ব্যাট হাতে সেরা দশে আছেন সাইফ হাসান (৭ ম্যাচে ২২৮), ইয়াসির আলী (৬ ম্যাচে ২২৭) ও
এমামুল হক বিজয় (১৯২)।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির
স্কোয়াডে জায়গা পাওয়াদের মধ্যে চলতি বিপিএলে এক কথায় সুপার ফ্লপা পারভেজ হোসেন ইমন,
তাওহিদ হৃদয়, অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। চার
ম্যাচ খেলে ৯,২৫ গড়ে মোটে ৩৭ রান করেছেন চিটাগং কিংসের হয়ে খেলা ইমন। সমান ম্যাচে ১৩.৫০
গড়ে ৫৪ রান করেছেন শান্ত। পাঁচ ম্যাচে ৬১ রান এসেছে মুশফিকের ব্যাট থেকে। সমান ম্যাচে
৬৮ রান করেছেন মাহমুদউল্লাহ। ৫ খেলায় ২৪ গড়ে ১২০ রান করেছেন তাওহিদ হৃদয়।
এই বিপিএলে জাতীয়
দলে সুযোগ পাওয়াদের মধ্যে ব্যাটারদের চেয়ে বেশি উজ্জ্বল বোলাররা। সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি
দেশসেরা পেসার তাসকিন আহমেদ। ৬ ম্যাচ খেলে এখন পর্যন্ত ১৪ উইকেট শিকার করেছেন রাজশাহীর
হয়ে খেলা এই স্পিড স্টার। গড় ১১.২৮। রানোৎসবের এই আসরে তাসকিনের ইকোনমিও বেশ ঈর্ষণীয়Ñ
৬.৭২। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির স্কোয়াডের বাকি দুই পেসার তানজিম হাসান সাকিব ও নাহিদ রানাও
যথেষ্টই সফল। ছয় ম্যাচে ১৯.৪৫ গড়ে ১১ উইকেট শিকার করেছেন সাকিব। অবশ্য যথেষ্ট রান
বিলিয়েছেন এই তরুণ পেসার। তার ইকোনমি ৯.১০। সাত ম্যাচে ৯ উইকেট শিকার করেছেন নাহিদ।
উইকেট শিকারের দিক থেকে তার অবস্থান ছয়। ইকোনমি ৮.৪৬।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি
স্কোয়াডের পেসাররা উতরে গেলেও স্পিনাররা সুবিধা করতে পারছেন না মোটেও। এখন পর্যন্ত
সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির দৌড়ে সদ্যঘোষিত জাতীয় দলের স্পিনারদের মধ্যে আছেন কেবল মেহেদী
হাসান মিরাজ। তার অবস্থান ১৭ নম্বরে। ৫ ম্যাচ খেলে শিকার করেছেন ৫ উইকেট। ৩ ম্যাচ খেলে
৪ উইকেট পেয়েছেন লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির স্কোয়াডভুক্ত বাঁহাতি
স্পিনার নাসুম আহমেদ ৫ ম্যাচ খেলে শিকার করেছেন ৪ উইকেট। চলতি বিপিএলে দেশীয় স্পিনারদের
মধ্যে ব্যাটারদের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব রেখেছেন অফ স্পিনার শেখ মাহদি হাসান। ৭ ম্যাচে
৯ উইকেট শিকার করেছেন এই অফস্পিনার। গড় ১০.৬৬। ইকোনমিও দুর্দান্ত। মোটে ৬.০০। জাতীয়
দলে জায়গা না পাওয়া আরেক পেসার আবু হায়দার রনিও যথেষ্টই ভোগাচ্ছেন ব্যাটারদের। তাসকিনের
পর আসরের দ্বিতীয় সফল বোলার রনি। ৫ ম্যাচে শিকার করেছেন ১১ উইকেট।
শুধু বিপিএলই
নয়, জাতীয় দলে সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে ঘরোয়া পারফরম্যান্সকে সাধারণত হিসাবের মধ্যে
নেন না আমাদের নির্বাচকরা। আর এতে করে, দুর্দান্ত খেলার পরও উপেক্ষিতই থাকতে হয় অনেককেই।