নাজমুল হক তপন
প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৫৬ পিএম
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:০৪ পিএম
বাংলাদেশ-ভারত টেস্ট সিরিজ
ভারতের মাটিতে ভারতকে হারানো প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার, কথাগুলো সাবেক পাকিস্তান বোর্ড প্রধান ও অধিনায়ক রমিজ রাজার। গত বছর সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জেতে স্বাগতিক ভারত। ওই সময়ে এমন কথা বলেন রমিজ। যত সময় যাচ্ছে ততই যেন সমৃদ্ধ হচ্ছে ভারতের গ্রাফটা। আর ঘরের মাটিতে হয়ে উঠছে অপ্রতিরোধ্য। গত এক যুগ ধরে ঘরের মাটিতে কোনো টেস্ট সিরিজে হারেনি ভারত। ক্রিকেটের এই ডেঞ্জার জোনে এখন বাংলাদেশ।
টেস্ট সিরিজে পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে এখন টগবগ করে ফুটছে টিম টাইগার্স। স্বাগতিক পাকিস্তানকে দুমড়ে-মুচড়ে দিতে পারলে, ভারতকে নয় কেন; এমন বিশ্বাস এখন লাল-সবুজ শিবিরে। পাকিস্তান তাদের ক্রিকেট ইতিহাসে ঘরের মাটিতে মাত্র দুবার হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডুবেছে। যার সর্বশেষটি ঘটিয়েছে বাংলাদেশ। স্বভাবতই টাইগাররা একটা কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারে, জন্ম দিতে পারে নতুন ইতিহাস, এই বিশ্বাসটা করছেন অনেকেই। তবে ঘরের মাটিতে ভারত যে দুর্জয় ঘাঁটি বানিয়েছে, তা ধসিয়ে দেওয়াটা যে ক্রিকেটের কঠিন কাজগুলোর একটি; সেটা অনুধাবন করার জন্য প্রয়োজন পড়ে না বিশেষজ্ঞ হওয়ার। মোটা দাগে কয়েকটি পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে বিষয়টা।
ক্রিকেটে বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে, সাম্প্রতিক সময়ে ঘরের মাঠে ধারাবাহিক সাফল্যের দিক থেকে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে অনেক ব্যবধানে এগিয়ে ভারত। ধরা যাক, ক্রিকেটের কুলীন দল অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের কথাই। ক্রিকেটের এই চার পরাশক্তির একটি দলও ঘরের মাটিতে পাঁচ বছর অপরাজিত থাকতে পারেনি। ২০২০-২১ মৌসুমে নিজেদের উঠোনে ভারতের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে টেস্টে সিরিজ হাতছাড়া করেছে অজিরা। এ বছরই প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়ার কাছে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খুইয়েছে নিউজিল্যান্ড। ২০২১ সালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে ১-০ ব্যবধানে সিরিজে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। ২০১৯-২০ মৌসুমে সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-১ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজে হেরেছে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখানে ভারত নিজেদের মাঠে প্রতিপক্ষ দলগুলোকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ারই যেন সুযোগ দিচ্ছে না।
ঘরের মাটিতে ভারত সর্বশেষ টেস্টে সিরিজে হেরেছে ২০১২ তে। চার টেস্টের ওই সিরিজে স্বাগতিক ভারতকে ২-১ ব্যবধানে হারায় ইংলিশরা। এরপর থেকে নিজেদের দুর্গ আগলে রেখেছে ভারত। বেহুলার বাসর ঘরের চেয়েও তারা নিশ্ছিদ্র করে রেখেছে নিজেদের ঘর। গত এক যুগ ধরে নিজেদের উঠোনে ১৭টি টেস্ট সিরিজ জিতেছে ভারত। এর মধ্যে তাদের জয় ৪০ টেস্টে। ৪টিতে হার। আর ৭ টেস্টে ড্র। আর তাই বাংলাদেশের জন্য এবারের ভারত সফরের চ্যালেঞ্জ কতটা কঠিন সেটা বলাই বাহুল্য। লাল-সবুজের জন্য কঠিন এই সফর কি পুরোপুরিই ‘মিশন ইম্পসিবল’ সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
রবিবার ভারতের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার প্রাক্কালে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ভারত সফরের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে বলেন, ‘অবশ্যই এটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং একটা সিরিজ। র্যাংকিং ও অভিজ্ঞতায় ওরা এগিয়ে। তবে পাকিস্তানে একটা ভালো সিরিজ খেলার পর আমাদের সবাই খুবই আত্মবিশ্বাসী। দুইটা ম্যাচই আমরা জয়ের জন্য খেলব।’
গত দুবছর বেশ কয়েকটি ‘মিশন ইম্পসিবল’কে সম্ভবে পরিণত করেছে বাংলাদেশ। গড়েছে একের পর এক নতুন ইতিহাসের সৌধ। ২০২২ সালে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটের ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ। স্বাগতিক কিউদের বিপক্ষে টেস্টে এটাই টাইগারদের প্রথম জয়। ওই সিরিজে ১-১ সমতা নিয়ে দেশে ফেরে লাল-সবুজ বাহিনী। সর্বশেষ পাকিস্তান সফরে নিজেদের অর্জনকে আরও উঁচুতে তুলেছে ‘টিম টাইগার্স’। পাকিস্তানের মাটিতে শুধু প্রথম জয়ই নয়, বাংলাওয়াশের নতুন গৌরব গাথা লিখেছে বাংলাদেশ।
সব কথার এক কথা, হিসাব বদলে দেওয়ার মতো সামর্থ্য যে টাইগারদের আছে, এটা এরই মধ্যে প্রমাণিত। ডেঞ্জার জোনে বাঘ কতটা শিকারী হয়ে ওঠে, এখন তারই অপেক্ষায় ক্রিকেটপ্রেমীরা।