প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:৫৮ পিএম
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:০৪ পিএম
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সাফজয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে সংবর্ধনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস; ছবি: সংগৃহীত
সাফজয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে সংবর্ধনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ শনিবার (২ নভেম্বর) বেলা ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানে সকালের নাশতায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে নিজেদের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন নারী ফুটবলাররা। সেসব সমস্যার কথা শুনে প্রধান উপদেষ্টা ব্যক্তিগতভাবে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। এজন্য ফুটবলারদের সমস্যাগুলো লিখিতভাবে জমা দিতে বলেছেন তিনি।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নারী ফুটবলারদের আলোচনার বিস্তারিত জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ভূঁইয়া সজীব। সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন, এখন থেকে কমিটির সদস্য নয়, গুরুত্ব পাবেন খেলোয়াড়েরা।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা সাফজয়ী নারী ফুটবল দলকে সকালের নাশতায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। স্যার খুব ধৈর্যসহকারে নারী ফুটবল দলের প্রত্যেকের কথা শুনেছেন। তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনেছেন, সেগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত লিখিত দেওয়ার জন্য বলেছেন। নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়েরা প্রত্যেকে সাইন করা জার্সি ও ফুটবল প্রধান উপদেষ্টাকে উপহার দিয়েছেন। তাদের সমস্যার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেগুলো সমাধানের জন্য স্যার ব্যক্তিগতভাবে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।’
ক্রীড়া উপদেষ্টা যোগ করেন, ‘আবাসন সমস্যা, অনুশীলন, স্যালারি, বেতন কাঠামো সবকিছু নিয়ে কথা হয়েছে। খুবই খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। এখানে সব বিষয় এসেছে। এই সবগুলো বিষয় আমরা দেখব, সে জন্য উনারদেরকে নির্দিষ্টভাবে দুই-তিন দিনের মধ্যে লিখিত দিতে বলা হয়েছে, সরাসরি সেটা আমি স্যারকে পৌঁছে দেব। নারী ফুটবলাররা জানিয়েছে ওনাদের ক্যাম্প সারা বছর চলার কারণে এমন সাফল্য এসেছে। এটাকে সারা বছর যেন রাখা যায়, সেই আবদার তারা জানিয়েছে। সবগুলো দাবি লিখিত দিলে সহজে চিহ্নিত করতে পারব।’
নারী ফুটবলারদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার বার্তা কী ছিল, এমন প্রশ্নে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা সবকিছু লিখিত আকারে চেয়েছেন। সবাই ব্যক্তিগতভাবে সেটা দেবেন। তিনি খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করেছেন, যেন বিজয়ের এই ধারা অব্যাহত থাকে।’
খেলোয়াড় ও প্রধান কোচ মিলিয়ে প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন ২৫ জন। সেখানে সহকারী কোচ ও গোলরক্ষকদের কোচ ছিলেন না। এই প্রসঙ্গে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেছেন, ‘বাফুফের প্রেসিডেন্ট দেশে ছিলেন না। যে কারণে নেই। আমার কাছে যে ২৫ জনের তালিকা এসেছে, আমরা তাদের এখানে আনার ব্যবস্থা করেছি। সহকারী কোচ ও গোলরক্ষক কোচের নাম ছিল না।’
খেলোয়াড়দের ফ্ল্যাট দেওয়ার বিষয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেছেন, ‘ফ্ল্যাটের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। স্যারকেও উনারা কিছু জানাননি। লিখিতভাবে দেওয়ার সময় সেখানে কিছু থাকলে দেখব। আমাদের দেশের সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। বাইরে থেকে দেখা যায়, ক্রিকেট দলের অনেক পিআর আছে, তারপরও তাদের কিন্তু অনেক ছোট ছোট সমস্যা আছে। খেলাধুলার স্টেকহোল্ডার হচ্ছে খেলোয়াড়েরা, তারাই গুরুত্ব পাবে। এত দিন পর্যন্ত গুরুত্ব পেতেন কমিটির সদস্যরা, সেটার আর হবে না, এটা অন্তত আমার সময়ে আমি নিশ্চিত করব।’
এদিকে প্রধান উপদেষ্টাকে ঢাকায় আবাসন ব্যবস্থার কথা বলেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। সাক্ষাৎ শেষে বাফুফে ভবনে ফিরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবারের অনেকে ঢাকায় আসে, কিন্তু তাদের থাকার জায়গা থাকে না। তাই প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেছি আমাদের পরিবারের জন্য একটি আবাসন ব্যবস্থার।’
ঢাকায় আবাসন ব্যবস্থার পাশাপাশি অনেক ফুটবলারের নিজ জেলার আবাসনও খুব নাজুক। অনেকের ঘর ভাঙা আবার অনেকের বাড়ির পথ দুর্গম। পাহাড়ি এলাকায় অনেকের বাড়িতে নেই বিদ্যুৎ–ও। ব্যক্তিগত সমস্যাও প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরেছেন ফুটবলাররা। সাবিনা বলেন, ‘মারিয়া, কৃষ্ণা, মনিকা, মাসুরাসহ অনেকেই ব্যক্তিগত সমস্যার কথা বলেছে। যেমন মনিকার বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা খারাপ এবং সেই এলাকার বিদ্যুৎ সমস্যা।’
ব্যক্তিগত ও কমন চাহিদার পাশাপাশি ফুটবলের কিছু বিষয় নিয়েও আলাপ করেছেন নারী ফুটবলাররা। ফুটবলের প্রধান ভেন্যু বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম এখনও সংস্কারাধীন। বাফুফে ভবনের পাশে টার্ফ ও কমলাপুর স্টেডিয়ামের টার্ফও অকেজো প্রায়। তাই নারীদের খুব ভোরে মতিঝিল থেকে বসুন্ধরায় যেতে হয়। নারী ফুটবলারদের অভাব-অভিযোগ মনোযোগ সহকারে শুনে লিখিত আকারে দিতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা, ‘তিনি আমাদের প্রতিটি বিষয় মনোযোগ দিয়ে জেনেছেন। সবগুলো লিখিত দিতে বলেছেন এবং সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা ক্রীড়া উপদেষ্টার মাধ্যমে এই চিঠি দেব।’
নারী ফুটবলারদের সবচেয়ে বড় সমস্যা প্রীতি ম্যাচ খেলার সুযোগ কম পাওয়া। আর্থিক কারণে বাফুফে ম্যাচ আয়োজন করতে পারে না। তাই সরকারকে বাফুফের সহায়তা করার কথাও বলেছেন নারী ফুটবলাররা, ‘আমাদের মূলত দেখভাল করবে ফেডারেশন। নতুন সভাপতি তাবিথ (আউয়াল) স্যারকে আমাদের প্রয়োজনীয় সমস্যার কথা বলব। সামগ্রিকভাবে নারী ও পুরুষ উভয় ফুটবল দলের জন্য সরকারের সহায়তা চেয়েছি।’
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল সরকার প্রধানের কাছ থেকে এর আগেও কয়েকবার সংবর্ধনা পেয়েছে। সেই সংবর্ধনাগুলো ছিল প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় অথবা গণভবনে। এবার সংবর্ধনাস্থল প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা। নতুন সংবর্ধনাস্থল সম্পর্কে অধিনায়ক বলেন, ‘গুণী মানুষদের কাছে যেতে পেরে ভালোই লাগে।’