প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ২১:২৭ পিএম
আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ২২:০৪ পিএম
শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পেলে দেশে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলবেন। তা না হলে ভারতের মাটিতে কানপুরের টেস্টই বিবেচিত হবে বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডারের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট। সাকিবের এমন অবসর ইস্যুতে জল গড়িয়েছে বহুদূর। প্রথমে ব্যক্তি সাকিবের নিরাপত্তার দায় নেবে না বলে জানিয়েছিল বিসিবি। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের মতও ছিল অনেকটা এমনই। তবে সাকিব ইস্যুতে বর্তমানে অবস্থান পাল্টেছে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও বোর্ড। ক্রীড়া উপদেষ্টার বক্তব্যের রেশ ধরে রবিবার বিসিবি প্রধান বলেছেন, ‘বাংলাদেশ থেকে অবসরে যাওয়ার খুব ভালো সম্ভাবনা আছে সাকিবের।’
ভারতে সবে শেষ হওয়া টেস্ট সিরিজ চলাকালে হঠাৎ করেই সাকিব জানান, ক্যারিয়ারের
শেষ টি-টোয়েন্টি খেলে ফেলেছেন তিনি। টেস্ট ছাড়ার ইস্যুতে শর্ত দেন, দেশে নিরাপত্তা
এবং খেলা শেষে বিদেশযাত্রায় বাধা না-পাওয়া। আওয়ামী লিগের সাংসদ হওয়ায় নিজের নিরাপত্তা
নিয়ে স্বাভাবিক কারণেই উদ্বিগ্ন তিনি। দেশে তার নামে হত্যা মামলা হওয়ায় গ্রেপ্তার হওয়ারও
সম্ভাবনা আছে। সাকিব ওসব থেকে বাঁচার জন্য বিসিবির কাছে নিরাপত্তা চেয়েছিলেন। গতকাল
মিরপুরে বোর্ড মিটিংয়ে লম্বা সময়ের আলোচনা শেষে বিসিবি সভাপতি দিয়েছেন কৌশলী উত্তর,
‘সাকিবের ব্যাপারটা পুরোপুরি সরকার থেকে আসতে হবে।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত
হওয়ার পর দেশে ফেরেননি সাকিব। ওই সময় তিনি ছিলেন নিউইয়র্কে পরিবারের সঙ্গে। সেখান থেকেই
পাকিস্তানে দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে খেলেন দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। এরপর সতীর্থরা দেশে
ফিরলেও সাকিব কাউন্টিতে একটি ম্যাচ খেলতে যান ইংল্যান্ডে। সেখান থেকেই ভারতে দুই ম্যাচের
টেস্ট সিরিজ খেলতে যান বাঁ-হাতি এই অলরাউন্ডার। সেখানেই গত ২৬ সেপ্টেম্বর কানপুর টেস্ট
শুরুর আগে অবসরের ঘোষণা দেন। এরপর সাকিব এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত একেবারেই নিশ্চুপ আছেন।
ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলে যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের কাছে চলে গেছেন তিনি।
এদিকে সাকিবের নিরাপত্তা এবং ঠিকঠাক দেশের বাইরে যেতে পারা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কেউই তখন ইতিবাচক কথা বলেননি। সাকিবের অবসরের ঘোষণার দিনই বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ জানিয়েছিলেন, সাকিবকে নিরাপত্তা দেওয়া বিসিবির পক্ষে সম্ভব নয়। এই বিষয়ে তিনি বল ঠেলে দেন সরকারের দিকে। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজায় নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দেখতে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার ক্রীড়া উপদেষ্টা জানান, তিনি ব্যক্তিগতভাবে চান সাকিব দেশের মাটিতেই শেষ টেস্ট খেলুক, ‘তিনি (সাকিব) বাংলাদেশে নিজের শেষ টেস্ট খেলতে চান, আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই সেই সুযোগ তিনি পান।’ দেশে এলে সাকিবের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের একজন খেলোয়াড়কে অবশ্যই আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেব। আমরা সাকিব আল হাসানের নিরাপত্তার কথা এরই মধ্যে বলেছি, সেটা আমরা নিশ্চিত করব।’
গতকাল বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ সাকিবের দেশে অবসরের বিষয়ে আসিফ
মাহমুদের সেই কথার সঙ্গে সুর মিলিয়েই কথা বলেছেন। সাকিবের নিরাপত্তার ইস্যুতে ফারুক
বলেন, ‘আইনি ব্যাপারটা তো আমি বলতে পারব না। আমি তো একটা ছোট মানুষ, বোর্ড সভাপতি।
আমার হাতে ক্ষমতা খুব কম। সাকিবের ব্যাপারটা পুরোপুরি সরকার থেকে আসবে। আইনশৃঙ্খলা
বাহিনী আছে, সরকার আছে, উপদেষ্টা আছে; তারা সিদ্ধান্ত নেবেন তার সামগ্রিক দায়িত্বটা
নেওয়ার। সেটা যখন আমরা পেয়েছি আর আমাদের যতটুকু ক্ষমতা, স্টেডিয়ামের ভেতরে যখন খেলবে,
ইনডোরে যাবে, অনুশীলনের মাঠে যাবেÑ এই দায়িত্বটা নেওয়া খুব সহজ। এটা আমরা নিতে পারব।’
যদিও কিছুদিন আগেই ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেছিলেন, সাকিব দেশে ফিরলে একজন খেলোয়াড় হিসেবে সম্ভাব্য সব রকম নিরাপত্তা দেওয়া হবে। তবে সঙ্গে এ-ও বলেছেন, মানুষের মনের ক্ষোভ দূর করার উদ্যোগ সাকিবকেই নিতে হবে। সাকিবকে তার রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করারও পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি।
এদিকে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে আগামী ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশে
আসবে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ২১ অক্টোবর
শুরু হবে দুই দলের প্রথম টেস্ট। এরপর ২৯ অক্টোবর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে
মাঠে গড়াবে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে
দুই টেস্টের দল নির্বাচনের ব্যাপারে গাজী আশরাফ হোসেনের নির্বাচক কমিটির প্রতি সাকিবকে
নিয়ে বিসিবির শীর্ষ পর্যায় থেকে এখন পর্যন্ত বিশেষ কোনো বার্তা নেই। নির্বাচক কমিটি
তাই ক্রিকেটীয় বিবেচনায় সাকিবকে রেখেই দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের দল গঠন করবে বলে জানা
গেছে। তাই ঘরের মাঠে সাকিবের বিদায়ের আশা আপাতত করতেই পারেন দেশের আপামর ক্রিকেটপ্রেমীরা।