প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:৫৯ এএম
বাংলাদেশ ক্রিকেটে এক নতুন দৃষ্টান্তই স্থাপন করলেন দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে অসংখ্য কীর্তিই তার জ্বলন্ত প্রমাণ। অনেকেই যেখানে দলে নিজের জায়গা ধরে রাখতে উঠেপড়ে লাগে, সেখানেই অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করলেন ড্যাশিং এই ওপেনার। বাংলাদেশের মাঠের নায়ক তথা ক্রিকেটাররা কোথায় থামতে হবে, এটা জানে নাÑ এই অভিযোগও অনেক পুরোনো। বয়স, ফর্ম হারিয়ে ফেরেন। তাও জাতীয় দল থেকে অবসরে যেতে চান না, এটা ২২ গজীয় বৃত্তের একটা নিয়মিত দৃশ্য। সেখানে সুযোগ পেয়েও জাতীয় দলে খেলার সুযোগ নিলেন না এই ড্যাশিং ওপেনার। বিসিবির অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়ে অটল থাকলেন নিজের সিদ্ধান্তেই।
২০২৩ সালের জুলাইয়ে প্রথম দফায় অবসর নিলেও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে এক দিন পরেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছিলেন তামিম। পরে ২ ওয়ানডে খেললেও নানা নাটকীয়তায় খেলা হয়নি বিশ্বকাপ। এরপর থেকেই জাতীয় দলে ফেরার প্রশ্নে তার কোনো উত্তর মিলছিল না। তবে আসন্ন চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তার ফেরা নিয়ে নির্বাচকদের সঙ্গে আলোচনায় ঘটনা নতুন মোড় নেয়। কিন্তু সেটা আলোচনার টেবিলেই রয়ে গেল। গত শুক্রবার রাতে সামাজিকমাধ্যমে এক পোস্টে তামিম জানিয়ে দেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে আছি অনেকদিন ধরেই। সেই দূরত্ব আর ঘুচবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার অধ্যায় শেষ।’
২০০৭ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা তামিম তার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। তিন ফরম্যাটে বাংলাদেশের হয়ে ৩৮৭ ম্যাচ খেলা তামিম করেছেন ১৫,১৯২ রান, যা দেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এই কিংবদন্তির বিদায়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন তার দীর্ঘদিনের সতীর্থরাও। এমন ঘটনাও যে বাংলাদেশ ক্রিকেটে বিরল। দেশের ক্রিকেটে অবদানের জন্য তামিমকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা। প্রায় কাছাকাছি সময়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হয়েছিল তামিম ও মুশফিকুর রহিমের। পুরোনো স্মৃতি উল্লেখ করে মুশফিক বন্ধুকে শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেছেন, ‘তোমার অবসরকালে আমি জানাতে চাই, তোমার অর্জনগুলো নিয়ে আমি কতটা গর্বিত তামিম। দোস্ত, তুমি বাংলাদেশের ক্রিকেটের একজন অসাধারণ প্রতিনিধি ছিলে এবং বিশ্বমানের একজন ব্যাটার।’
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ শুভকামনা জানিয়ে ক্রিকেটে তামিমের অবদান নিয়ে লিখেছেন, ‘তামিম, দীর্ঘ ও চমৎকার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তোমার অসাধারণ অর্জনগুলোর জন্য অনেক অভিনন্দন। তুমি অনেক কিছু অর্জন করেছ এবং বাংলাদেশের দলের জন্য অসামান্য অবদান রেখেছ। তোমার সঙ্গে খেলতে পারা এবং মাঠের ভেতরে-বাইরে এত স্মৃতি ভাগাভাগি করতে পারা সত্যিই অনেক আনন্দের ছিল। আমি তোমার অবসরজীবনের জন্য শুভকামনা জানাই এবং ভবিষ্যতের সকল কাজে সাফল্য কামনা করি। তোমার রেখে যাওয়া ঐতিহ্য চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
অবসরের ঘোষণা দেওয়ার আগে জাতীয় দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও না অনুরোধ করেছিলেন তামিমকে। তবে অগ্রজ এই ক্রিকেটার শুনেছেন মনের কথা। তার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে শান্ত লিখেছেন, ‘প্রিয় তামিম ভাই আপনার নেওয়া সিদ্ধান্তকে আমি আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই। ২০১৬ সালে আবাহনীর হয়ে প্রথমবার আপনার সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করার থেকে শুরু করে জাতীয় দলে একসঙ্গে খেলার সুযোগ, আপনার কাছ থেকে শিখেছি অসংখ্য কিছু। আপনার ক্রিকেটীয় মেধা, সহ-খেলোয়াড়দের প্রতি আপনার যত্ন ও উদারতা আমাকে বারবার মুগ্ধ করেছে। আপনার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত অবশ্যই আপনাকে ভাবতে হয়েছে এবং সেটিকে আমি শ্রদ্ধা জানাই। তবে ড্রেসিংরুম এবং ২২ গজে আপনার সঙ্গ আমরা ভীষণভাবে মিস করব। আমি গর্বিত যে এমন এক কিংবদন্তি ব্যাটারের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি এবং জাতীয় দলে আপনার সঙ্গে খেলতে পেরেছি।’
জাতীয় দলে তামিমের একসময়ের সতীর্থ ইমরুল কায়েস গণমাধ্যমে বলেন, ‘ও (তামিম) যেদিন প্রথম অবসরের ঘোষণা দেয় আমি হতবাক হয়েছিলাম। হয়তো আবেগী সিদ্ধান্ত ছিল। আমি মনে করি, তামিম ইকবালের বাংলাদেশের ক্রিকেটে দেওয়ার আরও অনেক কিছু ছিল। ও চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত খেললে হয়তো আমাদের দলের জন্য ভালো হতো। কিন্তু এটা ওর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমাদের এখানে কিছু বলার নাই। আমি তার সিদ্ধান্তকে সম্মান করি।’
জাতীয় দলের সাবেক মোহাম্মদ আশরাফুলও তামিমের অবসর নিয়ে কথা বলেছেন খানিক আক্ষেপের সুরে, ‘২০২৩ বিশ্বকাপের পর থেকেই তো সে (তামিম) বাংলাদেশ দলে খেলছে না। ২০০৭ সাল থেকে লম্বা একটা ক্যারিয়ার ছিল তার। বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান টপ অর্ডারে ব্যাটিং করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫-১৬ হাজার রান করেছে, বড় অর্জন। বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটারদের একজন। আমরা আশা করেছিলাম সে ফিরে আসবে কিন্তু সবারই নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে। ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা।’
আকাশছোঁয়া শ্রদ্ধা আর সম্মান নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে গুডবাই জানালেন তামিম। ক্যারিয়ারের অনেক রেকর্ডের পাশাপাশি বাংলাদেশ ক্রিকেটে এটাও যেন নতুন এক রেকর্ড।