আফগান সিরিজ
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:৩৪ পিএম
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:৩৫ পিএম
আফগান ক্রিকেটারদের উল্লাস, হতাশ হয়ে ফিরছেন মেহেদী হাসান মিরাজ
একটা সময় আফগানিস্তানের স্কোরবোর্ডে ছিল ৭১/৫ আর বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডের চেহারা ছির ১২০/২। এমন ম্যাচে হার ৯২ রানের বিশাল ব্যবধানে। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে হাশমতউল্লাহ শাহিদি ও মোহাম্মদ নবী। আফগানরা পেয়ে যায় ২৩৫ রানের লড়াকু পুঁজি। আর বিপরীতে মাত্র ১১ রানে শেষ ৭ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ ইনিংস গুটিয়ে যায় মোটে ১৪৩ রানে।
বুধবার শারজায় আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ান ডে ম্যাচে টাইগার ব্যাটাররা যা করেছে, তাকে লজ্জার বললেও কম বলা হবে ? এক কথায় তা আশ্চর্য পতন! সহজভাবে শতরান পেরোনোর পর বাংলাদেশের ব্যটাররা কে কার চেয়ে কত খারাপভাবে আউট হতে পারে তার প্রতিযোগিতায় নামেন। ম্যাচ শেষে তাই টাইগার ব্যাটারদের নির্লজ্জ প্রদর্শনীই সবার চোখে ভেসে ওঠে। তবে বিশাল ব্যবধানে হারের জন্য কম দায়ী নয় ভুল কৌশলও।
বাংলাদেশের সাফল্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের বাঁহাতি স্পিনাররা। সাকিব আল হাসান দলে নেই। কিন্তু তার জায়গায় কোনো বাঁহাতি স্পিনার খেলানো হযনি। পেসাররা ব্রেকথ্রু এনে দিলেও বিপক্ষ শিবিরে চাপ ধরে রাখার জন্য বাংলাদেশের সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র বাঁহাতি স্পিন। অথচ নাসুম আহমেদ দলে থাকার পরও তাকে খেলানো হয়নি। অফ স্পিনারদের ওপর বাজি ধরা হয়েছে অন্ধের মতো। ম্যাচে আগুন ঝরানো বোলিং করেছেন দুই টাইগার পেসার তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান। দুজনই নেন চারটি করে উইকেট। কিন্তু এই দুজন আক্রমণ থেকে সরে গেলে চাপ আর ধরে রাখা যায়নি। আরও সহজভাবে বললে, আমাদের দু-অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে এবং লেগস্পিনার রিশাদ হোসেনকে খুবই সাবলীলভাবে খেলেছেন শাহিদি ও নবী। আর তাতে যেখানে দেড়শ রান হওয়ার কথা না, সেখানে আফগানদের স্কোর পৌঁছে যায় ২৩৫ রানে।
বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার ছিল বড্ড বেশি দৃষ্টিকটু। টাইগাররা দ্বিতীয় উইকেট হারাল ৬৫ রানে। এ অবস্থায় ব্যাটিংয়ে প্রমোশন দিয়ে চার নম্বরে পাঠানো হয় মিরাজকে। অথচ ব্যাটিং অর্ডারে মিরাজ খেলে থাকেন ৬/৭ কিংবা ৮ নম্বরে। আফগানদের মূল শক্তি তাদের স্পিনাররা। আর স্পিনের বিপক্ষে দেশের সবচেয়ে প্রমাণিত ব্যাটার মুশফিক। টপ অর্ডার মোটামুটি দায়িত্ব পালন করাতে ম্যাচে খুবই ভালো জায়গাতেই ছিল বাংলাদেশ। এ অবস্থায় ব্যাটিং অর্ডারে এমন রদবদলের কেন প্রয়োজন পড়ল, তার কোনো ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যা হয় না। এ বদল কোনো কাজে আসেনি। মিরাজ ২৮ রানের একটা ইনিংস খেললেও তা ধস ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। লোয়ার মিডল অর্ডারে নেমে নিজেদের সহজাত ব্যাটিং করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিক। আর এতে সামান্য চাপেই বাংলাদেশ ভেঙে পড়েছে হুড়মুড়িয়ে।
আফগানদের কৌশলের কাছে নাজমুল হোসেন শান্তরা কীভাবে ধরাশায়ী হয়েছেন সেটা অনুধাবন করার জন্য একটি দৃষ্টান্তই যথেষ্ট। শান্ত আর মিরাজ জুটি বেঁধে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন জয়ের পথে। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙতে ২৬তম ওভারে ফাঁদ পাতলেন নবী। ডিপ স্কয়ার লেগ ফাঁকা করে দিলেন, ফাইন লেগেও কোনো ফিল্ডার রাখলেন না। শর্ট ফাইন লেগে রাখলেন একজনকে। পরিস্থিতি ও কৌশল না বুঝে সুইপ করতে গেলেন শান্ত। ব্যাটে-বলে হলো না। বাংলাদেশ অধিনায়ক ধরা পড়লেন শর্ট ফাইন লেগে! বলে কয়েই ঠেকিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়কের বিদায়ঘণ্টা বাজালেন নবী।
ম্যাচ শেষে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে না পারার কথা বলেছেন শান্ত। ভুল কৌশল নিয়ে কোনো কিছুই বলেননি টাইগার কাণ্ডারী। তার কথায়, ‘আমি প্রথম ১৫-২০ ওভার ভালো শুরু করেছিলাম। কিন্তু মাঝের ওভারে আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। নবী দারুণ ব্যাটিং করেছে, আমাদের আরও আক্রমণাত্মক হওয়া দরকার ছিল। উইকেট বোলারদের জন্য সহজ ছিল। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আমার উইকেট পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। আমি উইকেটে সেট ছিলাম, বড় ইনিংস খেলার দরকার ছিল। কিন্তু পারিনি। যোগ করেন, আমাদের প্রস্তুতি ভালো ছিল, কিন্তু দিনটি আমাদের ছিল না। আশা করি আমরা ঘুরে দাঁড়াব।’
মাচে একাই ৬ উইকেট শিকার করেন আল্লাহ মোহাম্মদ গাজানফার। এই টিন এজার অফস্পিনারের কৌশলের কোনো জবাব জানা ছিল না টাইগার ব্যাটারদের। চোটের কারণে এই সিরিজে নাই আফগান স্পিন আক্রমণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ মুজিব উর রাহমান। এই অভাব বুঝতেই দেননি টিন এজার স্পিনার গাজানফার। এ নিয়ে শাহিদির ভাষ্য, এটা প্রমাণ করে দেয় আফগান ক্রিকেটের গভীরতার বিষয়টিই। ৭১ রানে ৫ উইকেট পড়ার পরও জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশাসী ছিলেন বলে জানিয়েছেন শাহিদি। তার ভাষায়, ‘সত্যি বলতে কি, আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। ৫ উইকেট পড়ার পরও নবী বেশ ইতিবাচক ছিলেন। তাকে বলছিলাম যে, ২২০ রান করতে পারলেই যথেষ্ট হবে। সেখান থেকে ২৩৬ রানের লক্ষ্য দিতে পারা তো দারুণ ব্যাপার। এরপর বোলাররা নিজেদের কাজ করেছে। সব মিলিয়ে গোটা দলের জন্যই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স।’