নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ
রুবেল রেহান
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৪ ১১:২০ এএম
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৪ ১১:২২ এএম
আবারও শিরোপা জয়ের আনন্দে ভাসার হাতছানি। ছবি : বাফুফে
একটা সময় ছিল যখন নারীদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপকে বলা হতো ভারতের ‘অলিখিত সম্পত্তি’। তাতে ভাগ বসানোর চেষ্টা চালাত নেপাল। কিন্তু হিমালয়কন্যাদের বারবার কাঁদিয়ে ট্রফি ঘরে তুলে নিত ভারত। দৃশ্যপটে আসে পরিবর্তন; ২০১৬ থেকে সাফের ছকে বাঁধা এই দ্বৈরথ ছাপিয়ে বড় নাম হয়ে উঠে আসে বাংলাদেশ। সেবার ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে হারলেও ২০২২ সালে এসে দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপখ্যাত এই আসরে ওড়ে লাল-সবুজের পতাকা। অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েই বীরের বেশে দেশে ফেরে গোলাম রাব্বানী ছোটনের শিষ্যরা। তখন থেকে এই প্রতিযোগিতায় এখন পর্যন্ত অজেয় বাংলাদেশের মেয়েরা। আরও একবার ট্রফি ছোঁয়ার স্বপ্নিল হাতছানির সঙ্গে মিশে আছে পরপর দুই আসরে অজেয় থাকার রোমাঞ্চও।
এবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে আজ বুধবার বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক নেপাল। দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। সরাসরি দেখা যাবে ইউটিউব লাইভে। সাফে এটি সপ্তম আসর। যার মধ্যে প্রথম পাঁচটিতেই একক আধিপত্য ছিল ভারতের। ওই পাঁচবারের মধ্যে তারা চারবার নেপালকে ও একবার বাংলাদেশকে পরাস্ত করেছে। ছয় আসরের পাঁচটিতে ফাইনালে উঠলেও প্রতিবারই স্বপ্নভঙ্গ হয় নেপালি মেয়েদের। গত আসরের ফাইনালে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা জেতে বাংলাদেশ।
এবারও ফাইনালে নেপালের সামনে লাল-সবুজের দল। ছয়বার শিরোপা হাতছাড়া করার ক্ষতে প্রলেপ দিতে বাংলাদেশকে হারাতে মরিয়া নেপাল। কিন্তু সেটি যে মোটেও সহজ কাজ হবে না তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফাইনালের যাত্রায় এবারও অপরাজিত বাংলাদেশ। শুরু থেকেই শিরোপা ধরে রাখার লক্ষ্য কোচ জেমস পিটার বাটলারের শিষ্যদের। গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্রয়ের পর ভারতকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে শেষ চারে ওঠে বাংলাদেশের মেয়েরা। এরপর ফাইনালে ওঠার ম্যাচে ভুটানকে বিধ্বস্ত করে ৭-১ গোলে। সব মিলিয়ে ২০২২-এর সাফ থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের মেয়েরা অপরাজিত রয়েছে টানা ৮ ম্যাচে। ফাইনালে আরেকটি জয়ের মাধ্যমে সাফে জোড়া শিরোপাজয়ের স্বপ্ন পূরণের শেষ ধাপে রয়েছে সাবিনা ব্রিগেড।
ফাইনালে জেতার কাজটা কিন্তু খুব সহজ নয় বাংলাদেশের জন্যও। মেয়েদের সিনিয়র ফুটবলে হেড টু হেড মোকাবিলায় এগিয়ে নেপাল। ১১ বারের সাক্ষাতে নেপালের ৫ জয়ের বিপরীতে বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র একবার। বাকি পাঁচবার হয়েছে ড্র। তা ছাড়া এবার ঘরের মাঠে প্রবল দাপট দেখিয়েই শিরোপার মঞ্চে উঠে এসেছে নেপালি মেয়েরা। সেমিফাইনালে মাথা গরমের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করে পেনাল্টি শুটে ৪-২ ব্যবধানে জেতে তারা। ওই ম্যাচের কারিগর সাবিত্রা ভান্ডারি সাম্বাকে নিয়ে আলাদা ছক কষতে হবে বাংলাদেশকে। ইউরোপিয়া ক্লাব ফুটবলে খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই ফরোয়ার্ড ভারতকে হারিয়ে হুঙ্কার দিয়ে রেখেছেন বাংলাদেশকে দেখে নেওয়ার। ফলে তাকে আটকাতে বাড়তি ঘাম ঝরাতে হবে ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীন, আফঈদা খন্দকারদের। অবশ্য বাংলাদেশের দুই ডিফেন্ডারই টুর্নামেন্টে রয়েছেন দারুণ ছন্দে। জাতীয় দলের জার্সিতে এই আসরেই প্রথম গোলের দেখা পেয়েছেন দীর্ঘাঙ্গী আফঈদা। গোল পেয়েছেন মাসুরাও। যে কারণে আত্মবিশ্বাসী হয়েই ফাইনালে মাঠে নামবেন তারা। তাছাড়া ডিফেন্সে সুযোগ পেলেই আলো ছড়িয়েছেন শিউলি আজিম, কোহাতি কিসকুরা।
ফাইনালের আগে বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির খবর হতে পারে নেপালের ফরোয়ার্ড রেখা পোডেলের না থাকা। ভারতের বিপক্ষে শেষ চারের ম্যাচে লাল কার্ড দেখেন ২৩ বছর বয়সি এই তুখোড় খেলোয়াড়। এবারের আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাত গোল করা রেখার না থাকাটা তাই বাংলাদেশকে কিছুটা এগিয়ে রাখতেই পারে। বাংলাদেশের স্কোয়াডে ফিটনেস নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। যে কারণে একাদশ সাজাতে বেগ পেতে হবে না পিটার বাটলারকে। এখন অপেক্ষা কেবল নিজেদের সেরাটা তুলে ধরে দেশকে আরেকবার বিজয়ানন্দে ভাসিয়ে দেওয়ার।