মিরপুরে বিপিএলের উৎসব
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ০১:১১ এএম
চারদিকে চলছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দামামা। আগামীকাল সোমবার ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশাল ও নবাগত দল দুর্বার রাজশাহীর ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠবে ব্যাটে-বলে কুড়ি কুড়ির ১১তম সংস্করণের মাঠের লড়াই। মারকাটারি আসর সামনে রেখে এরই মধ্যে ‘হোম অব ক্রিকেট’খ্যাত মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হয়ে গেছে উৎসবের আমেজ। সব দলও ব্যস্ত সময় পার করছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে। গতকাল শনিবার বিসিবির একাডেমি মাঠে নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছে ফরচুন বরিশাল, সিলেট স্ট্রাইকার্স, ঢাকা ক্যাপিটালস ও দুর্বার রাজশাহী। আর নিজেদের হোম ভেন্যু বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে নিজেদের শানিয়েছে রংপুর রাইডার্সও।
এবারের বিপিএলে ফরচুন বরিশালের হয়ে খেলবেন পাকিস্তানের তারকা পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি। প্রথমবারের মতো বিপিএল খেলতে বাংলাদেশে পা দিয়ে ১২ ঘণ্টার মধ্যেই দলের সঙ্গে প্রথম অনুশীলন করেছেন তিনি। বরিশালের অনুশীলনে অধিনায়ক তামিম ইকবাল, অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমদের সঙ্গে খোশমেজাজেই দেখা যায় আফ্রিদিকে। পরে অনুশীলন শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন ২৪ বছর বয়সি এই পেসার। প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরু ও শেষে বাংলা উচ্চারণে ‘ভালোবাসি’ বলেন শাহিন। বিপিএল খেলতে এসে প্রথম দিন যে বেশ উপভোগ করছেন, সেটিরই যেন টুকরো ছাপ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তার প্রাণোচ্ছ্ল কথোপকথন।
আফ্রিদি বলেন, ‘বাংলাদেশ লিগে খেলার জন্য আমি রোমাঞ্চিত। তামিম ভাই যখন এই দলে খেলার জন্য কল দিলেন, তখন থেকেই আমি রোমাঞ্চিত। গত বছর আন্তর্জাতিক সূচিতে ব্যস্ত ছিলাম। গত ২-৩ বছরই নানা কারণে খেলতে পারিনি। এবার সময় পেয়েছি। আশা করি আমি এখানে ভালো খেলতে পারব।’ যোগ করেন, ‘আমি অনেক বছর ধরে বিপিএল দেখছি। খুব ভালো ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট। এখানে খেলে আমাদের অনেক শেখার আছে। যখন পাকিস্তানের হয়ে ভবিষ্যতে খেলতে আসব, আশা করি এখানে ভালো ক্রিকেট খেলতে পারব। আমি জানি, অনেক পাকিস্তানি এখানে খেলে। আমি প্রথমবার খেলব। দেখা যাক, ক্রিকেট কেমন হয়। এর পর আমি তুলনা করতে পারব।’
