প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:৪৩ পিএম
কানপুরের গ্রিনপার্ক স্টেডিয়ামেই কি তবে নিজের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলে ফেললেন সাকিব? ছবি: আ. ই. আলীম
সাকিব আল হাসানের বর্তমান গল্পটা অনেকটা ছোটগল্পের মতোইÑ
শেষ হইয়াও হইল না শেষ। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ‘টেস্ট অবসর’ নিয়ে কত কথাই হচ্ছে। কিছু
সাকিবের বক্তব্যের নিরিখে, কিছু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সূত্রে। ঘরের মাঠে ক্যারিয়ারের
শেষ টেস্ট খেলার আকুতি জানিয়েছিলেন। সাকিবের সেই স্বপ্নে বাঁধা বাস্তবতা। তাই প্রশ্ন
উঠেছে কানপুরের গ্রিনপার্ক স্টেডিয়ামেই কি তবে নিজের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলে ফেললেন
সাকিব?
কানপুর ভারতের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের শেষ টেস্টের
আগে সংবাদ সম্মেলনে আচমকা অবসরের ঘোষণা দেন সাকিব, ‘মিরপুর টেস্টে (দক্ষিণ আফ্রিকার
বিপক্ষে) খেলতে পারলে সেটি হবে আমার শেষ টেস্ট।’ এর জন্য অবশ্য নিরাপত্তার নিরাপত্তা
চেয়েছিলেন, ‘আমি যেন গিয়ে খেলতে পারি এবং নিরাপদ অনুভব করি। যখন দেশের বাইরে আসার দরকার
হবে, দেশের বাইরে আসতে পারি। তারা (বোর্ড) হয়তো আমাকে একটা সিদ্ধান্ত দেবে, যেটার ভিত্তিতে
আমি দেশে গিয়ে খুব ভালোভাবে খেলে অন্তত টেস্ট ফরম্যাটটা ছাড়তে পারব।’
সাকিবের বিদায় ঘোষণার প্রেক্ষিতে একই দিন সন্ধ্যায় মিরপুরে
বিসিবি পরিচালকদের সভা শেষে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ জানান, নিরাপত্তার বিষয়টি তাদের
হাতে নেই। বোর্ড থেকে এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারবেন না তারা। বিষয়টি তিনি সরকারের দিকেই
ঠেলে দেন। বিসিবি সভাপতির বক্তব্যের পর সাকিব ইস্যুতে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে লিখেন, ‘খেলোয়াড় সাকিবের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আছে।
তবে ফ্যাসিস্ট সরকারের সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানের বিপক্ষে জনমনে তৈরি হওয়া ক্রোধের
বিপরীতে নিরাপত্তা দেওয়ার নিশ্চয়তা চাওয়া অবান্তর।’
বিসিবি সভাপতি ও ক্রীড়া উপদেষ্টার বক্তব্যের পর অনেকটা
স্পষ্ট হয়ে যায়, সহসা দেশে ফেরা এবং বিদায়ি টেস্ট খেলার যে স্বপ্ন বুনেছিলেন সাকিব,
তা ওইদিনেই জলাঞ্জলি হয়। অথচ র্যাঙ্কিং রাজত্ব, দেশকে অসংখ্য জয় উপহার, ফ্র্যাঞ্চাইজিতে
দুনিয়া মাতানোÑ এমন অনেক কারণেই একটি সুন্দর বিদায়ি সংবর্ধনা আশা করেছিলেন সাকিব। আর
তা হয়েছে কেবল হতাশার। ৩৭ বর্ষী সাকিবের এই অসমাপ্ত অধ্যায়ের মূলে রাজনীতি ও আইনি প্রক্রিয়ার
ফাঁদে পড়া। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন
সাকিব। চলতি বছরের জুলাইয়ে দেশে গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ
ও দেশত্যাগ করলে হত্যা মামলা হয় তার নামে। এর মধ্যে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির অভিযোগে
জরিমানার মুখে পড়েন তিনি। দুই-দুই চার মিলিয়ে দেশে ফেরার শর্ত হিসেবে বিসিবির প্রতি
নিরাপত্তার আবেদন করেছিলেন তিনি।
বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের অপ্রত্যাশিতভাবে নীরবে-নিভৃতে
বিদায়ে শুধুই যে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে, তাও নয়। বরং অবাক তার সতীর্থ এবং কোচ চন্ডিকা
হাথুরুসিংহে। গতকাল মঙ্গলবার কানপুরে ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় দলের হেড
কোচ বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকাকে সাকিব তার শেষ সিরিজ বলায় আমরা সবাই অবাক হয়েছি। আর আপনি
তো সাকিবের মতো হুবহু বিকল্প খুঁজে পাবেন না।’ ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে যে
সাকিবকে পাওয়া যাবে না, তাও মানতে কষ্ট হচ্ছে হাথুরুর, ‘এটাই সাকিবের শেষ টেস্ট ম্যাচ,
এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। আমি যতটুকু জানি, সে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজটা খেলছে।’
হাথুরু, সতীর্থ ও সমর্থকদের মানতে কষ্ট হলেও ধ্রুব শর্ত,
ক্যারিয়ারের ৭১তম টেস্টই সাকিবের জীবনের শেষ টেস্ট। তাকে ঘটা করে সম্মাননা স্মারক তুলে
দেন কানপুর টেস্ট কাভার করতে যাওয়া বাংলাদেশের সাংবাদিকরা। ‘বেস্ট উইশেস টু লিজেন্ডারি
সাকিব আল হাসান’Ñ এমন লেখাসংবলিত স্মারক উপহার দেওয়ার পর তার হাতে ফুলের তোড়া উঠিয়ে
দেওয়া হয়। এ সময় সাংবাদিকরা সাকিবের উদ্দেশে প্রশ্ন করলে, এড়িয়ে যান। চুপ হয়েই মাঠ
ছাড়েন বাংলাদেশের বহু ম্যাচ জয়ের নায়ক। যতটা চুপ থেকে বিদায় নিচ্ছেন দীর্ঘ ফরম্যাটের
টেস্ট থেকে।