চেন্নাই টেস্ট
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০৯ পিএম
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:১০ পিএম
চিপকে প্রথম দিনটা বাংলাদেশের হয়নি ঠিকই, তবে নিজেকে আলাদাভাবে চিনিয়েছেন হাসান মাহমুদ। ছবি: আ. ই. আলীম
মেঘলা আকাশ। গরমের আঁচটাও
সহনীয়। চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামের ধারাভাষ্যকক্ষে বসে দীনেশ কার্তিক জানাচ্ছিলেন
আবহাওয়া বার্তা। সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটারের চোখে বৃহস্পতিবার দিনটা একটু ব্যতিক্রমই
লেগেছে! উইকেট অ্যানালাইসিস শেষে জানিয়েছিলেনÑ ময়েশ্চার। টস জিতে তাই ফিল্ডিং নিতে
দ্বিতীয়বার ভাবেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। সহসা অধিনায়কের সিদ্ধান্তের প্রতিফলন ঘটান
হাসান মাহমুদ। ২৪ বর্ষী তরুণের পেস তাণ্ডবেই দেড়শর আগে সাজঘরমুখো হন স্বাগতিক দলের
ছয় ব্যাটার। তবে দিনের বাকি অংশটা ছিল ভারতের। রবীন্দ্র জাদেজা ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন
জুটিতে প্রথম দিনে ৩৩৯ রান করেছে ভারত।
চিপকে প্রথম দিনটা বাংলাদেশের
হয়নি ঠিকই, তবে নিজেকে আলাদাভাবে চেনান হাসান। বলা যায় বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপসমৃদ্ধ
ভারতকে কাঁপিয়ে দেন এই তরুণ স্পিড স্টার। যতটুকু খেলার, পারফর্ম করার, করছেন। লাইন-লেন্থ
আর গতিকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়েছেন এই পেসার। রান খরচের বেলায়ও ছিলেন বেশ কিপটে। ১৮
ওভার বোলিং করে তুলেছেন ৪ উইকেট। খরচ করেছেন ৫৮ রান। চার ওভার দিয়েছেন মেডেন। পাকিস্তান
সফরের ধারাবাহিকতা ভারতেও ধরে রেখেছেন হাসান। তবে প্রথম দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনেও টেনেছেন
সবে শেষ হওয়া পাকিস্তান সফরের কথা। হাসান জানালেন, এটাই গেম অব ক্রিকেট, এখানে যেকোনো
কিছু ঘটতে পারে। তার ভাষায়, ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই ধারাবাহিকতা ধরে রাখার চেষ্টা
করছি। নিজের সেরাটা দিয়ে দলে যতটা অবদান রাখতে পারি, সেই চেষ্টাই করছি। আমরা বোলিংয়ে
সকাল থেকেই ডমিনেট করছিলাম। তবে উইকেট এখন খুব ভালো। আমরা বোলাররা চেষ্টা করছি রানটা
যত কমের মধ্যে রাখা যায়। একসময় ছন্দটা ছিল আমাদের দিকে। এখন শিফট হয়ে গেছে ওইদিকে।
ক্রিকেটে যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে। কাল আমাদের দিকে ফিরে আসতে পারে। আমাদের চেষ্টা থাকবে
রান যত কম দেওয়া যায়।’ কোহলি-রোহিতের উইকেট পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় জানান, ওসব নিয়ে আলাদা
করে কিছুই ভাবেননি তিনি।
প্রথম দিনে ভারতের যে ছয় উইকেট
পড়েছে তার পাঁচটিই পেসারদের দখলে। প্রথম দুই সেশনে বাংলাদেশ তিনটি করে উইকেট পেলেও
শেষ সেশনে জাদেজা ও অশ্বিনের সপ্তম উইকেটে রেকর্ড গড়া জুটিতে স্বস্তিতে দিন পার করে
ভারত। শুরুর মোমেন্টাম শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে না পারায় কিছুটা মন খারাপ হাসানের। তবে
আজ দ্বিতীয় দিনে শুরুর পুনরাবৃত্তি করতে পারলে ভালো কিছু হবে মনে করেন তিনি, ‘আমার
কাছে মনে হয় বোলিংটা আরও ইকোনমিকাল, আরও গোছানো হতে পারত। চেষ্টা করছি সবাই মিলে ভালো
জায়গায় বোলিং করে ব্যাটারদের চাপে রাখা। এখন ওদের দিকে যে মোমেন্টাম আছে কাল দ্রুত
কিছু ব্রেক করতে পারি তাহলে হয়তো মোমেন্টাম আমাদের দিকে আসবে, দ্রুত অলআউট করতে পারব।’
চিপকে দিনের শুরুটা বাংলাদেশের,
শেষটা ছিল ভারতের। ভোরের সূর্য দেখে মনে হচ্ছিল, দুশর মধ্যে গুটিয়ে যাবে স্বাগতিকরা।
যদিও হয়েছে তার উল্টো। অবস্থান বিবেচনা করলে ব্যাকফুটে নাজমুলরা। তবে প্রথম দিনের শেষ
ভাগটা হতাশায় কাটালেও দ্বিতীয় দিনের সকালে ভারতের লাগাম টানতে চান হাসান। স্বাগতিকদের
চারশ রানের মধ্যে আটকাতে চান তিনি, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে চারশর আগে অলআউট করতে পারলে
ভালো হবে। উইকেট এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। অনেক ব্যাটিং সহায়ক এখন। আমরা চেষ্টা করব তাদের
চাপে রাখার। আশা করি কাল এটাই হবে।’
হাসানের তোপে দিনের দুই সেশনে
ছিল বাংলাদেশের শাসন। ভারতীয় ব্যাটাররা দাঁড়াতে না পারলেও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত
বল তুলে দেননি সাকিব আল হাসানের হাতে। এ নিয়ে দিন শেষে হাসানের ব্যাখ্যা, ‘শুরুতে ফাস্ট
বোলাররা ভালো করছিল, উইকেট পড়ছিল। পেসাররা ভালো করছিল। এ কারণে স্পিনাররা দেরিতে এসেছে।’
হাসানের এমন আগুনে বোলিংয়ের
প্রশংসায় ক্রিকেট দুনিয়া। কিংবদন্তি ইয়ান বিশপ এই টাইগার তরুণের আগুনে বোলিংয়ে মুগ্ধ
হয়ে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘লাভলি টু সি’। হাসানের প্রশংসায় উচ্চকণ্ঠ ভারতের প্রখ্যাত
ক্রিকেট বিশ্লেষক ও ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে। তিনি বলেছেন, ‘হাসানের বোলিং মনোমুগ্ধকর।
এই কন্ডিশনে সে পারফেক্ট বোলার। ঠিকঠাক গতি আর দুদিকেই বল ঘোরানোর সামর্থ্য আছে। দেখা
যাক এই ব্যাপারটা কতক্ষণ টিকে থাকে।’ হাসান তার গতিঝড়ে সবাইকে কতটা বিমোহিত করে রাখতে
পারেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত ১ম ইনিংস : প্রথম দিন শেষে ৮০ ওভারে ৩৩৯/৬ (জয়সওয়াল ৫৬, রোহিত ৬, গিল ০, কোহলি ৬, পান্ত ৩৯, রাহুল ১৬, জাদেজা ৮৬*, অশ্বিন ১০২*; তাসকিন ১৫-১-৪৭-০, হাসান ১৮-৪-৫৮-৪, নাহিদ ১৭-২-৮০-১, মিরাজ ২১-১-৭৭-১, সাকিব ৮-০-৫০-০, মুমিনুল ১-০-৪-০)।