প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:০৫ পিএম
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:০৬ পিএম
আপাতত বিপিএলেই চোখ রাখছেন তামিম; ছবি: আ. ই. আলীম
নতুন বছরের ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে মাঠে গড়াবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আসর। এই টুর্নামেন্টে দেশের সর্বকালের সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল খেলবেন কি না তা এখনও ধোঁয়াশায়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদ জানিয়েছিলেন, ধোঁয়াশার সুরাহা করতে তারা তামিমের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তবে বিসিবির কোনো কর্তা কিংবা ফারুক নিজেও তামিমের সঙ্গে এখনও কোনো আলোচনায় বসেননি!
মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগামীকাল সোমবার দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিপিএলে শিরোপা ধরে রাখার অভিযান শুরু করবে ফরচুন বরিশাল। উদ্বোধনী ম্যাচ সামনে রেখে রবিবার বিসিবি একাডেমি মাঠে অনুশীলন করেছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। এরপর সংবাদ সম্মেলনে তামিম জানান, জাতীয় দল নিয়ে এখন কিছু ভাবছেন না। তার মাথায় এখন শুধুই বিপিএল। ড্যাশিং এই ওপেনার বলেন, ‘আমি এই মুহূর্তে বিপিএলের জন্য রেডি হচ্ছি। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিয়ে না আমার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে না আমি কারও সঙ্গে কোনো কথা বলেছি। এই মুহূর্তে জাতীয় দল নিয়ে আমার মাথায় কোনো চিন্তা নেই।’
তামিমের বরিশালে এবার তারকা ক্রিকেটারদের মেলা। দেশসেরা টি-টোয়েন্টি ব্যাটার তাওহীদ হৃদয় আছেন, নাজমুল হোসেন শান্ত, কাইল মেয়ার্স, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম, রিশাদ হোসেন ও শাহিন শাহ আফ্রিদিও এই দলে। এত এত তারকা থাকায় দল সাজাতে হিমশিম খাবেন কি না, এমন প্রশ্ন হেসেই উড়িয়ে দিয়েছেন তামিম। ঘুম হারামের মতো কিছু হবে না বলেই উল্লেখ করলেন, আগের দিনই নাকি সাজিয়ে ফেলেছেন একাদশ। তার ওপেনিং পার্টনার হবেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তামিম বলেন, ‘না না, একদম প্রপারলি আমি জানি কারা খেলবে। আপনাদের একটাই প্রশ্ন, ওই শান্ত আমার সঙ্গেই ওপেন করবে। সো ভয়ের কিছু নেই’।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সহযোগিতায় জাঁকজমকপূর্ণ বিপিএল আয়োজনের কথা জানিয়েছিল বিসিবি। কিন্তু ‘নতুন’ বিপিএলে ‘অন্যরকম’ বলতে এখন পর্যন্ত কনসার্ট ছাড়া আর কিছুই দেখেননি বলেই জানিয়েছেন তামিম। তার মতে, বিপিএলে ‘অন্যরকম’ কিছু করতে হলে কনসার্টের পেছনে টাকা খরচ না করে খেলাটার জন্যই বেশি বিনিয়োগ করা উচিত।
ফরচুন বরিশাল অধিনায়ক বলেছেন, ‘সত্যি বলতে আমি অন্যরকম কিছু দেখি না কনসার্ট ছাড়া। আমার কাছে মনে হয় অন্যরকম বিপিএল যদি আমাদের করতে হয়, আমাদের ক্রিকেটে বিনিয়োগ করতে হবে। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের টুর্নামেন্টে ইনভেস্ট করতে হবে, কনসার্ট বা অন্য কিছুতে নয়।’
