× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নারী ফুটবলার

সাফজয়ী স্বপ্না তার ট্রফি ভরে রাখেন ভাঙা বাক্সে

রহিম শুভ, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:১০ পিএম

আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:১৮ পিএম

নারী ফুটবলার স্বপ্না রানী।

নারী ফুটবলার স্বপ্না রানী।

নারীরা কেন ফুটবল খেলবে। ছোট ছোট প্যান্ট পরে কেন তারা হাজার হাজার মানুষের সামনে দৌড়াবে। তাদের কাজ বিয়ে করে সংসার সামলানো, স্বামী-শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করা আর বাচ্চা পালন করা। এইসব নানান কটূক্তি শুনেও দমে যাননি ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলার রাঙ্গাটুঙ্গির নারী ফুটবলাররা। তারা গ্রামের মাঠে ফুটবল খেলে করেছেন জাতীয় দলে জায়গা।

ইতোমধ্যে রাঙ্গাটুঙ্গির ৫ জন নারী ফুটবলারের ঠাঁই হয়েছে জাতীয় দলে। এদের মধ্যে নেপালে সাফজয়ী নারী ফুটবলারের মধ্যে রয়েছেন তিনজন। তারা হলেন- স্বপ্না রানী, কোহাতি কিসকু ও সাগরিকা।


স্বপ্নার বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, মাটির চার দেয়ালের মধ্যে একটি পুরোনো ভাঙা ঘর। সেটি আবার খড়ের বেড়া দিয়ে আটকানো। আঁটোসাঁটো এবং এলোমেলো এ ঘরে থাকা মাঝারি সাইজের একটি টিনের বাক্স থেকে বের করা হচ্ছে ট্রফি, সম্মানা স্মারক, মেডেলসহ একজন চ্যাম্পিয়ন নারী ফুটবল খেলোয়াড়ের যত অর্জন। তারপর সেগুলো বের করে একটি একটি করে টেবিলে সাজানো হচ্ছে ফটোসেশনের জন্য। 

নিজের মেধা ও শ্রম উজাড় করে মাঠে খেলে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের ভাগ্য অনেকটা বদলালেও নিজের ভাগ্য বদলাতে পারেননি ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বপ্না রানী। ভালো একটি ঘরে নিজের অনুপ্রেরণার জন্য হলেও তার এসব অর্জন পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখবেন এমন জায়গাটুকুও নাই তার। এক প্রকার বাক্সবন্দি হয়ে থাকে এই চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়ের যাবতীয় অর্জন। 

জেলার রানীশংকৈল উপজেলার বলিদ্বরা শিয়ালডাঙ্গী গ্রামে এই ফুটবলারের বাসায় গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র। স্বপ্নার বাবা নিরেন বাবু বলেন, মেয়েরা কেন ফুটবল খেলবে। তারা সংসার করবে, বিয়ে দিতে হবে ১৬/১৭ বছরে। আমার মেয়ে যখন ফুটবল খেলা শুরু করে তখন গ্রামের অনেকে এই কথাগুলোই বলেছিল। শুধু মেয়েকে নয়, আমাকেও বলেছিল আমার মেয়েকে নাকি ভাঙা টিভিতে দেখা যাবে। ওসবে কান না দিয়ে মেয়েকে অনুপ্রেরণা দিয়েছি। প্রতিদিন মাঠে ফুটবল খেলার জন্য যেতে বলতাম। সাইকেল কিনে দিছি। এখন গ্রামবাসী আমার মেয়ের সফলতায় আনন্দ উল্লাস করছে। আমাদের মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন মানে আমিও চ্যাম্পিয়ন। আজ সারা দেশ আমাদের মেয়েদের নিয়ে গর্ব করছে। এখনও দেশের ফুটবল অনুন্নত। তাই মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি শঙ্কিত। মানুষ মনে করে এখন আমাদের অনেক টাকা। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মেয়ের অর্জনগুলো সাজিয়ে রাখবÑ এমন একটা আসবাবপত্র নেই। ঘরদোর ঠিক নেই। সরকার যেন ওদের সহযোগিতা করে। যাতে ওরা মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে। সরকার যাতে তাদের একটা নিশ্চিৎ নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ে দিতে ভূমিকা রাখেÑ এটাই আমার চাওয়া। আমি বাংলাদেশ নারী ফুটবলদলকে অভিনন্দন জানাই।

মা সাবিলা রানী বলেন, পাড়া-প্রতিবেশীসহ আত্মীয়স্বজন সবাই কথা শুনাইছে। এখন মেয়ের অর্জনগুলো বাক্সে ভরে রাখতে হয় খারাপ লাগে না। আবার মাঝে মাঝে খারাপ লাগে। তারপরও নিজেকে সান্ত্বনা দেই। আমাদের ভাঙা ঘর, সাজিয়ে রাখার জায়গা নাই। বাইরে যেন নষ্ট না হয় তাই ভিতরে রাখি। এমন জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে একদিন দেশের ফুটবলের অনেক নামডাক হবে। মেয়ের খেলা দেখতে পারিনি। কারণ বাসায় ক্যাবল নেটওয়ার্ক নাই। ছেলে এসে যখন বলল দেশের মেয়েরা আবারও সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, আমি খুব আনন্দিত হয়েছি। খবরটা মুহূর্তে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। এ আনন্দ বলে বুঝাবার মতো না। 

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক দুলার হক বলেন, সরকারের এগিয়ে আসা উচিত। আর্থিকভাবে যেমন শক্তিশালী সহযোগিতা দরকার তেমনি মানসিকভাবেও সহযোগিতা দরকার। পরিবারের অনটনের চাপ মাথায় নিয়ে অনেক সময় অনেক কাজ কঠিন হয়ে যায়। তাই দেশকে যারা গৌরবান্বিত করে তাদের সহযোগিতা করা সরকারের একান্ত দায়িত্ব বলে মনে করি। 

স্থানীয় রাঙ্গাটুঙ্গি প্রমিলা নারী ফুটবল একাডেমি থেকে এসেছেন স্বপ্না রানী। একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা তাজুল ইসলাম বলেন, কত পরিশ্রম আর কতটা যে কষ্ট করতে হইছে তাদের জন্য সেটা একমাত্র আমি জানি। নিজের পকেট থেকে টাকা খরচ করে তাদের খাওয়াইছি। এবং খেলার সব উপকরণ কিনে দিছি। কটূক্তির শিকার হয়েছি। তবুও দমে যাইনি।

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা বলেন, নারী ফুটবলারদের অভিনন্দন। আমরা জেলার নারী সাফজয়ী চ্যাম্পিয়নদের যথাযথ মর্যাদায় সংবর্ধনা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল তাদের কীভাবে সহায়তা করা যায় সে দিকটাও দেখছি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা