প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ২১:২২ পিএম
ওয়ানডে ফরম্যাট দিয়ে জয়ের পথ খুঁজছেন শান্তরা— সংগৃহীত ছবি
খেলোয়াড় থেকে অধিনায়ক, কোচ কিংবা টিম ম্যানেজমেন্ট পর্যায়ে প্রায়ই শোনা যায় কথাটি— ‘ওয়ানডে বলেই আমরা বেশি আত্মবিশ্বাসী।’ শক্তি-সামর্থ্যে প্রতিপক্ষ এগিয়ে থাকলেও আশার জায়গা ঠিক ওখানেই, ‘পঞ্চাশ ওভারের ফরম্যাটে মানিয়ে নিতে পারে টাইগাররা।’ জয়টাও তাই গত কয়েক বছরে এই ফরম্যাটেই বেশি। হার দিয়ে শুরু হয় নাজমুল হোসেন শান্তদের ২০২৪ সাল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে হারের পর মাঝের ১১ মাস অম্ল-মধুর কেটেছে টাইগারদের।
শান্তদের পারফরম্যান্সে টক-মিষ্টি স্মৃতিতে এখন অবধি টকটাই বেশি। বছরের শুরুতে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারের পর আরও ৮টির ৫টিতে হেরেছে বাংলাদেশ। এর মাঝে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ছিল লজ্জাজনক ব্যর্থতা। পাকিস্তানের মাটিতে দাপট দেখিয়ে জিতে আসা টাইগাররাও হারিয়ে বসেছেন জয়ের ছন্দ। সবশেষ সাতটি ম্যাচের একটিতেও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এর মাঝে চারটি টেস্ট ম্যাচের লড়াই পাঁচ দিনেই নিতে পারেনি শান্ত ব্রিগেড।
তেতোতে ঢেকে যাওয়া বছরে মিষ্টি স্বাদ এসেছিল ওয়ানডেতেই। বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কাকে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার সেই ফরম্যাটেই ফেরার পথ খুঁজছে তারা। দেশ ছাড়ার আগে গত দুই দিনে টাইগারদের প্রায় সবাই ওই একটি কথাই শুনিয়েছেন, ‘যা গেছে তা ভুলে নিজেদের শক্তির ফরম্যাটে ভালো করতে চাই। আফগানদের বিপক্ষে সিরিজ জিততে চাই।’
আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডে ম্যাচের সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। পাকিস্তানে বসতে যাওয়া চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মহড়াও বলা যেতে পারে এটি। টি-টোয়েন্টি ও টেস্টের বছরে চলতি মাসে এক সপ্তাহের মাঝেই তিনটি পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচ। সব ম্যাচই হবে শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের এই মাঠটি আবার আফগানদের পয়া ভেন্যু। এখানে তারা কদিন আগেই নাকের জলে চোখের জলে করেছে পূর্ণ শক্তির দক্ষিণ আফ্রিকাকে। যে প্রোটিয়াদের কাছে কদিন আগে টেস্টে লেজেগোবরে হয়েছে বাংলাদেশ।
তবে শান্তদের সম্ভাবনার পারদ চেপেছে ফরম্যাটটি পঞ্চাশ ওভারের বলেই। আফগানিস্তানের স্পিনার, পেসার ও ব্যাটারদের ছাড়াও মাঠটি নিয়ে আলাদা করে পড়তে হবে টাইগারদের। মরুর দেশের এই মাঠ যাদের দুহাত ভরে দেয়, তাদের বিপক্ষে যে লড়াই। শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সবশেষ পাঁচ ওয়ানডেতে চারটিতেই জিতেছে আফগানিস্তান। এখানে ২৮টি ওয়ানডে খেলে জিতেছে ২১টিতে। এ সময়ে রশিদ-নবীরা পরাস্ত করেছেন আয়ারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, কানাডা ও প্রোটিয়াদের। টি-টোয়েন্টিতে দাপুটে থাকা আফগানরা ওয়ানডেতেও দুর্দান্ত করছেন। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলতে যাওয়া দলটিও এই সিরিজটিকে দিচ্ছে বাড়তি গুরুত্ব। বাংলাদেশের সামনে তাই একটু কঠিন চ্যালেঞ্জই।
তা ছাড়া চলতি বছরটিও এখন পর্যন্ত ভালো যায়নি শান্তদের। টেস্টে সব মিলিয়ে ৮ ম্যাচে দুটিতে জিততে পেরেছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে পরিসংখ্যান আরও নাজুক। চারটি টি-টোয়েন্টি সিরিজের তিনটিতে হেরেছেন শান্তরা। টি-টোয়েন্টিতে ১২ ম্যাচে মোটে ৯টি জিতেছেন টাইগাররা। তার মাঝে চারটি আবার ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সব মিলিয়ে জয়-পরাজয়ের খেরোখাতাটি ওয়ানডেতেই ভালো। চট্টগ্রামে বছরের মার্চ মাসে তিনটি ওয়ানডে সিরিজের দুটিতে জিতেছিল বাংলাদেশ। এবার সেই ফরম্যাটে জয়ে ফেরার পালা।
আগামী ৬ নভেম্বর প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে দুই দলের মাঠের লড়াই। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ৯ নভেম্বর। তিন ম্যাচ সিরিজের শেষটি মাঠে গড়াবে ১১ নভেম্বর। এই সিরিজে শান্তই থাকছেন নেতৃত্বে। তার ডেপুটি হিসেবে থাকবেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আফগান সিরিজে দল থেকে বাদ পড়েছেন লিটন দাস। দলে নেই সাকিব আল হাসানও। এক বছর পর ফিরেছেন নাসুম আহমেদ আর সৌম্য সরকার পেয়েছেন ফেরার সুযোগ। প্রথমবারের মতো ওয়ানডে দলে জায়গা পেয়েছেন পেসার নাহিদ রানা। আফগানদের বিপক্ষে আছেন অভিজ্ঞ মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। সপ্তাহ দুয়েক আগেই দল ঘোষণা করেছে আফগানিস্তান। অভিজ্ঞ-তরুণের মিশেলে দলটি দারুণ ভারসাম্য পূর্ণ।
জয়ের ধারায় থাকা আফগানদের থামাতে তাই বাড়তি পরিকল্পনা করতে হবে শান্তদের। মাঠটাও প্রতিপক্ষের নখদর্পণে। সবশেষ সময়টাও বাংলাদেশের পক্ষে নেই। মরুর দেশে পছন্দের ফরম্যাটে শান্তদের ফেরা এখন কতটা মসৃণ হয়— সেটাই দেখার পালা।
তারিখ ম্যাচ ভেন্যু সময়
৬ নভেম্বর প্রথম ওয়ানডে শারজাহ বিকাল ৪টা
৯ নভেম্বর দ্বিতীয় ওয়ানডে শারজাহ বিকাল ৪টা
১১ নভেম্বর তৃতীয় ওয়ানডে শারজাহ বিকাল ৪টা