প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:১৪ পিএম
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জিতে গেল বৃহস্পতিবার দেশে আসেন সাবিনা খাতুনরা। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) থেকে সেদিনই তাদের দেওয়া হয় ছাদখোলা বাসে সংবর্ধনা। খুশির রেশ এখনও কাটেনি চ্যাম্পিয়নদের। শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সাফজয়ীদের সংবর্ধনা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যেখানে সাবিনাদের দাবি, ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে বাফুফে ভবনের সামনে সাংবাদিকদের এদিন সঙ্গে কথা বলেছেন অধিনায়ক সাবিনা, কোচ পিটার জেমস বাটলার ও দলের ম্যানেজার মাহমুদা আক্তার অনন্যা। খেলোয়াড়দের প্রতিনিধি হয়ে সাবিনার কাছে জানতে চাওয়া হয় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গিয়ে মেয়েদের অনুভূতি কেমন। সাবিনার উত্তর, ‘এরকম গুণিজনের কাছ থেকে সংবর্ধনা পেতে তো ভালোই লাগে। গতবারের চেয়ে এবার চাওয়া খুব বেশি ছিল না। কেবল আবাসনের একটি চাওয়া আমাদের।’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কে কী কথা বলেছেন এবং কী কী নিয়ে আলোচনা হলো সেই বিষয়ে সাবিনা বলেন, ‘স্যার (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) আমাদের সবার কথা শুনতে চেয়েছেন। কারও কোনো চাওয়া আছে কি না, সমস্যা আছে কি না; তো মোটামুটি সবার পক্ষ থেকে একটা জিনিসই ছিল… ইতোমধ্যে আপনারাও জেনেছেন যে, আমাদের ঢাকায় একটা আবাসনের ব্যবস্থা হলে ভালো হয়। যেহেতু মেয়েদের পরিবারের লোকজন ঢাকায় আসে, এসে তাদের হোটেলে থাকতে হয়, আবার সেই হোটেলের খরচটাও বহন করা মেয়েদের জন্য কঠিন হয়। কারণ মেয়েরা তো সারা বছর ক্যাম্পে থাকে। তো একটা থাকার জায়গা যদি ব্যবস্থা করে দেন, সেটাই মূলত বলেছি এবং যার যার অঞ্চলে ছোটখাটো যে সমস্যা আছে, যেমন রাস্তাঘাট… মনিকা যেমন বলেছে ওদের এলাকায় রাস্তাঘাট এবং বিদ্যুতের সমস্যা আছে। তো উনি বলেছেন যে, সব সমস্যা ওনার কাছে নোট করে, যার যার নিজস্ব সমস্যাগুলো ওনাকে লিখে জানাতে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকেও জানা যায় যে, মেয়েদের সমস্যাগুলোর ব্যাপারে লিখে পাঠাতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ নিয়ে সাবিনা বলেন, ‘ক্রীড়া উপদেষ্টার (আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া) কাছে এটা আমরা পাঠাব। উনি ইতোমধ্যে আমাদের যোগাযোগের নাম্বার রেখেছেন। বলেছেন ওনার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাদের চাওয়াগুলো লিখিত আকারে পাঠাতে।’ লিখিত চাওয়াতে কী থাকবে কিংবা কী আপনাদের চাওয়া- সে বিষয়ে সাবিনা এখনও সেভাবে ঠিক করেননি বলে জানান। তবে নিজেদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে জানাবেন বলে জানা গেছে। তার মধ্যে আসতে পারে অনুশীলনের বিষয়টি।
প্রায় প্রতিদিন সকালে মতিঝিলস্থ বাফুফে ভবন থেকে কিংস অ্যারেনায় গিয়ে অনুশীলন করতে হয় মেয়েদের। এতটা পথ দূরে গিয়ে অনুশীলন করতে যে সমস্যা হয় সেটিই প্রধান উপদেষ্টার কাছে জানিয়েছেন। মেয়েরা এর আগে অনুশীলন করতেন মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের টার্ফে। সেটির অবস্থাও ততটা উন্নত নয় এবং কিছু সংস্কারের বিষয় আছে। সেসব বিবেচনায় সাবিনার চাওয়াটা যে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের প্রস্তুতকরণ। কারণ কয়েক বছর ধরেই ফুটবলের হোম অব গ্রাউন্ড অনেকটা অবহেলায় পড়ে আছে। সেটি ঠিক করা হলে যেমন উপকৃত হবে নারী ফুটবলাররা, তেমনি পুরুষ ফুটবলাররাও। সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে সাবিনা বলেন, ‘আমরা বলেছি যে আমাদের বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামটা এখনও প্রস্তুত হয়নি এবং জাতীয় দলের প্র্যাকটিসের জন্য যেতে হয় বসুন্ধরাতে। মতিঝিল থেকে যাওয়া কঠিন হয়ে যায় আমাদের জন্য। আমাদের কমলাপুরে (মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম) যে টার্ফ আছে, সেটার সংস্কারের একটা ব্যাপার আছে। আমাদের বর্তমান যে কমিটি আছে তাদের যেন সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়। আমাদের প্রীতি ম্যাচগুলো নিয়ে যে টাকার সমস্যা থাকে সেদিকে যেন একটু নজর দেন। মেয়েদের ও পুরুষ ফুটবলের উন্নতি যে কাজ করা হয় সে বিষয়ে বলেছি।’
সবশেষে সাবিনার কাছে নির্দিষ্ট করে সাংবাদিকরা জানতে চান ফ্ল্যাট বা জমি দেওয়ার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা কী বলেছেন। সাবিনা তার উত্তরে বলেন, ‘স্যার বলছেন যে, উনি সবকিছু দেখবেন। যে যে বিষয়গুলো সমাধান করা যায় ওনাদের পক্ষ থেকে চেষ্টা করবেন।’ এর আগে ২০২২ সালে যখন মেয়েরা প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় সেবারও অনেকের কাছ থেকে অনেক আশ্বাস পেয়েছিল চ্যাম্পিয়ন টিম। তার কতটুকু পূরণ হয়েছে সে বিষয়ে নতুন করে বলার নেই। এবার কী পূরণ হবে? মেয়েরা কি আশা রাখতে পারবে? সাবিনার ভাষ্য, ‘যেহেতু নতুন কমিটি এসেছে, সবকিছু নতুন, বাংলাদেশও নতুন; আমি আশা রাখছি যে অবশ্যই আমাদের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আমাদের দিকে সুনজর রাখবেন।