প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ১৪:৩৯ পিএম
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:০৩ পিএম
মিরাজ এখনও নিজেকে সাকিবের মাপের অলরাউন্ডার ভাবতে নারাজ; ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানের বিকল্প কে? এমন প্রশ্নের
উত্তরে বেশিরভাগ মানুষই বলবেন মেহেদী হাসান মিরাজের কথা। সাকিবের ক্যারিয়ারের ইতি ঘটার
আগেই অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে শানিত করছেন মিরাজ। দলের প্রয়োজনে ব্যাটে-বলে অবদান
রাখছেন ঠিক সাকিবের মতোই। তবে মিরাজ এখনও নিজেকে সাকিবের মাপের অলরাউন্ডার ভাবতে নারাজ।
তাই সাকিবকে সাকিবের জায়গায় রেখে তাকে অন্যভাবে মূল্যায়নের অনুরোধ জানিয়েছেন ২৬ বছর
বয়সী এই অলরাউন্ডার।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) মিরপুর শেরে
বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টের পর
সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন মিরাজ। এসময় সাকিবের সঙ্গে তুলনা নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন,
‘সবাই সবসময় একটা কথা বলেন সাকিব ভাইয়ের জায়গায় আমি আসব। একটা জিনিস দেখেন, সাকিব ভাই
অনেক বড় অর্জন করেছেন, ১৭ বছর খেলেছেন, একজন লিজেন্ড প্লেয়ার। আমি মাত্র রান করা শুরু
করেছি ১-২ বছর। সাকিব ভাই শুরু থেকেই রান করেছে।’
একজন খেলোয়াড়কে অন্যজনের সাথে তুলনা
করাটাই পছন্দ নয় মিরাজের। নিজের সাধ্য অনুযায়ী দলে অবদান রাখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে
চান তিনি, ‘উনি উনার জায়গায়, আমি আমার জায়গায়। একজন খেলোয়াড়কে আরেকজনের সাথে তুলনা
না করলেই ভালো। আমি ৭-৮ নম্বরে ব্যাট করি। সাকিব ভাই টপ অর্ডারে ব্যাট করেছে। আমার
সময় আসলে চেষ্টা করব দলের প্রয়োজনে ভালো ক্রিকেট খেলার।’
এই টেস্টই হওয়ার কথা ছিল সাকিবের বিদায়ী টেস্ট। তবে পরিস্থিতি পক্ষে না থাকায় স্কোয়াডে থেকেও দেশে আসতে পারেননি সাকিব। মিরাজ কথা বলেছেন এ বিষয়েও, ‘সাকিব ভাইর ইস্যু তো সবাই জানি। তিনি কীসের জন্য আসেনি বা খেলতে পারেনি কারও অজানা না। তিনি একজন কিংবদন্তি। বাংলাদেশের জন্য অনেক অর্জন আছে, অস্বীকার করতে পারব না কেউ। সবাই তার পাশে থাকা উচিৎ।’
এখন পর্যন্ত টেস্টে
৮৭ ইনিংস খেলেছেন মিরাজ। যার মাত্র ১০টি সেরা ছয়ে সিক্সে! আট নম্বরেই তার ৪৮টি ইনিংস আর সাতে খেলেছেন ১৫ ইনিংস। মিরাজ অতীতে দু-চারবার তো বলেছেনও ব্যাটিং অর্ডারে চান প্রমোশন। তবে
ঢাকা টেস্ট শেষে এই প্রশ্ন শুনে, সুবোধ বালকের মতো সিদ্ধান্তের ভার ছাড়লেন কোচ-ক্যাপ্টেনদের
ওপর, ‘এটা টিম ম্যানেজমেন্টের ডিসিশন। দলের ভালোর জন্য কোথায় খেলা প্রয়োজন এটা তারা
নির্ধারণ করবেন।’
তবে ব্যর্থতা আড়াল
করা কি এতটাই সহজ। মিরাজ ভালো না করলে দলের অবস্থা যে হয় আরও মলিন। বিষয়টা মিরাজ নিজেও
মানেন। তিনি বলেন, ‘আমার সুযোগ বাড়ছে। ভালো লাগছে, সুযোগ যেন কাজে লাগাতে পারি। আমি
যেখানে ব্যাট করি, অনেক কঠিন। আমি ভালো খেললে দল ভালো জায়গায় যাবে, খারাপ খেললে ভালো
করবে না। আমি মানসিকভাবে চেষ্টা করছি নিজেই ভালো খেলার। আলহামদুলিল্লাহ রান করছি। আগেও
দেখেছি আমি ভালো করলে দলের উপকার হয়। ঐ জিনিসটাই চেষ্টা করছি, দিনকে দিন ব্যাটিং উন্নতির
চেষ্টা করছি। ক্যারিয়ারের শুরুতে টেস্টে গড় ছিল দেড়! দিনকে দিন চেষ্টা করছি উন্নতির,
সেভাবেই কাজ করছি।’
ব্যর্থতার মতো
আড়াল হয় না আক্ষেপও। ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন না পেয়ে এখন শুধু নিজের দিকটাই ভাবছেন
মিরাজ, নতুন কিংবা পুরনো বল সব প্রস্তুতিই নিচ্ছেন ষোলোআনা। এমনকি মুশফিক লিটনের মতো
স্পেশালিস্ট ব্যাটাররাও এখন দ্বারস্থ হন মিরাজের পরামর্শের জন্য, ‘চেষ্টা করছি প্র্যাকটিস
করার জন্য। বেশিরভাগ সময়ই আমাকে নতুন বলে ব্যাট করতে হয়। ৮০ ওভারের পর বোলারদের নিয়ে
ব্যাটিং করতে হয়। নিজেকে সেভাবে মানসিকভাবে তৈরি করছি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কীভাবে
টিকে থাকতে পারি, রান করতে পারি, বোলারকে ডমিনেট করতে পারি। অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের সাথে
শেয়ার করি, তারাও শেয়ার করে। আমাদের সবসময় কথা হয়। যে ২ জন ব্যাটিং করে উইকেট সবচেয়ে
ভালো বোঝে। তারা সবসময় তথ্য দিতে থাকে ব্যাটারদের।’
মিরাজ আরও বলেন, ‘ওপর থেকে রান এলে দলের জন্য ভালো হতো, আমি এই সাপোর্ট দিলে দল আরও ভালো করতো। যেহেতু উপর থেকে ব্যাটাররা ৯ টেস্টের কথা বললেন হয়নি। আমার মনে হয় যতটুকু করেছে তারচেয়ে আরও ৫০ শতাংশ ভালো করলেও আরও ভালো হতো। ইনিংস বড় হয়নি। একজন ক্লিক করেছে, ২ জন করলে… একজন ৫০-৬০ করেছে এটা ১০০ হলে, ৩০ ৭০ হলে টপ অর্ডার থেকে, দৃশ্য ভিন্ন হতো। পাকিস্তানে যে ম্যাচে ৫০০ করেছি টপ অর্ডার ভালো শুরু দিয়েছিল। সাদমান, সৌরভ ভাই, মুশফিক ভাই। তখন আমার ৭৭ রানে রান ৫০০-র বেশি হয়েছে। লিটনও ফিফটি করেছিল। টপ অর্ডার ভালো শুরু পেলে আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়।’