১৯৮৬ বিশ্বকাপ
ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২২ ১৪:০০ পিএম
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২২ ১৪:৩৭ পিএম
বিশ্বকাপ হাতে দিয়েগো ম্যারাডোনা।
নাম তার দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা। ঝাঁকড়া চুলের ছোটখাটো গড়নের এই মানুষটি ফুটবল তো বটেই, সামগ্রিক খেলাধুলার ইতিহাসেই সর্বকালের সেরাদের একজন।
স্বল্পপরিসরে তাকে নিয়ে লেখা সম্ভব নয়। অনেকটা একক নৈপুণ্যে অধিনায়ক হিসেবে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ জয়ের মাধ্যমে তিনি জন্ম দিয়েছেন অনন্য এক রূপকথা।
তার জন্ম ১৯৬০ সালে আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ারসে। শৈশবে ১৯৭৮ সালে নিজ দেশের বিশ্বকাপ জয় দেখেছেন টিভিতে। ঠিক এরকমভাবে সোনালি ট্রফিটি হাতে তুলে নেওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকেন তখন থেকেই। দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারে বড় হওয়া ম্যারাডোনার সবসময়ের সঙ্গী ফুটবল। ক্লাব ক্যারিয়ারে দারুণ পারফর্ম করে জাতীয় দলে ঢুকে পড়েন দ্রুতই। ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। কিন্তু সেই আসরে দ্বিতীয় রাউন্ডে বাদ পড়ে যায় আর্জেন্টিনা।
নিজের নাম অমরত্বের খাতায় লেখাতে বেছে নেন ১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপকে। আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ম্যারাডোনাদের দিতে পারেনি কাঙ্ক্ষিত স্বাচ্ছন্দ্য। নানান প্রতিকূলতার মাঝেও ম্যারাডোনা উজ্জীবিত করে রাখেন সবাইকে। ১৯৭৮ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ড্যানিয়েল প্যাসারেলা এ দলে থাকলেও ম্যারাডোনা ও কোচের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। ফলে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড ওঠে ম্যারাডোনার হাতে।
শত প্রতিকূলতার মাঝেও দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনা প্রথম ম্যাচটা জিতে যায় ৩-১ গোলে। ৩ গোলের সবকটিতেই ছিল ম্যারাডোনার অ্যাসিস্ট। দ্বিতীয় ম্যাচে তার গোলেই ইতালির সঙ্গে ড্র করে আর্জেন্টিনা। অন্য ম্যাচে বুলগেরিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে শেষ ১৬-তে উঠে যায় ম্যারাডোনা ও তার দল। রাউন্ড অব সিক্সটিনে উরুগুয়ের সঙ্গে ১-০ গোলে জিতে শেষ আট নিশ্চিত করে আর্জেন্টিনা।
কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের দেখা হয় ইংল্যান্ডের সঙ্গে। আগে থেকেই রাজনৈতিক বৈরিতা ছিল দেশ দুটির মধ্যে। ফলে বাড়তি উত্তেজনা ছড়ায় ম্যাচটি ঘিরে। এ ম্যাচেই ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত দুটি ঘটনার জন্ম দেন ম্যারাডোনা। ম্যাচের ৫১ মিনিটে রেফারির চোখ ফাঁকি দিয়ে লাফিয়ে উঠে হাত দিয়ে ১টি গোল করেন তিনি; যা ‘হ্যান্ড অব গড’ হিসেবে খ্যাত। বিতর্কিত গোলটির রেশ কাটতে না কাটতেই মধ্যমাঠ থেকে ইংল্যান্ডের আট খেলোয়াড়কে কাটিয়ে একক প্রচেষ্টায় আরেকটি গোল করেন তিনি। এ গোলকে বলা হয় ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’। ২-১ গোলের জয় নিয়ে সেমিতে পৌঁছায় আর্জেন্টিনা। ওই ম্যাচেও দারুণ ফুটবলশৈলী প্রদর্শনের মাধ্যমে ২ গোল করে দলকে ফাইনালে তোলেন ম্যারাডোনা।
ফাইনালের প্রতিপক্ষ ছিল পশ্চিম জার্মানি। ম্যাচে ২ গোলে এগিয়ে থেকে জয়ের সুবাস পেতে থাকে আর্জেন্টাইনরা। কিন্তু শেষের দিকে ৬ মিনিটের ব্যবধানে ২ গোল হজম করে বসে তারা। স্কোরলাইন ২-২ হলেও সমস্যা কী? এ দলে তো একজন ম্যারাডোনা আছেন। ৩ মিনিট পর ম্যারাডোনার দারুণ এক পাস থেকে বুরুচাগার গোলের মাধ্যমে দ্বিতীয় শিরোপার দেখা পায় আর্জেন্টিনা।
১৯৮৬ বিশ্বকাপ ছিল পুরোটাই ‘ম্যারাডোনা শো’। সে আসরে দলের ১৪ গোলে তার অবদান ছিল ১০টিতে। নিজের করা গোল ৫টি ও তার অ্যাসিস্টে হয়েছে ৫টি। তাকে আটকাতে প্রতিপক্ষ দল ৫৩ বার ফাউল করে। আর্জেন্টাইন প্লেয়াররা যত গোল প্রচেষ্টা ও গোলমুখে শট নিয়েছিলেন তার অর্ধেকের বেশিই নিয়েছেন ম্যারাডোনা।