মিরপুর টেস্ট
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ২০:৩২ পিএম
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ২০:৪৬ পিএম
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। ছবি: আ. ই. আলীম
উপমহাদেশের মাটিতে ১০ বছর পর টেস্ট জয়। বাংলাদেশের বিপক্ষে কাঙ্ক্ষিত এ জয়ে শান্তি ও উৎসবের খোরাক পাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। মিরপুর টেস্টের আগে সফরকারী প্রোটিয়াদের নিয়ে অনেক কথাই হচ্ছিল। উপমহাদেশের কন্ডিশন সম্পর্কে অজ্ঞতা, স্কোয়াডে আনকোরা খেলোয়াড়ের আধিক্য ও অভিজ্ঞ টেম্বা বাভুমার অনুপস্থিতিÑ এসব নিয়ে প্রায়ই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন প্রোটিয়া অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। তবে সব ছাপিয়ে উৎসব মেজাজেই মাঠ ছেড়েছে প্রোটিয়ারা।
উপমহাদেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা সবশেষ টেস্ট খেলেছে
২০১৪ সালে, গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এর পর ১০ বছরে ছয়বারের সফরে ১৪টি টেস্ট খেলেছে
প্রোটিয়ারা। জয় থেকেছে অধরা। মিরপুরে সেই হারের বৃত্ত ভাঙল। এজন্যই জয়টি মার্করামের
কাছে একটু বেশিই স্পেশাল ও গর্বের। বৃহস্পতিবার সিরিজের প্রথম টেস্ট জয়ের পর
প্রোটিয়া অধিনায়ক বলেছেন, ‘এটি স্পেশাল। আমাদের দলটি তারুণ্যনির্ভর, বেশ অনভিজ্ঞও।
এমন কন্ডিশন থেকেও ভালো করতে পারি, লড়াই করতে পারিÑ এই জয় থেকে আমরা সেই আত্মবিশ্বাস
পেলাম।’
২০০৭ সাল থেকে ২০১৪Ñ এই সাত বছরে উপমহাদেশে ১৫টি টেস্ট
খেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এ সময় তারা পাকিস্তান-ভারত, বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লড়াই
করে পরাজিত হয়েছে তিনবার এবং ড্র করেছে দুটিতে। একই সময়ে উপমহাদেশের মাটিতে ১৫ টেস্ট
খেলে মাত্র একটি টেস্টে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। আর ১৬ টেস্ট খেলে তিনটিতে জয়লাভ করে ইংল্যান্ড।
নিজেদের মাটিতে সবসময়ই দাপট দেখিয়েছে ভারত-শ্রীলঙ্কা। পাশাপাশি উপমহাদেশে সফলতা দেখিয়েছে
প্রোটিয়ারা। পরবর্তীকালে অর্থাৎ ২০১৫ সাল থেকে তাদের কোনো চেষ্টাই কাজে লাগেনি। অথচ
এ সময় প্রোটিয়া দলে ছিল দারুণ সব নামÑ ফাফ ডু প্লেসি, হাশিম আমলা, এবি ডি ভিলিয়ার্স,
ডেল স্টেইন ও মরনে মরকেলের মতো তারকারা। মূলত স্পিন না খেলতে পারা এবং দলে বিশ্বমানের
স্পিনার না থাকার কারণেই এ সময়ে ধরাশায়ী হয়েছে প্রোটিয়ারা।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে দৃশ্যপট। উপমহাদেশে না খেললেও
এখনকার কন্ডিশন সম্পর্কে ভিডিও বিশ্লেষণ দেখে নিজেদের তৈরি করেছে প্রোটিয়ারা। সিরিজের
প্রথম টেস্টের প্রথম দিন দেখে মনে হচ্ছিল, এই ম্যাচ তিন দিনেই গুটিয়ে যাবে। অথচ প্রোটিয়া
ব্যাটার কাইল ভেরেইনা যেভাবে বাংলাদেশের স্পিনারÑ তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ
ও নাইম হাসানদের প্রতিহত করেছেন, তা দৃঢ়তার বহিঃপ্রকাশ। প্রথম ইনিংসে তিনি ১৪৪ বলে
১১৫ রানের ইনিংস খেলেছেন। সুইপ-রিভার্স সুইপ এবং স্লগের সমন্বয়ে করেছেন বেশিরভাগ রান।
কন্ডিশনে মানিয়ে নেওয়া এবং তার ভিন্ন চিন্তার যুগান্তকারী শটে মুগ্ধ প্রোটিয়া অধিনায়ক।
প্রশংসাপত্রও পেয়েছেন মার্করামের কাছ থেকে, ‘কাইলের সুইপ সত্যিই অসাধারণ। তার জন্য
বিশেষ অর্জন ছিল এটি। দল তাকে সমর্থন দিয়েছে, সুযোগ দিয়েছে। এখন সে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ
করছে। স্পিনের বিপক্ষে তার ব্যাটিং সবসময় ভালো। তবু উপমহাদেশে নিজের প্রথম টেস্টেই
সেঞ্চুরি করা বিরাট ব্যাপার।’
স্পিননির্ভর উইকেটেও আগুন ঝরিয়েছেন স্পিড স্টার কাগিসো
রাবাদা। দুই ইনিংসে ৯ উইকেট তুলেছেন তিনি। টেস্টের প্রথম দিনেই ৩০০ উইকেটের মাইলফলকও
স্পর্শ করেছেন। তার প্রশংসা করেছেন মার্করাম, ‘রাবাদা আমাদের সুপারস্টার। তার ৩০০ উইকেট
নেওয়ার পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যায়, সে মিলিয়নে একজন। আমরা তাকে পেয়ে ভাগ্যবান।’
মিরপুরে পরাজয় দেখলেও দ্বিতীয় ইনিংসে লড়াই করেছে বাংলাদেশ।
বিশেষ করে মিরাজ যেভাবে দলকে টেনে তুলেছেন তা প্রশংসার দাবিদার। দ্বিতীয় ইনিংসে স্পিন
অলরাউন্ডার ৯৭ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেছেন। ৩ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেছেন। মার্করাম
সে প্রসঙ্গ টেনেছেন। তার মতে, ‘সেঞ্চুরিটা ডিজার্ভ করতেন (পাওনা ছিল) মিরাজ। গতকাল
বা তার আগের দিনও তারা ভালো জুটি গড়েছে। বল নরম ছিল কিছুটা। উইকেট তুলতে আমাদের অনেক
কষ্ট করতে হয়েছে। অনেক কৃতিত্ব দিতে হবে তাদের। মেহেদী দারুণ খেলেছে। সেঞ্চুরিটা তার
প্রাপ্য ছিল। আমাদের চ্যালেঞ্জ ছিল অনেক। তবে আমরা অনেক পরিশ্রম করে পরিস্থিতির সঙ্গে
মানিয়ে নিয়েছি। আর অবশ্যই বাংলাদেশকে এখানে কৃতিত্ব দিতে হবে।’
মার্করামের জন্য এই জয় স্পেশাল। বিপরীতে ঘরের মাটিতে
তেতো স্বাদ পেল বাংলাদেশ। ভারতের কাছে ধরাশায়ী হওয়ার পর সমর্থকরা আশায় বুক বেঁধেছিল,
ঘরের মাঠে ঘুরে দাঁড়াবে টাইগাররা। কিন্তু উল্টো উপমহাদেশ জুজু কাটাল প্রোটিয়ারাই।