প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৪ ২১:৩৮ পিএম
আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২৪ ২১:৩৮ পিএম
মিরপুরে সাকিবের বিদায়ী টেস্ট খেলা হচ্ছে না, নিশ্চিত করেছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ— সংগৃহীত ছবি
আকাশপথে ঢাকা থেকে দুবাইয়ের দূরত্ব দুই হাজারের কিছু বেশি মাইল। সময়ের হিসেবে বড়জোর পাঁচ ঘণ্টার পথ। সাকিব আল হাসানের কাছে এই দূরত্ব নিশ্চয়ই হিসেবের চেয়ে ঢের বেশি! তার দেশে ফেরা নিয়ে কত জলঘোলাই না হলো। আসছি, আসব, আসার পথে— এসবের মধ্যেই ঘুরপাক খেতে হচ্ছে। কিন্তু মিরপুরের দূরত্ব মেলাতে পারেননি বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। দেশে ফেরার বিমান ধরেও ফিরতে হয়েছে মাঝপথে। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে খেলার ইচ্ছাও হয়তো অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে।
আগের দিন বিসিবি থেকে জানানো হয়, সাকিব ফিরছেন। বোর্ডের দেওয়া প্রথম টেস্টের দলেও আছেন সাকিব। পরে বিসিবি নির্বাচক হান্নান সরকার দেন সুখবর, মিরপুর থেকেই সাদা পোশাককে বিদায় জানাবেন সাকিব। কিন্তু রাত গভীর হয়ে ভোর হতে হতে পাল্টে যায় সিদ্ধান্ত। গতকাল সারা দিনে নানা নাটকীয়তার পর জানা যায়, দুবাই অবধি আসতে পেরেছিলেন সাকিব। দেশে ফেরার বিমান যখন ধরবেন তখন তাকে পরামর্শ দেওয়া হয়, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ দেশে না ফিরতে। আপাতত সেটাই মেনে নিয়েছেন সাকিব। ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোকে সাকিব বলেছেন, ‘কোথায় ফিরব তা নিশ্চিত না। তবে এটা নিশ্চিত বলতে পারেন যে দেশে আসছি না।’
সিরিজ খেলতে পুরোদমে অনুশীলন সারছে দক্ষিণ আফ্রিকা দল। বাংলাদেশ জাতীয় দলের নতুন কোচ ফিল সিমন্সের অধীনে গতকাল অনুশীলন করেছে টিম টাইগার্সও। তবে সাকিব দেশে আসবেন কি না, সেই ধোঁয়াশা এখনও থাকছে। গত কয়েক দিন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সাকিবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মিছিল করেছে কিছু মানুষ। দেয়াললিখন লিখেছে। গতকাল ‘মিরপুর ছাত্র-জনতা’ ব্যানারে আন্দোলনকারীরা ‘আমার ভাই কবরে, সাকিব কেন বাহিরে’, ‘টরন্টো নাকি মিরপুর, মিরপুর মিরপুর’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়। একই সঙ্গে তারা ‘মিরপুর ব্লকেড’ করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সাকিবের নামে দেশে হত্যা মামলা হয়েছে। টাইগার অলরাউন্ডার আওয়ামী লিগের একজন এমপি ছিলেন। তবে কিছুদিন আগে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছিলেন সাকিব। ছাত্র আন্দোলনের সময় নিশ্চুপ থাকার কারণে তিনি ক্ষমাও চেয়েছেন। কিন্তু দেশে খেলে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর ইচ্ছে বুঝি অপূর্ণই থাকছে তার।
ভারতের বিপক্ষে কানপুর টেস্টে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানেন সাকিব। সাকিব সেবার শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে মিরপুরে টেস্ট খেলবেন। যদি না হয় তবে কানপুর টেস্টেই ইতি টানবেন। ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর আগে সাকিবের অমন চাওয়ায় আলোচনার খোরাক জমে। সরকারের কোর্টে বল ঠেলে বিসিবি প্রথমে জানায়, নিরাপত্তার ব্যাপারে বোর্ডের কিছু করার নেই। ব্যক্তি সাকিবকে নিরাপত্তা দেওয়া অবান্তর বলেও মন্তব্য করেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা। কিন্তু পরে আমূল বদলে যায় সিদ্ধান্ত। সাকিবের ইচ্ছেকে গুরুত্ব দিয়েই দেশে খেলার সুযোগ দেয় সরকার। ওপর মহল থেকে সবুজ সংকেত পেয়েই বিসিবিও মিরপুর টেস্টে দলে রাখে সাকিবকে।
কিন্তু গতকাল ‘মিরপুর ছাত্র-জনতা’ ব্যানারে আন্দোলনকারীরা সাকিবকে দল থেকে বাদ দেওয়ার শর্ত জুড়ে বিসিবিকে স্মারকলিপি প্রদান করে। কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়ে আন্দোলনকারীরা জানায়, ‘সাকিবকে বাংলাদেশ জাতীয় দল থেকে বাদ দেওয়া এবং তার অপকর্মের ব্যাপারে ব্যবস্থা না নিলে আমরা আমাদের এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে আরও কঠোর করে তুলব। খেলার দিন মিরপুর এলাকায় কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব। এর ফলে যদি কোনো অরাজকতা সৃষ্টি হয়, বাংলাদেশের মাটিতে অন্য দেশগুলো খেলতে না আসে কিংবা বাংলাদেশ ক্রিকেট আইসিসির পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞাসহ অন্য যেকোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে এর সকল দায়ভার বিসিবিপ্রধান হিসেবে আপনাকে নিতে হবে।’ বিসিবি থেকে ওই স্মারকলিপির জবাব গতকাল সন্ধ্যা অবধি দেওয়া হয়নি। তার আগেই সাকিব জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে দেশে ফিরছেন না তিনি।
দেশের একটি গণমাধ্যমকে সাকিব বলেন, ‘ফেরার কথা ছিল। কিন্তু এখন হয়তো ফিরতে পারব না নিরাপত্তা ইস্যুর জন্য। আমার নিজের নিরাপত্তার জন্যই।’ সাকিবের বলা ‘হয়তো’ শব্দটি তার ফেরার পথ এখনও খোলা রাখছে। তবে এখনও জমে আছে অনেক ‘যদি’, ‘কিন্তু’। টরন্টো থেকে দুবাই হয়ে মিরপুরের দূরত্ব সাকিব আদৌ মেলাতে পারবেন কি না সেটাই এখন দেখার ব্যাপার।