প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০০:১৪ এএম
আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০০:১৮ এএম
কাজী সালাউদ্দিন
আজ শনিবার দুপুরের পর হঠাৎই বাফুফের মিডিয়া বিভাগ থেকে বার্তা। বিকাল চারটায় সংবাদ সম্মেলনে কথা বলবেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। সেটি আধাঘন্টা এগিয়ে আনা হয়। সাড়ে তিনটায় সাংবাদিকদের সামনে আসেন কিংবদন্তি এই ফুটবলার। এরপর সংবাদমাধ্যমের সামনে কথা বলেছেন মিনিট পাঁচেকের চেয়েও কম। অনেকটা নিজের বক্তব্য সেড়েই সংবাদ সম্মেলন কক্ষ ছাড়েন তিনি। তার কাছে সাংবাদিকদের বেশ কিছু প্রশ্ন থাকলেও সেসব থেকে বেছে কেবল দুই-একটিরই উত্তর দিয়েছেন সালাউদ্দিন। তড়িঘড়ি করে শেষ করা সংবাদ সম্মেলনের মূলকথা ছিল- বাফুফের আসন্ন নির্বাচনের অংশ নেবেন না তিনি।
সংবাদ সম্মেলনের পর নিজের কক্ষে যান সালাউদ্দিন। এর ঘন্টাঘানিক পর ছাড়েন বাফুফে ভবন। বেড়িয়ে যাওয়ার সময়ও সাংবাদিকদের ছিল তাকে নিয়ে আগ্রহ। তবে কারও সঙ্গে কথা না বলে নিজের গাড়িতে করে ফেডারেশন ত্যাগ করেন তিনি। যাওয়ার সময় সালাউদ্দিনের মুখে ছিল বিষন্নতার ছাপ। অনেকেই সালাউদ্দিনের এই বেড়িয়ে যাওয়াকে বাফুফে তার শেষ দেখছেন। যেন দীর্ঘ ১৬ বছরে বাফুফেতে সালাউদ্দিনের অবসান ঘটল!
যদিও বাফুফে সভাপতি থেকে পদত্যাগ করেননি সালাউদ্দিন। কেবল আসন্ন এই নির্বাচনেই তিনি অংশগ্রহণ করবেন না বলে জানিয়েছেন। এদিকে, আগামী ২৬ অক্টোর হবে এবারের সভাপতি পদের নির্বাচন। সে পর্যন্ত সালাউদ্দিনই থাকছেন সভাপতি হিসেবে। বাফুফেতে তার অধ্যায় শেষ হচ্ছে কি না সেটি নির্ভর করছে শেষ সময় পর্যন্ত নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকার ওপর। নির্বাচন নিয়ে সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমার বিষয়ে যেটি বলতে এসেছি তা হলো, আগামী নির্বাচনে আমি প্রতিযোগিতা করবো না। এটাই আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আমার সঙ্গে ১৬ বছর কাজ করার জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। এই সময়ে আপনাদের সঙ্গে অনেক ভুল বোঝাবোঝি হয়েছে। এটা হতেই পারে। এ নিয়ে কিছু মনে রাখিনি। আশা করি, আপনারাও কিছু মনে রাখবেন না।’
নির্বাচন পেছানো নিয়ে সালাউদ্দিন বলেন, ‘২৬ অক্টোবরের নির্বাচন পেছানোর দাবি ছিল কিছু লোকজনের। আমরা ফিফার কাছে চিঠি দিয়েছিলাম। তারাও আমাদেরকে চিঠির উত্তর দিয়েছে। জানিয়েছে, কোনোভাবেই নির্বাচন পেছানো যাবে না। এই নির্দেশনা তারা দিয়েছে।’ এরপর বাংলাদেশ ফুটবলের ভবিষ্যৎ শুভ কামনা জানিয়ে ৭০ বয়সি কিংবদন্তি ফুটবলার বলেন, ‘আমাকে সমর্থন দেওয়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। ফুটবল ফেডারেশন যেন আরো উন্নত হয়, এ সময়ে ফুটবল যেন ভালো থাকে এই কামনা করি। আমার মনে খুশি লাগছে একটা কারণে যে, সর্বশেষ সাফ অনূর্ধ্ব-২০- এ চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।’ সর্বশেষ সাফের চ্যাম্পিয়ন যেমন তার সময়ে হয়েছে, তেমনি বর্তমান সভাপতির আমলে আরও কিছু সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। সাফের বয়সভিত্তিক পর্যায়ে, ছেলে ও মেয়ে উভয় বিভাগে মোট চারটি শিরোপা বাংলাদেশের দখলে। আবার সভাপতি হিসেবে কাজী সালাউদ্দিনের আমলেই সিনিয়র সাফের কোনো আসরে ফাইনালে উঠতে না পারার আক্ষেপ আছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের।
ব্যর্থতার এই তালিকা আরও দীর্ঘায়িত করা যায়। দীর্ঘ ১৬ বছর বাফুফে সভাপতি থেকেও দেশের ফুটবলের সে অর্থে কোনো উন্নতি হয়নি। ফিফা র্যাংকিংয়ে ভুটানের মতো দলও এখন বাংলাদেশের ওপরে। কদিন আগেও ভুটানে গিয়ে হেরে এসেছেন জামাল ভূইয়ারা। মূলত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর গেল ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর আর বাফুফে ভবনে আসেননি সালাউদ্দিন। তবে তার পদত্যাগ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই সরোব ছিলেন সাবেকরা। অবশেষে বাফুফে ভবন থেকেই জীবনের অন্যতম বড় একটি সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। আসন্ন নির্বাচনে কেন প্রতিযোগিতা করবেন না, সে বিষয়ে কিছু বলেননি সালাউদ্দিন, ‘আমার যা বলার বলে দিয়েছি। আর কিছু বলার নেই।’ ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেই তো হতো, এত আগে কেনো ঘোষণা দিলেন? জবাবে কাজী সালাউদ্দিন বলেন, ‘কোনো কনফিউশন যাতে না থাকে, সে জন্য আগে ঘোষণা।’