মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু কাল
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৪ ২০:৫৭ পিএম
আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:৩৪ পিএম
জ্যোতিদের প্রাথমিক লক্ষ্য জয়ে শুরু, তারপর গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে সেমিতে ওঠা— ছবি: বিসিবি
বিসিবির অফিসিয়াল ফটোসেশনের দিন নিগার সুলতানা জ্যোতি যা বলেছিলেন, আজ বুধবার যেন পুনরাবৃত্তি করেছেন তারই। দেশের মাটিতে বিশ্বকাপের রোমাঞ্চ থেকে বঞ্চিত হয়ে আশাহত হয়েছেন টাইগ্রেসরা, তবে আশা রাখছেন— আগে যা হয়নি, এবার করবেন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। গ্রুপপর্বের বাধা পেরিয়ে সেমিফাইনালের স্বপ্ন দেখছেন টাইগ্রেসরা। সেই লক্ষ্যের সূচনা আগামীকাল বৃহস্পতিবার স্কটল্যান্ডকে হারিয়েই করতে চান নিগার ব্রিগেড।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জ্যোতিরা মোকাবিলা করবেন স্কটিশ মেয়েদের। বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টায় শুরু হবে লড়াই। সরাসরি খেলা দেখাবে নাগরিক টিভি ও স্টার স্পোর্টস। এবারই প্রথমবার কুড়ি কুড়ির বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে স্কটল্যান্ড। নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশে। নিরাপত্তাসংক্রান্ত কারণে বাংলাদেশ থেকে হাতছাড়া হয় বিশ্বকাপ মহাযজ্ঞ। আসর চলে আসে নিরপেক্ষ ভেন্যু আমিরাতে। উদ্বোধনী দিনে বাংলাদেশের ম্যাচটি ছাড়াও রাত ৮টায় পাকিস্তানের মোকাবিলা করবেন শ্রীলঙ্কার মেয়েরা।
বুধবার বিসিবির পাঠানো অডিওবার্তায় জ্যোতি শুরুটা ভালো রাখার কথাই বলেছেন আরেকবার। সঙ্গে টাইগ্রেস অধিনায়ক শুনিয়েছেন প্রত্যয়, ‘পুরো দলের জন্য এবার অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এই জন্য যে, যতগুলো বিশ্বকাপ খেলেছি— ২০১৪ ছাড়া বলার মতো তেমন কিছু করতে পারিনি। আমাদের জন্য এটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে, আমরা চাই যেন এই বিশ্বকাপটা হিসাবে ও মনে রাখার মতো হয়। এটা (কোনো জয় না পাওয়া) খুবই হতাশাজনক। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, এই দুঃখ এবার ঘোচাতেই চাই। যেন আমাদের এই দুঃখ আর না থাকে। শুরুটা করতে চাই আগামীকালকের ম্যাচ দিয়েই।’
স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত পাঁচবার মুখোমুখি হয়ে হারেনি বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি জয়গুলোও বেশ বড়সড়। আগের কোনোবারেই টাইগারদের বিপক্ষে দলীয় স্কোর ৮০ রানের বেশি করতে পারেননি স্কটিশ মেয়েরা। ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং সব বিভাগেই পরাস্ত হতে হয়েছে স্কটিশদের। তা ছাড়া এবারই প্রথমবার বিশ্বমঞ্চে লড়বেন তারা। বাংলাদেশের অধিনায়ক তাই আশাবাদী শুরুটা জয় দিয়ে হবে এবং বিশ্বকাপে জয় না পাওয়ার খরা ঘুচবে।
ওয়ার্ম আপে পাকিস্তানকে হারানোর বিষয়টি টেনে নিজেদের শক্তিমত্তার কথা বলেছেন জ্যোতি, ‘আমাদের দল যেভাবে খেলে এসেছে, শেষ ওয়ার্ম আপ ম্যাচটা যেভাবে খেলেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে, সবাই একটা ভালো শেপে দেখেছি। সবার ভেতর যে এনার্জি বা ম্যাচ জেতার যে ক্ষুধা বা বলব যে প্রত্যেকটা খেলোয়াড় যে একজন আরেকজনকে যেভাবে ব্যাক করেছে মাঠে, ব্যাটিং ইউনিট অনেক ভালো করেছে, ভালো একটা স্কোর দাঁড় করিয়েছে। বোলাররা অনেক ভালো ব্যাকআপ দিয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে যদি চিন্তা করি, দল একটা ভালো অবস্থায় আছে। আমরা জয়ের জন্যই খেলব।’
২০১৪ সালের পর থেকে টি-টিয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়মিত খেলছে বাংলাদেশ। প্রথম আসরের পর পরের চার আসরে কোনো ম্যাচ জিততে পারেনি। ৩ অক্টোবর শুরু হয়ে বিশ্বকাপের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ২০ অক্টোবর। ১৭ ও ১৮ অক্টোবর দুটি সেমিফাইনাল। দুই দিন পর শিরোপা ফয়সালার ম্যাচ। দুটি গ্রুপে ভাগ হওয়া বিশ্বকাপে বাংলাদেশ আছে ‘বি’ গ্রুপে। জ্যোতিদের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও স্কটল্যান্ড। কুড়ি ওভারের আগের চার বিশ্বকাপের ১৬ ম্যাচের সবকয়টিতেই হেরেছে টাইগ্রেসরা। গতকাল শারজায় সেই বৃত্ত ভাঙার প্রতিজ্ঞা করেছেন জ্যোতি। নিজের অধিনায়কত্বের ক্যারিয়ারে শততম ম্যাচ স্মরণীয় করে রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ লাল-সবুজ ব্রিগেডের অধিনায়ক, ‘অন্য রকম অনুভূতি একশতম ম্যাচ খেলার। অনেক বেশি খুশি। অনেক সময় আসলে অবাকও লাগে। মনে হচ্ছিল এই হয়তো ক্যারিয়ার শুরু করেছি। দেখতে দেখতে প্রায় একশটা ম্যাচ হয়ে যাচ্ছে। ওদিক থেকে আমি অনেক আনন্দিত। সব থেকে খুশি হবো যদি ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ে কোনো অবদান রাখতে পারি, সেটা হবে সবচেয়ে বেশি স্মরণীয়।’
অধিনায়কের মাইলফলক ছোঁয়া নিয়ে টাইগ্রেসদের প্রধান কোচ হাসান তিলকরত্নেও আশাবাদী, ‘এটা বড় উপলক্ষ জ্যোতি ও দলের জন্য। সবাই জ্যোতির একশতম ম্যাচের দিকে তাকিয়ে আছে। এটা আমাদের সবার জন্য বড় উপলক্ষ। যদি ইতিবাচক ফল পাই, ১৮ কোটি মানুষের জন্যও সেটি স্মরণীয় হবে।’
ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপের খেলা খেলতে না পেরে আফসোস আছে, কিন্তু মনোবল ভাঙেনি জ্যোতিদের। বিশ্বকাপের থিম সংটির মতোই— হোয়াটএভার ইট টেইকস, উই উইল ডু দ্যাট। শুরুটা জয় দিয়েই করতে চান জ্যোতিরা, পরের ভাবনা অনেক দূর। জ্যোতির ভাষ্যমতে, ‘বিশ্বকাপ স্মরণীয় করে রাখতে চাই।’