বিশ্বকাপে আত্মঘাতী গোল দেওয়ায় খুন করা হয় এসকোবারকে

দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ খ্যাত ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপে দর্শকের উন্মাদনা, উচ্ছ্বাস থাকবেই। 

কিন্তু ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে সেই উন্মাদনা বেদনাদায়ক রূপ নিয়েছিল। ড্রাগ টেস্টে ম্যারাডোনার বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়াই সে বিশ্বকাপের একমাত্র আলোচিত ঘটনা ছিল না, সে বিশ্বকাপের বেদনাদায়ক ঘটনাটি ঘটে টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার ১০ দিন পরে। 

বিশ্বকাপে স্বাগতিক দেশ কলম্বিয়ার ফুটবলার আন্দ্রেস এসকোবারকে ১৯৯৪ সালের ২ জুলাই গুলি করে হত্যা করা হয়। মেডিলিনের একটি নাইট ক্লাবের বাইরে গুলির ঘটনা ঘটে। তাকে ছয়বার গুলি করা হয়েছিল এবং হত্যাকারী এ সময় গোল বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে। 

অথচ তার দলের ব্যর্থতা এমন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে বলে আগেই এসকোবারকে সাবধান করেছিলেন তার বন্ধুরা। জবাবে এসকোবার বলেছিলেন, আমাকে অবশ্যই আমার মানুষের কাছে মুখ দেখাতে হবে। 

বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে আন্দ্রেস এসকোবারের আত্মঘাতী গোলে ১-০ তে লিড পেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। পরে সেই ম্যাচ ২-১ গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে যুক্তরাষ্ট্র।

বিশ্বকাপে ম্যাচ হারার ক্ষোভ থেকেই কলম্বিয়ার একজন উগ্র ফুটবল ভক্ত এই বেদনাদায়ক ঘটনাটি ঘটান। সেই ভক্ত বাজিতে টাকা হারিয়েছিলেন। 

ফুটবল ভক্ত হামবেরতো ক্যাস্ত্রো মুনোজ ছিলেন মাদক ব্যবসায়ীর দেহরক্ষী। 

যেদিন তিনি স্কোবারকে গুলি করেন, সেই দিন রাতেই তাকে আটক করা হয়। 

পরের দিন সে স্কোবারকে গুলি করার কথা স্বীকার করে। মুনোজকে ৪৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে ২০০১-এ পেনাল কোডের অধীনে তার সাজা কমিয়ে ২৬ বছর করা হয়। জেলে ভালো ব্যবহার, পড়াশোনা ও কাজ ঠিকভাবে করায় ২০০৫ সালে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। 

ছয় ফুট লম্বা দীর্ঘদেহী আন্দ্রেস এসকোবার ছিলেন মধ্যমাঠের তুখোড় খেলোয়াড়। খেলতেন সেন্টার ব্যাক পজিশনে। অথচ একটি আত্মঘাতী গোলের কারণে তার জীবনের ইতি ঘটে।

২০০২ সালে মেদিলিন শহর কর্তৃপক্ষ এসকোবারের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে ভাস্কর্য স্থাপন করে।  

তার মৃত্যুতে কলম্বীয় ফুটবল দলের কোচ ফ্রান্সিসকো মাতুরানা বলেছিলেন, ‘আমাদের সমাজ বিশ্বাস করে যে ফুটবল আন্দ্রেসকে হত্যা করেছে। না, আন্দ্রেস এসকোবার সমাজের হাতে খুন হওয়া একজন ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন।’