প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৪ ২১:২৫ পিএম
প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পরাজয়ে অনেক কথাই বলা হচ্ছিল। যদিও সবকিছু চাপা পড়ে দ্বিতীয় ম্যাচে নাজমুল হোসেন শান্তরা গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয়ের ক্ষণে দাঁড়িয়ে টাইগাররা। অলিখিত ফাইনালের মঞ্চ কেমন হবে, নৈরাশার রাত শেষে সুখকর কোনো বার্তা মিলবে নাকি, আরও একবার হুংকার দিবেন কিনা নাসুম আহমেদরা—এসবের জন্য অবশ্য অপেক্ষা করতে হবে সোমবার রাত পর্যন্ত। তবে সিরিজ জয়ে পাখির চোখ বাংলাদেশ অধিনায়কের।
শারজায় সিরিজের ব্যাটিংয়ে মোটাদাগে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ।
শান্তদের নাস্তানাবুদ করে হাশমতউল্লাহ শহিদিরা। জয় তোলে ৯২ রানের বড় ব্যবধানে। দ্বিতীয়
ম্যাচে ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়ায় লাল সবুজের দল। নাসুম-মিরাজদের স্পিন নৈপুণ্যে ৬৮ রানে
সিরিজে সমতা ফেরায় টাইগার ব্রিগেড। সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ রূপ নিয়েছে অলিখিত ফাইনালে।
এ ম্যাচে জয়ের বিকল্প দেখছেন না শান্ত। ঘাটতি কাটিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে চান অধিনায়ক।
শান্ত বলেন, ‘ফলাফল নিয়ে চিন্তা না করে যদি প্রসেসটা
ফলো করি, একজন আরেকজনকে বিশ্বাস করি, তবে সিরিজ জেতা সম্ভব। আমি ফলাফলে বিশ্বাস করি
না। প্রসেস যদি সঠিক থাকে, খেলোয়াড়রা যদি শতভাগ দেয়, তাহলে আমি খুশি। আমার বিশ্বাস,
সবাই শতভাগ দিলে বেশিরভাগ ম্যাচ জেতা সম্ভব।’
সিরিজের প্রথম ম্যাচে তানজিদ হাসান ও মুশফিকুর রহিমদের
ব্যাটিং অনেক প্রশ্ন জন্ম দেয়। আফগানিস্তানের ছুঁড়ে দেওয়া ২৩৫ রানের লক্ষ্যে নেমে একপর্যায়ে
৩ উইকেটে শান্তরা স্কোরবোর্ডে জমা করে ১২০ রান। সেখান থেকে দলীয় স্কোর থামে ১৪৩ রানে।
অর্থাৎ ২৩ রানে বাংলাদেশ খোয়ায় ৭ উইকেট। আল্লাহ মোহাম্মদ গাজানফারের ‘ক্যারম’ ও ‘গুগলি’র
ফাঁদে হাঁশফাস হওয়া লাল-সবুজ দল দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাভাবিক খেলা উপহার দেয়। টপঅর্ডার-মিডল
ও লোয়ার অর্ডারের ব্যাটাররা দেখে শুনে ব্যাট চালায়। স্বভাবত স্বস্তি ফিরে বাংলাদেশ
শিবিরে। এ ম্যাচেও কিছু ঘাটতি দেখেন বাংলাদেশ দলপতি।
নাজমুল হোসেন বলেন, ‘দ্বিতীয় ম্যাচে আমরা শতভাগ করতে
পেরেছি এমনও না। উন্নতির জায়গা আছে। (জাকের আলীর স্টাম্পিং মিসের ব্যাপারে) ওইটা স্টাম্পিং
আসলে ছিল না। ডাউন দ্য উইকেটে গিয়েছিল। বলটা এত আস্তে গেছে ওখান থেকে স্টাম্পিংয়ের
সময়ও ছিল না। এর আগেই ব্যাটার ফিরে গেছে। এখানে উইকেটকিপারের কোনো ভুল ছিল না। ২-১টা
জায়গা এরকম হতে পারে। তবুও আমার মনে হয় এই জায়গাগুলো যদি ঠিক করতে পারি, তবে আরও আরামে
জিততে পারব। সামনে বড় ম্যাচে এগুলো আমাদের সাহায্য করবে।’
শারজাহর উইকেটের আচরণ, ধারা ও ইতিহাস বলছে— আগে ব্যাট করো এবং ম্যাচ জিতো।
এখানে রাতের বেলায় ২৫০ উর্ধ্ব রান তাড়া করা নিরাপদ বটে। তবে বোলারদের, বিশেষ করে স্পিনারদের
জ্বলে ওঠা জরুরি। দ্বিতীয় ম্যাচে নাসুম বোলিংয়েও জ্বলে ওঠেন তিন উকেট নিয়ে। সঙ্গে অন্য
বোলারদের সংযোগে ফল নিজেদের পক্ষে আনতে পারে বাংলাদেশ। ব্যাটিং নিয়ে খানিক আক্ষেপ থাকলেও
দলের সার্বিক পারফরম্যান্স খুশি করেছে অধিনায়ককে। এই ধারা তৃতীয় ম্যাচেও চান তিনি,
‘মিরাজ ও নাসুম যেভাবে বল করেছে, ওদেরকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। বোলিংয়ে আমরা যেভাবে শুরু
করেছি, নতুন বলে তাসকিন আবারও গুরবাজকে আউট করেছে, সে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান (আফগানিস্তানের
জন্য)। সব মিলিয়ে গোট ব্যাটিং আর বোলিং গ্রুপ ভালো করেছে।’
আফগানদের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলে তারুণ্যের আধিক্য। দ্বিতীয় ম্যাচে পঞ্চপাণ্ডবদের মধ্যে ছিলেন কেবল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। টাইগার অধিনায়কও সিনিয়র খেলোয়াড়দের ওপর নির্ভরশীল না হওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন, ‘আপনি যেটা বললেন সিনিয়র প্লেয়াররা নাই, আস্তে আস্তে আমাদের এখন এই জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কারণ সবসময় তারা খেলবেন না। তারা থাকলে তো ড্রেসিংরুমে ভেতরে বাড়তি সুবিধা হয়ই, অনেক অভিজ্ঞ। তবে এমন না যে তাদের নিয়েই সবসময় খেলতে হবে। এখন আস্তে আস্তে সময় হচ্ছে যে আমরা যারা আছি তারাও দলে অবদান রাখতে পারছি কিনা।'
আঙুলে ব্যথা পেয়ে সিরিজ থেকে ছিটকে পড়েছেন মুশফিকুর রহিম।
দ্বিতীয় ম্যাচে ফিল্ডিংয়ের সময় শান্ত নিজেও অবশ্য চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন। ম্যাচের পর তিনি অবশ্য জানিয়েছেন, এখন ভালো অনুভব
করছেন কিছুটা, তবে ‘কিছুটা’ রয়ে গেছে তখনও। তবে সবশেষ খবর, তৃতীয় ম্যাচে খেলছেন শান্ত।
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে অধিনায়কের উপস্থিতি বাংলাদেশের
বড় পাওয়া। শান্তর স্বস্তি মানেই বাংলাদেশের স্বস্তি, পরিপাটি দলীয় কম্বিনেশন। যেটায়
সবচেয়ে বেশি খুশি করে শান্তকে। যেমনটা তিনি বলেছেন একাধিকবার।