প্রথমবার বিপিএল খেলতে এসে অবশ্য টুর্নামেন্টের শেষ পর্যন্ত খেলতে পারবেন না আফ্রিদি। আগামী ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে থাকার কথা তার। তাই বরিশালের হয়ে পাঁচটি ম্যাচ খেলতে পারেন ২৪ বছর বয়সি পেসার। অবশ্য এবারের বিপিএলে এখন অবধি বড় নাম শাহিন, তাকে নিয়ে আগ্রহও অনেক। এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় তারকা হওয়ার অনুভূতি কেমন? এমন প্রশ্নের উত্তরে আফ্রিদি বলেন, ‘সত্যি বলতে আমি কোনো তারকা নই। বাংলাদেশের আরও অনেকে খেলছেন। তামিম খেলছেন। জাতীয় দলের সবাই খেলছেন। আমার জন্য এবং আপনাদের জন্যও নিজেদের ক্রিকেটাররাই তারকা হওয়া উচিত। আমি শুধু একজন ক্রিকেটার হিসেবে আছি এবং দলের জন্য পারফর্ম করতে চেষ্টা করব। দলকে ম্যাচ জেতানোর চেষ্টা করব।’
বাংলাদেশের পেসারদের উন্নতিতে মুগ্ধতার কথাও জানিয়েছেন শাহিন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ফাস্ট বোলিং বিভাগ খুব ভালো। আমি তাসকিনের কথা বলতে পারি। এখন বাংলাদেশের ফাস্ট বোলিংয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তরুণ বোলার (নাহিদ) রানা, সে খুব ভালো বোলিং করেছে। তার গতি আছে, লম্বা বোলার। আমার মতে, ভবিষ্যতের জন্য বাংলাদেশের অনেক ফাস্ট বোলার উঠে আসছে। তাদের যথাযথ দিকনির্দেশনা দিয়ে লাল বলের ক্রিকেট খেলার জন্য তৈরি করতে হবে। কারণ লাল বলের ক্রিকেট খেলেই আপনি বেশি উন্নতি করতে পারবেন।’
এদিকে দুর্বার রাজশাহীর অনুশীলন শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন সবশেষ এনসিএলে ৭ ম্যাচে ১৫৮.৭৬ স্ট্রাইক রেটে ২৮১ রান করা তরুণ ব্যাটার জিশান আলম। পাওয়ার হিটিংয়ের সঙ্গে বড় বড় ছক্কা হাঁকানোয় ইতোমধ্যে নজর কেড়েছেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে বড় বড় ছক্কার রহস্য নিয়ে জিসান বলেন, ‘তেমন কিছুই না। আমি ছোটবেলা থেকে স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলে এসেছি। ছোটবেলায় বাবা আমাকে সেন্টার উইকেটে ব্যাটিং করাত। এজন্য সহজাতভাবে ছক্কা মারি, ওটাকেই বড় বড় ছক্কা বলে সবাই।’ জিসান আলমের পরিবারের দুজন এর আগে খেলেছেন জাতীয় দলে। বাবা জাহাঙ্গীর আলম ও চাচা সোহেল হোসেনের পথে হাঁটতে চান তিনিও। বাবা জাহাঙ্গীর এখন পুরোদস্তুর কোচ। ছোটবেলা থেকে গড়ে তোলা বাবার স্বপ্নপূরণের আশা জিসানের, ‘অবশ্যই (বাবা ও চাচার খেলা) এটা আমার জন্য অনুপ্রেরণা। যেহেতু বাবা-চাচা দুজনই জাতীয় দলে খেলেছেন। আমিও চেষ্টা করব ভালো কিছু করার। যদি কপালে লেখা থাকে, জাতীয় দলে খেলব।’
টি-টোয়েন্টিতে রানের চাহিদা থাকে দর্শকদের। কিন্তু বিপিএলে দেখা যায় উল্টো। খুব একটা রান হয় না বলে সমালোচনাও আছে। এনসিএল টি-টোয়েন্টিতেও শুরুর দিকে রান পেলেও পরে আর তেমন হয়নি। তবে খারাপ উইকেট হলেও মানিয়ে নেওয়ার কথা বলছেন জিসান, ‘উইকেট যেমন হবে, খেলোয়াড় বা ব্যাটার হিসেবে খেলতে হবে। ভালো হোক বা খারাপ, মানিয়ে নিয়ে খেলতে হবে। যদি খারাপ কন্ডিশন থাকে, ওভাবেই মানিয়ে নিয়ে খেলব। ভালো উইকেট থাকলে তো ভালো।’ বিপিএল নিয়ে আশার কথা শুনিয়ে তিনি বলেন, ‘ভালো কিছু করার চেষ্টা করব। এনসিএলটা আমার খুব ভালো গেছে। চেষ্টা করব বিপিএলে যেন এমন একটা মৌসুম কাটাতে পারি।’