বাংলাদেশ-ভারত সিরিজ
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৪ ১১:১২ এএম
শেষ টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নামার আগে সহকারী কোচ নিক পোথাসের সঙ্গে পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত; ছবি: আ. ই. আলীম, হায়দরাবাদ থেকে
বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি যেন এক শিক্ষা সফরের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। কোনো ম্যাচে ব্যর্থ হলেই টাইগার ক্রিকেটারদের মুখে একটাই বুলি, ‘এই ম্যাচ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি, পরের ম্যাচে কাজে লাগাব।’
চলতি ভারত সফরেও বেশ ভালোভাবে চলে এসেছে বাংলাদেশ দলের এই শিক্ষা সফরের ব্যাপারটি। এখনও পর্যন্ত টাইগারদের ভারত সফরটা একদমই ভালো যায়নি। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে বাজেভাবে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টির প্রথম দুই ম্যাচেও হতাশ করেছে নাজমুল হোসেন শান্তরা। এক ম্যাচ আগেই সিরিজ খুইয়ে আছে হোয়াইটওয়াশের দোরগোড়ায়। তবে এতসব ব্যর্থতা আর হতাশার মাঝেও টিম টাইগার্স আছে শিক্ষা সফরের তত্ত্ব নিয়ে।
হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে আজ শনিবার মাঠে গড়াবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে শুরু হওয়া খেলাটি সরাসরি সম্প্রচার করবে টি-স্পোর্টস ও স্টার স্পোর্টস। তৃতীয় ম্যাচের আগে গতকাল শুক্রবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসেই টাইগারদের সহকারী কোচ নিক পোথাস নজর দিতে চাইলেন ক্রিকেটারদের এই সফর থেকে পাওয়া শিক্ষায়।
পোথাস বলেন, ‘ভারতে অনেক দলই এসে বাজে সফর কাটিয়ে যায়। আমাদেরকে যেদিকে নজর দিতে হবে তা হচ্ছে শিখতে পারছি কি না, সামনের দিকে তাকাতে হবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আসছে সামনে, টি-টোয়েন্টি আছে। কিংবদন্তি আছে কয়েকজন যারা তাদের বাংলাদেশের হয়ে ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে চলে এসেছেন। আমরা সব সময়ই জিততে চাই, দুনিয়ার যেকোনো খেলাতেই এটি সবাই করে থাকে। তবে আমাদের বাস্তবিকভাবেও চিন্তা করতে হবে।’
ভারত সিরিজ থেকে কি শিক্ষা পেলেন, এমন প্রশ্নে টাইগার সহকারী কোচ বলেন, ‘আপনাকে খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত দক্ষতায় নজর দিতে হবে। একটি ব্যাপার মানতেই হবে, ফিল্ডিংয়ের দিক থেকে আমরা দারুণ ছিলাম। কারণটা হচ্ছে, ফিল্ডিংয়ে প্রতিপক্ষের কোনো প্রভাব নেই, পুরোটাই আমাদের নিয়ন্ত্রণে। ফলে এখানে খেলোয়াড়দের অনেক কৃতিত্ব দিতে হবে ফিল্ডিংয়ের ব্যাপারে।’ আরও বলেছেন, ‘ব্যাটিং-বোলিংয়ে যদি তাকান, একটি কাজ ভারত সব সময় করবেই, তা হচ্ছে আপনাকে অনেক চাপে ফেলবে। কারণটা হচ্ছে তাদের দক্ষতা। আপনার শিক্ষাটা হচ্ছে কীভাবে লম্বা সময় ধরে চাপটা সামাল দিতে পারবেন। কীভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে পরিবর্তন আসতে থাকবে। ভারতে খেলতে পারাটা সম্মানের ব্যাপার। যখন আপনি বিশ্বের সেরা দলের বিপক্ষে খেলবেন, তারা আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে কোথায় উন্নতি প্রয়োজন।’