বিপিএলে কনসার্ট অবশ্য নতুন কিছু নয়। ২০১২, ২০১৫ ও ২০১৯ বিপিএলের আগেও বিদেশি শিল্পীদের পরিবেশনায় জমকালো কনসার্ট আর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছে। ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত এবারের কনসার্টের সঙ্গে সেগুলোর পার্থক্যÑ সেই তিন বছর কনসার্ট হয়েছিল বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে। এবার হয়েছে শুধুই কনসার্ট, সেটাও টুর্নামেন্ট শুরুর বেশ কয়েকদিন আগে।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামেই ছিল মূল আয়োজন। স্থানীয় শিল্পীদের সঙ্গে যেটাতে মূল আকর্ষণ ছিল ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা পারফরম্যান্স ফি নেওয়া পাকিস্তানের জনপ্রিয় শিল্পী রাহাত ফতেহ আলী খান। দুর্বল সাউন্ড সিস্টেম ছাড়া অনুষ্ঠানটা খারাপ হয়নি একেবারে। আতশবাজির উৎসব, লাইট শোÑ সবই ছিল ভালো।
তবে বিপিএল উপলক্ষে এ ধরনের কনসার্ট আয়োজনের চেয়ে খেলাটার পেছনে টাকা খরচ করাকেই যুক্তিসঙ্গত মনে করেন তামিম, ‘ক্রিকেটে যদি বিনিয়োগ করি, টুর্নামেন্টে যদি বিনিয়োগ করি; তখন আমরা বলতে পারব যে, এটা নতুন বিপিএল। কনসার্ট আগেও হয়েছে, এখনও হয়; দারুণ একটা অনুষ্ঠান হয়েছে যা দেখেছি, তবে আমি ছিলাম না দেশে।’
পরে অবশ্য তিনি বলেছেন, ‘মন্তব্য করাটা একটু তাড়াতাড়ি হয়ে যাচ্ছে, কারণ আমি জানি না কালকে কী আছে আমাদের জন্য। তবে এতটুকু বলতে পারি, কেউ যদি আমার কাছে পরামর্শ চায়, আমি এতটুকু বলব যে, যদি আপনি বিপিএল পরিবর্তন করতে চান; টুর্নামেন্ট ও ক্রিকেটে ইনভেস্ট করুন।’
বিপিএল সামনে রেখে সিলেটে আট দলের অংশগ্রহণে হয়েছে প্রস্তুতিমূলক টুর্নামেন্ট এনসিএল টি-টোয়েন্টি। বিপিএলের আগে এ রকম একটা টুর্নামেন্টকে ভালো উদ্যোগ মনে করেন তামিমও। তবে বলেছেন, ভবিষ্যতে বিসিবির উচিত হবে এই টুর্নামেন্টটা বিপিএলের আরও আগে আয়োজন করা। যাতে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স দেখে ড্রাফটে খেলোয়াড় নিতে পারে। তা ছাড়া বিপিএলের অল্প আগে এতগুলো ম্যাচ খেলে খেলোয়াড়দের ক্লান্ত হয়ে পড়ারও ঝুঁকি থাকে। তাই সফল একটা বিপিএলের জন্য বিসিবি ও খেলোয়াড়Ñ সবারই ভূমিকা দেখেন বরিশাল অধিনায়ক তামিম। ভালোভাবে টুর্নামেন্ট আয়োজনের দায়িত্ব যেমন বিসিবির, তেমনি মাঠে ভালো খেলা উপহার দেওয়ার দায়িত্ব খেলোয়াড়দের। সেটাই মনে করিয়ে দিয়ে তামিম বলেছেন, ‘ক্রিকেটটা কেমন হবে, এটা নির্ভর করে খেলোয়াড়রা কেমন খেলছেÑ তার ওপর। এটায় আয়োজকদের হাতে কিছু থাকে না। তাদের হাতে থাকে সেরা ফ্যাসিলিটিজ দেওয়া, সেরা উইকেট দেওয়া, নিশ্চিত করা সেরা ধারাভাষ্যকার, ক্যামেরা ও টেকনোলজিÑ যেটা অ্যাভেইলেবল, তা পাওয়া। এটা হলো যারা দায়িত্বে বসে আছেন, তাদের কাজ। কিন্তু তারা এটা সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না আসলে খেলা ২০০ রানের নাকি ৬০ রানের হবে। ওটার দায়িত্ব দল ও খেলোয়াড়দেরই নিতে হবে।’