চেন্নাই টেস্ট
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৪২ পিএম
আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:৪৯ পিএম
শান্তদের ওপর বিশ্বাস রাখছেন কোচ হাতুরু— Tamil Nadu Cricket Association
মুহূর্তের মাঝে সিরিয়াস হয়ে গেলেন রোহিত শর্মা, ‘মজা লে নে দো উনকো (বাংলাদেশকে মজা পেতে দাও।)’ ঠিক তার আগেই একচোট হেসে নেন ভারত দলের অধিনায়ক। আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে প্রতিপক্ষ নিয়ে খানিকটা উপহাসও করেছেন রোহিত। স্বাভাবিকও বটে! ঘরের মাটিতে টেস্টে সিরিজে যারা এক যুগ ধরে অপ্রতিরোধ্য, তাদের একটু অহমিকা আসতেই পারে। রোহিতেরও এসেছে। চন্ডিকা হাথুরুসিংহে অবশ্য ওসব অহমিকা এড়িয়েই গেছেন। ভারতকে সেরা মানলেও ‘সেরাদের বিপক্ষে লড়ার চাপ’ জয় করাকেই মূলমন্ত্র হিসেবে ধরেছেন বাংলাদেশের কোচ।
বলা হয়, ‘অন্ধকার যত গভীর হবে, তত বেশি ফুটবে আলো।’ হাথুরুসিংহে আজ তেমন কিছুই বুঝিয়েছেন। ভারতের মাটিতে বাংলাদেশ আগে কখনও টেস্ট ম্যাচ জিততে পারেনি। ড্রও হয়নি। উল্টো হারগুলো বেশ বড়সড়ই। সাদা পোশাকের ম্যাচে ন্যূনতম লড়াই করতে না পারা বাংলাদেশ এবার সিরিজ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে ভারত পৌঁছেছে। আজ মঙ্গলবার চেন্নাইয়ের চিপকে অনুশীলনেও ঝরিয়েছে ঘাম। দেশ ছাড়ার আগেও টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছিলেন, ‘দুটি টেস্টেই জিততে চাই।’ অধিনায়কের বড় মুখ করে বলা কথাটিই যেন পুনরাবৃত্তি করে বসেছেন হাথুরুসিংহে, ‘ভালোদের বিপক্ষে লড়ার চাপ আমাদের সুবিধাজনক অবস্থায় রাখছে।’
টেস্টে ভারত কতটা ভালো দল, তার প্রমাণ দেবে ছোট্ট এই পরিসংখ্যান। গত এক যুগ ধরে নিজেদের উঠোনে ১৭টি টেস্ট সিরিজ জিতেছে ভারত। এর মধ্যে তাদের জয় ৪০ টেস্টে। হার মোটে চারটিতে। বাকি সাতটিতে ড্র। পাকিস্তানকে সিরিজ হারিয়ে আসা বাংলাদেশের জন্য এবারের ভারত সফরের চ্যালেঞ্জও সেখানেই। অনেকটা ‘মিশন ইম্পসিবল’-এর মতো। তবে অনেক বেশি অন্ধকারের মাঝে বেশি আলো দেখা যায়। টাইগারদের কোচ হাথুরুসিংহের যুক্তিও সেটা, ‘এই চাপকে সুবিধা হিসেবে দেখছি। আমার মনে হয় এটা আমাদের অনেক বেশি উদ্বুদ্ধ করে। আরও বেশি সামনে তাকানোর সুযোগ করে দেয়। নিজেদের শক্তি, সীমাবদ্ধতা ও অবস্থান সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পারব।’
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বৃহস্পতিবার চেন্নাইয়ে ভারতের বিপক্ষে শুরু হবে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথমটি। এরপর তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দুটি টেস্ট নিয়েই সবচেয়ে বেশি আলোচনা। সমালোচনা কিংবা কাদা ছোড়াছুড়িরও কমতি নেই। ঘরের মাঠে যেকোনো দলই শক্তিশালী। তার ওপর ভারত এই সময়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা তিন দলের একটি। আরও আছে, রোহিত শর্মারা লড়বে বাড়ির আঙিনার মতো হওয়া চিপক স্টেডিয়ামে। প্রতিপক্ষের এত পরিচিত মাঠে সেরাটা উজাড় করে দেওয়া চ্যালেঞ্জিং। হাথুরুসিংহে মানছেন, তবে হাল ছাড়ছেন না। কোচের বিশ্বাস ভারতে তার শিষ্যরা ভালো কিছু করে দেখাতে পারবে।
চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে টাইগারদের লঙ্কান কোচ বলেন, ‘বিশ্বের সেরা দলের বিপক্ষে খেলতে পারলে আরও উৎসাহিত হই। ভারতে আসা এবং তাদের বিপক্ষে খেলা এখনকার দিনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সেরা দলের বিপক্ষে খেললে বুঝতে পারবেন, ক্রীড়াবিদ হিসেবে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন। আমরা সব সময় সেদিকে চোখ রাখি।’ পাকিস্তানকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে আসা বাংলাদেশের লক্ষ্য স্বাভাবিকভাবেই সিরিজে ভালো কিছ করা। ভারতের মাটিতে যা কঠিন মনে হলেও শান্ত-সাকিবরা প্রত্যয়ী। নিজেদের প্রসেস মেনে দল হিসেবে খেলতে পারলে ভারত থেকেও ইতিহাস গড়া সম্ভব বলে মনে করেন শান্ত।
টাইগারদের কোচেরও অমন বিশ্বাস, ‘আমার মনে হয়, সম্ভবত এই সময়ের টেস্ট দল সবচেয়ে পরিপূর্ণ। আমরা অনেক পেসার নিয়ে এসেছি, কয়েকজন ভালো গতির বোলার পেয়েছি। আমাদের স্পিন বিভাগেও অভিজ্ঞতা আছে। ব্যাটিংয়ে গভীরতা আছে দুটো কারণেÑ আমাদের দুজন স্পিনার সত্যিকারের ব্যাটার, তাদের টেস্ট শতক আছে। আর উইকেটরক্ষক আমাদের মূল ব্যাটার। এজন্য এই সিরিজে দলের ভারসাম্য খুব ভালো। এটা আমাদের আসলে বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে যে আমরা এই সিরিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারব।’
বাংলাদেশের বিপক্ষে এখন অবধি ১৩ টেস্টের ১১টিতেই জিতেছে ভারত। বাকি দুটো ড্র। ধারেভারে শক্তি-সামর্থ্যেও যোজন এগিয়ে ভারত। তা ছাড়া ঘরের মাটিতে ভারত যেন ‘এন্টি হার ডোম’ তৈরি করে রেখেছে। নিজেদের মাঠে ভারত সর্বশেষ টেস্ট সিরিজে হেরেছে ২০১২ সালে। চার টেস্টের ওই সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জেতে ইংল্যান্ড। এরপর লাল বলের ক্রিকেটে কুলীন দল খ্যাত সবাই এসেছে ভারতে, বিদায় নিয়েছে হেরে। এবার বাংলাদেশ বুনছে রোহিতদের হারানোর স্বপ্ন। ভারতের অধিনায়ক বিষয়টি নিয়ে উপহাসও করেছেন। তবে কোচ হাথুরুসিংহের বিশ্বাস সাকিব-মিরাজদের নিয়ে। তরুণ দলটির সব বিভাগে বিশ্বাস রাখছেন লঙ্কান মাস্টারমাইন্ড। ১৯ তারিখ শুরু হতে যাওয়া লড়াইয়ে চাপ সামলে হাথুরুসিংহের শিষ্যরা কতদূর হাঁটতে পারে, সেটি দেখার।