নারী সাফ চ্যাম্পিনশিপ
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৪ ২২:১৩ পিএম
সাফে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। ছবি: বাফুফে
সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে আবারও শ্রেষ্ঠত্ব দেখাল বাংলাদেশ। বছর দুয়েক আগে দশরথে যাদের হারিয়ে এশিয়ার ‘নারী বিশ্বকাপ’ খ্যাত সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ নন্দিনীরা, সেই একই প্রতিপক্ষ নেপালকে আবারও শিকার বানালেন সাবিনা খাতুনরা। ফাইনালে ২-১ গোলে জিতেছে বাংলাদেশ। শুরুতে মনিকা চাকমার গোল। এরপর আমিশা কার্কি সমতা ফেরান নেপালকে। তবে শেষদিকে পাশার দান উল্টে দেন ঋতুপর্ণা চাকমা। ম্যাচ ও টুর্নামেন্ট সেরা এই মিডফিল্ডারের কৃতিত্বে টানা দ্বিতীয়বার সাফ জয়ের স্বাদ পায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
আজ বুধবার রঙ্গশালায় নীলের
ঢেউ নামিয়েছিল নেপালি দর্শকরা। ২৫ হাজার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন স্টেডিয়ামে বেশিরভাগ সমর্থক
গলা ফাটিয়েছে স্বাগতিকদের পক্ষে। কন্ডিশন-মাঠ এসবেও যে অতিথিদের ওপর প্রভাব পড়ে, তা
কিছুটা আঁচ করা গেছে। ম্যাচের মাঝপথে খেই হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত এসব
উবে গেছে, হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো মিলিয়ে গেছে ঋতুপর্ণা চাকমার পায়ের জাদুতে। টিম স্পিরিট,
শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার অদম্য মানসিকতা, চোখে চোখ রেখে লড়াই, তার চেয়েও বড় কথা, ম্যাচের
আগের দিনে সাবিনা খাতুনের সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী বক্তব্য জাদুর মতো প্রভাব ফেলে দলে।
নিজেদের সীমাবদ্ধতা জানালেও
নিজেদের মাঠে যে প্রতিপক্ষরাই চাপে থাকবেÑ ফাইনালের আগের দিন এমনটাই জানিয়েছিলেন সাবিনা।
দশরথে মঞ্চায়ন হয়েছে সেই দৃশ্যপট। নিজেদের মাঠে একপ্রকার চাপে পড়ে আঞ্জিলা তুম্বাপো
সুব্বারা। পিছিয়ে পড়ার ভয় কাটিয়ে উঠলেও ইলেভেন্থ আওয়ারের স্নায়ুচাপ ধরে রাখতে পারেনি
তারা। অন্যদিকে টুর্নামেন্টের শুরুতে হারতে হারতে ড্র করা বাংলাদেশ দেখিয়েছে আত্মবিশ্বাস।
সাফে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল
পাকিস্তানের বিপক্ষে। গ্রুপের ম্যাচে পাকিস্তানের সঙ্গে কোনোমতে ১-১ গোলে ড্র করেছিল
সাবিনারা। গত আসরে যাদের ৬-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল, এবার তাদের কাছেই দোরগোড়ায় হোঁচটের
শঙ্কায় পড়ে। যদিও শেষ রক্ষা হয় শামসুন্নাহার জুনিয়রের বদৌলতে। আহত বাঘেরা যেভাবে ঘুরে
দাঁড়ায়Ñ সাফে বাংলাদেশের গল্পটা সেরকমই। প্রতিবেশী ভারতকে ৩-১ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন
হয় তারা। শেষ চারের খেলায় ভুটানের ওপর ছড়ি ঘুরায় তারা। আর সবশেষ থাবা বসে স্বাগতিকদের
পিঠে।
লক্ষ্যণীয় যে, সাফের চার ম্যাচের
বাংলাদেশে ত্রাতা এবং জয়ের নায়ক ছিলেন একেকজন। প্রথমে শামসুন্নাহার যেমনই হয়েছিলেন
রক্ষাকর্তা। দ্বিতীয় ম্যাচের নায়ক তহুরা খাতুন। দুই গোল করেছিলেন কলসিন্দুরের এই তারকা
ফরোয়ার্ড। সেমিফাইনালে নিজেকে ছাড়িয়ে যান। হ্যাটট্রিক করেন ভুটানকে ৭-১ গোলে বিধ্বস্তের
দিনে। অবশ্য ওই ম্যাচে অধিনায়ক সাবিনার পা থেকে এসেছে দুই গোল। একটি করে গোল করেন ঋতুপর্ণা
ও মাসুরা পারভিন। ফাইনাল মঞ্চের প্রথম গোলটিও আসে ২১ বর্ষী তহুরার অ্যাসিস্টে। গোলশূন্য
প্রথমার্ধে পেরোনো ম্যাচ ডেডলক ভাঙেন মনিকা চাকমা। এদিন অবশ্য কিছুটা হলেও নিচের ছায়ায়
ছিলেন তহুরা-সাবিনা। শেষদিকে তাকে তুলে স্বপ্ন রানীকে নামা কোচ পিটার বাটলার। আর স্বাগতিকদের
কফিনে শেষ পেরেক ঠোকেন ঋতুপর্ণা চাকমা।
শুরু থেকে শেষের গল্পÑ বিতর্কের
মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরও দেশের মেয়েদের এমন পারফরম্যান্স আর আত্মবিশ্বাসের রহস্য কী? এর
জন্য সহস্র যুক্তি আর ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যেতে পারে। সাবিনার উত্তরই হবে যুক্তসংগত।
নেপাল জয়ের মূলে ‘একতা’, ‘ঐক্য’ আর ‘সমর্থন’ যে বড় নিয়ামক হয়ে স্বস্তি ফিরিয়েছে তার
প্রমাণ মিলেছে শেষ দিনও। পুরস্কার মঞ্চে দাঁড়িয়ে যেটা বলে গেছেন ঋতুপর্ণাও, ‘দ্বিতীয়বারের
মতো সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আমার পরিবার অনেক সাপোর্ট করেছে। বাংলাদেশের মানুষের কাছে
কৃতজ্ঞতা জানাই। উনাদের সমর্থনের কারণেই আমরা এতদূর এসেছি।’