২০২৪ সালে তিন ফরম্যাটে ২০ ম্যাচ খেলে ৯টি ম্যাচে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। যদিও আগের বছরে ১৪ ম্যাচ খেলেই জিতেছিল ১০ ম্যাচে। তারপরও এই সিরিজের ব্যর্থতার চেয়ে পুরো বছরের অর্জনগুলোকে বড় করে দেখতে চান পোথাস, ‘শেখার বা প্রস্তুতির শেষ নেই। আমরা এখনও শেখার মধ্যে আছি। আপনি যখন শিখবেন না, তখনই সমস্যা শুরু হবে। বাংলাদেশ এ বছর বেশ উন্নতি করেছে। এ সিজনে বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদেরকে হারিয়েছে। পাকিস্তানে ভালো ক্রিকেট খেলেছে, যা প্রত্যাশিত ছিল না শুরুতে কারও জন্যই। এই বছর বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে একাধিক ম্যাচ জেতার পাশাপাশি সুপার এইটে খেলেছে। এটা উন্নতির বাহক।’
পোথাসের মতে, আইপিএলের কারণে নিজেদের মাঠে বেশ এগিয়ে ভারত। শান্তদের কোচ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আমাদের জন্য প্রতিদিনই নতুন দিন। প্রতিদিনই শেখার দিন। ভারতের আইপিএল পৃথিবীর সব থেকে বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট। এখানে সব থেকে বেশি ইন্টেন্স, ইন্টেন্ট, পাওয়ার হিটিং, খেলার কৌশল সবকিছুর দারুণ প্রয়োগ দেখা যায়। ভারতীয়রা এখানে সব থেকে বেশি সুবিধাটা পায় তারা এখানে খেলে। এজন্য তাদের স্কিল ও লড়াইয়ের মানসিক ভিত্তিটা বেশি শক্ত। আমরা সেখানে পিছিয়ে। যদি সুযোগ আসে আমাদের সেই সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে ম্যাচে।’
তাই বলে প্রথম দুই টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দেড়শও করতে পারবে না বাংলাদেশ? এ প্রশ্নের উত্তরে পোথাস ভারতের শক্তিমত্তার কথা তুলে ধরেন, ‘আমরা দারুণ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে তাদেরই মাঠে খেলছি। দুই দলের পার্থক্য দেখলে বোঝা যাবে সব।’ পরে অবশ্য নিজেদের ব্যর্থতা মেনে নিয়েছেন তিনি, ‘আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যাটিং করতে পারিনি। অবশ্যই ১৭০-১৮০ রান করতে পারতাম। তারা ২২০ করুক বা যাই করুক, সেটা বোলিংয়ের ব্যাপার। সেটা আমি মেনে নিচ্ছি। আমাদের আরও বেশি রান করা দরকার ছিল। দারুণ উইকেট ছিল। ভারতও অনেক ভালো বল করেছে। আমরাও ম্যাচের অনেক সময়ে অনেক সুযোগ নিতে পারিনি।’
হায়দরাবাদে খেলেই টি-টোয়েন্টিকে বিদায় জানাবেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টি-টোয়েন্টি (১৪০) খেলা এই ক্রিকেটারের বিদায়ি ম্যাচে কোনো সংবর্ধনা দেওয়া হবে কি না কিংবা এমন কোনো আয়োজন আছে কি না? দক্ষিণ আফ্রিকান এই কোচ উত্তর দিয়েছেন এককথায়, ‘দুঃখিত, এটা (দলের) অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।’
প্রথম দুই ম্যাচে হেরে পাওয়া শিক্ষাটা কাজে লাগিয়ে তৃতীয় ম্যাচে জ্বলে উঠতে পারলেই চলে বাংলাদেশের। নয়তো আরও একবার হোয়াইটওয়াশের লজ্জার মুখে পড়বে টাইগাররা। হায়দরাবাদে তৃতীয় এবং শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আগের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তরা ঘুরে দাঁড়াতে পারেন কি না, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।