প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ২১:৫৩ পিএম
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ২২:০৯ পিএম
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ যতগুলো টেস্ট হেরেছেÑ সব ক্ষেত্রেই দায়টা ছিল ব্যাটারদের। চলতি বছর ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই টেস্ট, ভারতে দুই টেস্ট এবং সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে ছিল একই দৃশ্য। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত থেকে শুরু করে দলের অন্য ব্যাটাররাও স্বীকার করেন, তাদের ব্যাটিংয়ে উন্নতি প্রয়োজন, যা নিয়ে অনুশীলন করছেন বলেও জানান তারা। কিন্তু মাঠে তার ন্যূনতম প্রতিফলন নেই। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ৭ উইকেটে হারের পর আবারও আলোচনায় সেই ব্যাটিং ব্যর্থতা।
বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আরও একটি টেস্ট হারের পর বাংলাদেশ দলের
প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। দলের ব্যর্থতা
নিয়ে ২৬ বছর বয়সি এই অলরাউন্ডারের ভাষ্য, ‘হয়তো আমাদের কিছু জায়গার অভাব আছে, এ কারণে
ব্যাটিংয়ে খারাপ করছি। আমার কাছে মনে হয়, ওপরের দিকে জুটি গুরুত্বপূর্ণ। টপ অর্ডার
থেকে শুরুটা ভালো পাওয়া গেলে পরের ব্যাটারদের জন্য সহজ হতো। পাকিস্তানে প্রথম টেস্টে
টপ অর্ডার, মানে তিন-চার নম্বর থেকে শুরু করে সবাই ভালো করেছিল। আর এতে পরে যারা ছিল,
তাদের কাজটা সহজ হয়ে যায়।’ এরপর মিরাজ চিরাচরিত সেই চেষ্টার কথাই বললেন, ‘অবশ্যই সেটা
(ব্যর্থতা কাটানো) নিয়ে আমরা কাজ করছি। টপ অর্ডাররা কীভাবে সফল হতে পারে, বেশিরভাগ
টেস্ট ম্যাচেই যেন সফল হতে পারি, সেজন্য আমরা কথা বলছি। আশা করছি, সামনে যে টেস্টগুলো
আছে, আমরা বুঝতে পারব আমাদের কোন জায়গায় সমস্যা আছে।’
একই উইকেটে শান্ত-লিটন-মুশফিক-সাদমানরা
ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু লেট অর্ডারে সফল ছিলেন মিরাজ। ব্যাটিংয়ের জন্য উইকেট কেমন মনে
হয়েছেÑ এমন প্রশ্নে এই অলরাউন্ডার বলেছেন, ‘টস জিতে আমরা ব্যাট করতে চেয়েছিলাম। কারণ
মিরপুরে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করাটা কঠিন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান করতে পারিনি।
দ্বিতীয় ইনিংসের রানটা প্রথম ইনিংসে হলে খেলা অন্য রকম হতো। প্রথম ইনিংসেই ব্যাকফুটে
চলে গিয়েছি।’
টপ অর্ডার ব্যাটাররা
ব্যর্থ হলেও সপ্তম উইকেটে অভিষিক্ত জাকের আলী অনিককে নিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ ১৩৮ রানের
জুটি গড়েছেন। সাবলীল ব্যাটিং করেছেন দুজনই। মিরাজ সেঞ্চুরি মিস করলেও ৯৭ রানের ইনিংস
খেলেছেন। ওপরের ব্যাটাররা পারেননি, মিরাজ এমন কী করলেন যে, সফল হলেন? এর ব্যাখ্যা দিতে
গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমরা সুযোগ পাচ্ছি। ভালো লাগছে সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পেরে। যেখানে
ব্যাট করি, সেটা আমার জন্য কঠিন। এখান থেকে ভালো খেললে দল ভালো জায়গায় যাবে, খারাপ
খেললে ভালো ফলাফল পাবে না। আমি নিজে ভালো খেলার চেষ্টা করছি।’
মিরপুরের উইকেট
ঐতিহ্যগতভাবেই কিছুটা টার্নিং ও স্লো হয়ে থাকে। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে এমন উইকেটে খেলতে
চেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু প্রত্যাশামতো উইকেট পায়নি। একাদশেও নেয় একজন পেসার। মিরাজও
বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম মিরপুরের উইকেটে স্পিনাররা ডমিনেট
করবে। বোলার তো চারটা ছিল, এক পেসার, তিনটা স্পিনার। এখানে মিরপুরে স্পিনাররা ডমিনেট
করে, কিন্তু কন্ডিশনটা অন্য রকম হয়ে গেছিল।’ মিরাজ অবশ্য প্রোটিয়া বোলারদেরও কৃতিত্ব
দিয়েছেন, ‘ওরাও ভালো বল করেছে, আমাদের হাসান মাহমুদও ভালো বল করেছে। আমি আর নাইম ভালো
বল করলে এই প্রশ্ন আসত না। বিশেষ করে আমার কাছে দল চায় ৫-৬ উইকেট নিয়ে ম্যাচ জেতাব;
সেটা করতে পারিনি। ওখান থেকে ব্যাকফুটে পড়ে গিয়েছি।’ দ্বিতীয় টেস্টে ফেরার আশা করছেন
এই অলরাউন্ডার, ‘ঘরের মাঠে প্রত্যাশা সবারই থাকে। আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে পারিনি,
সেটা স্বীকার করছি। এখনও একটা ম্যাচ বাকি। আশা করছি, ভালোভাবে কামব্যাক করতে পারব।’
মিরপুর টেস্ট খেলেই
সাদা পোশাকের ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে চেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু নিরাপত্তা ইস্যুতে
শেষ পর্যন্ত তার শেষ ইচ্ছা পূরণ হয়নি। তার বিকল্প হিসেবে অনেকেই মিরাজের কথা বলছেন।
সিরিজ শুরুর আগে অধিনায়ক শান্তও সাকিবের শূন্যতা পূরণে মিরাজের ওপর আস্থার কথা জানান।
তবে এখনই সাকিবের সঙ্গে তুলনীয় হতে চাননা মিরাজ, ‘সবাই সবসময় একটা কথা বলেন, সাকিব
ভাইয়ের জায়গায় আমি আসব। একটা বিষয় খেয়াল করেন সাকিব ভাইয়ের অর্জন অনেক। তিনি ১৭ বছর
ধরে খেলেছেনÑ একজন কিংবদন্তি। আমি মাত্র রান করা শুরু করেছি ১-২ বছর। সাকিব ভাই শুরু
থেকেই রান করেছেন।’ যোগ করেন, ‘উনি উনার জায়গায়, আমি আমার জায়গায়। একজন খেলোয়াড়কে আরেকজনের
সঙ্গে তুলনা না করলেই ভালো। আমি ৭-৮ নম্বরে ব্যাট করি। সাকিব ভাই টপ অর্ডারে ব্যাট
করেছেন। আমার সময় এলে চেষ্টা করব দলের প্রয়োজনে ভালো ক্রিকেট খেলার।’