প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০১:০৩ এএম
আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩২ পিএম
লিটন কুমার দাস
স্কোরবোর্ডে ২৬/৬। এখান থেকে বাংলাদেশ শতরানের নাগাল পাবে কি না এটা নিয়ে ওঠে বড় প্রশ্ন। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচ তথা সিরিজে ফেরার পথে অনেকটায় এগিয়ে যায় স্বাগতিক পাকিস্তান। মহাবিপর্যয়ের সঙ্গে বড় লজ্জায় ডোবার আশঙ্কা হয়ে ওঠে প্রবল। এমন ধ্বংস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে নতুন ইতিহাস লিখলেন লিটন কুমার দাস। রেকর্ডের সৌধ গড়ে খেললেন ১৩৮ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস। তাকে সুযোগ্য সঙ্গ দিলেন ক্রাইসিসম্যান খ্যাত মেহেদী হাসান মিরাজ। এ দুজনের এনে দেওয়া রসদ দারুণভাবে উজ্জীবিত করল তরুণ পেসার হাসান মাহমুদকে। দিনের শেষ বিকালে জোড়া আঘাতে স্বাগতিক পাকিস্তানকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিলেন হাসান। দিনের শুরুর দুঃস্বপ্ন থেকে শেষটায় নতুন স্বপ্নরথে বাংলাদেশ।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ লিড পায়নি। তারপরও রবিবার তৃতীয় দিন শেষে সিরিজ নির্ধারণী টেস্টের লাগাম নাজমুল হাসান শান্ত ব্রিগেডের হাতেই। ১২ রানে পিছিয়ে থেকে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষে হয়েছে ২৬২ রানে। স্বাগতিকদের এই ছোট্ট লিডের সান্ত্বনা দিনের শেষ বিকালে কেড়ে নিয়েছেন টাইগার পেসার হাসান মাহমুদ। তার আগুনে বোলিংয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ৯ রান তুলতেই ২ উইকেট হারিয়েছে পাকিস্তান। তাদের লিড ২১ রানের। হাতে ৮ উইকেট। ১.৪ ওভার বোলিং করে মাত্র ৩ রান দিয়েই জোড়া উইকেট শিকার করেন হাসান।
গতকাল রাওয়ালপিন্ডিতে আগের দিনের বিনা উইকেটে ১০ নিয়ে খেলতে নেমে শুরুতেই চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। টপ ও মিডল অর্ডার ধসে পড়ে বালির বাঁধের মতো। ওপেনার সাদমান ইসলাম (১০) ছাড়া বাকি পাঁচ ব্যাটারের একজনও পাননি দুই অঙ্কের ঘরের নাগাল। পতনের মিছিলে অংশ নেন জাকির হাসান (১), শান্ত (৪), মুমিনুল হক (১), মুশফিকুর রহিম (২), সাকিব আল হাসান (২)। লিটন উইকেটে এলেন ৭ নম্বরে। তার থিতু হওয়ার আগেই বিদায়ঘণ্টা বাজল সাকিবের। এরপর লিটন-মিরাজ জুটি যা করল, তাকে কী বলা যায়- অসম্ভব, অবিশ্বাস্য কিংবা অতিলৌকিক!
সপ্তম উইকেটে লিটন-মিরাজ জুটি যোগ করল ১৬৫ রান। এর মধ্য দিয়ে গড়ল নতুন রেকর্ড। টেস্ট ইতিহাসে দলীয় রান পঞ্চাশ পেরোনোর আগেই ৬ উইকেট হারানোর পর এটিই সর্বোচ্চ রানের জুটি। এর আগে এই রেকর্ডটি ছিল পাকিস্তানের আব্দুর রাজ্জাক ও কামরান আকমলের। ২০০৬ সালে করাচি টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ৩৯ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর ১১৫ রানের জুটি গড়েছিলেন এই দুজনে। মিরাজের আউটে ভাঙে এই জুটি। ১২৪ বলের ইনিংসে ৭৮ রান করেন এই টেস্টেই পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া এই অলরাউন্ডার। প্রথম টেস্টে ৭৭ রান করার পাশাপাশি স্বাগতিকদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট শিকার করেছিলেন মিরাজ।
সঙ্গী হারালেও রান-উৎসব থামাননি লিটন। ২৭ মাস পর পূর্ণ করেন ক্যারিয়ারে চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি। স্বাগতিক লেগ স্পিনার আবরার আহমেদের বলকে কাটের সাহায্যে সীমানা পার করে তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছে যান লিটন। আর সেই সঙ্গে বিরল এ কীর্তি গড়েন এই টাইগার হার্ডহিটার। দলীয় রান পঞ্চাশের কম থাকা অবস্থায় ব্যাটিং অর্ডারে পাঁচ নম্বরের নিচে নেমে তিন সেঞ্চুরি করা বিশ্বের প্রথম ব্যাটার হওয়ার রেকর্ডটি নিজের করে নেন লিটন।
এর আগে ২০২১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে ৪৯ রানে চতুর্থ উইকেট পড়ার পর ১১৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন লিটন। পরের বছর মিরপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৪ রানে পঞ্চম উইকেট পতনের পর করেন ১৪১ রান, যা টেস্টে এখন পর্যন্ত তার ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস। লিটনের অর্জন এখানেই শেষ নয়। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে পাকিস্তানের বিপক্ষে একাধিক সেঞ্চুরির মালিকানাও এখন তার। পাকিস্তানের বিপক্ষে তার আগের সেঞ্চুরিটি ১১৪ রানের। গতকাল শেষের লড়াইয়ে তাসকিন আহমেদ (১) চটজলদি ফিরে গেলেও লিটনকে দারুণভাবে সঙ্গ দেন হাসান। শেষ সেশনের প্রথম ঘণ্টায় নিজেদের উইকেট অক্ষত রাখেন দুজনই। নবম উইকেট জুটিতে ৬৯ রান যোগ করেন দুজন।
যেভাবে খেলছিলেন তাতে মনে হচ্ছিল, পাকিস্তানের ২৭৪ রান টপকানোর আগে লিটন থামবেন না। কিন্তু আগা সালমানকে বিগ হিট নিতে গিয়ে নিজের উইকেট হারান। তার ২২৮ বলে গড়া ১৩৮ রানের ইনিংসটি সাজানো ১৩ চার ও ৪ ছক্কায়। লিটনের বিদায়ের পর বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে আর কোনো রান জমা পড়েনি। শূন্য হাতে ফেরেন নাহিদ রানা। ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন হাসান।
পথ হারানোর পরিস্থিতিতে থাকা দলকে লিটন যেভাবে জাগিয়ে তুলেছেন, তাতে বড় স্বপ্নজয়ের কথা ভাবতেই পারে বাংলাদেশ।