ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৪ ২২:১২ পিএম
আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২৪ ০১:৩৯ এএম
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন আসিফ
সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক আশরাফুল হক আসিফ। সাড়ে তিন বছর বয়সেই মারা যান আসিফের বাবা আবু তালেব। তিনি ছিলেন পেশাদার ফুটবলার ও সাংবাদিক। বাবার স্বপ্ন ছিল দুই ছেলেকে বানাবেন ফুটবলার। তার আগেই তিনি মারা যান। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে শুরু হয় আসিফের মা মমতাজ বেগমের সংগ্রামী জীবন। স্বামীর স্বপ্ন পূরণে দুই ছেলেকে ফুটবলার বানাতে চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না আসিফের মায়ের।
বড় ছেলে আরিফুল হকও ময়মনসিংহ জেলা লিগের নিয়মিত একজন ফুটবলার। আর ছোট ছেলে আশরাফুল হক আসিফের নেতৃত্বে স্বাগতিক নেপালকে ৪-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের যুবারা। এতে সারা দেশের মতো বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতেছে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলাবাসী। সবাই মুখিয়ে ছিলেন ঘরের ছেলে কবে ঘরে ফিরে আসবে।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় দেশে ফিরেছে অনূর্ধ্ব-২০ দল। দেশে ফেরার পরপরই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কার্যালয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে আজ শুক্রবার (৩০ আগস্ট) ভোরে নিজ উপজেলা ঈশ্বরগঞ্জে আসেন আসিফ। পরে আজ বেলা ১১টায় ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন আসিফ।
এ সময় নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাফজয়ী দলের কাণ্ডারি আশরাফুল হক আসিফ। কান্নাজড়িত কন্ঠে আসিফ বলেন, 'আজ বাবা বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন। আমি এই জায়গায় আসার পেছনে আমার মা ও ভাইয়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। আমি ছোট থাকতেই আমার বাবা মারা যান। মা ও ভাই কষ্ট করে লালন-পালন করে আমাকে বড় করেছেন। আজ দেশের হয়ে ট্রফি জিততে পেরে খুবই আনন্দিত। দেশের ফুটবলের ক্যাপ্টেন হয়ে ট্রফি জিততে পেরে আমি খুবই গর্বিত। আমাদের এই জয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সকল শহীদ ও বন্যার্তদের প্রতি উৎসর্গ করেছি।'
আসিফের মা মমতাজ বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, 'আসিফের মা হিসেবে আমি অনেক গর্বিত। সে ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি খুব মনোযোগী ছিল। আমিও তাকে বাধা না দিয়ে উৎসাহিত করেছি। আজ আসিফের বাবার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আজ আমি সুখী।'
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তারকে কান্না করতে দেখা যায়। কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, ‘আজ আমরা আসিফকে সংবর্ধনা জানিয়েছি। আসিফ ঈশ্বরগঞ্জের গর্ব। সে দেশকে এবং ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলাকে বিশ্ব দরবারে পরিচয় করিয়েছে।’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তারের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব শাহ্ নূরুল কবির শাহিন, ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মাজেদুর রহমান, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম ভূঁইয়া মনিসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, আসিফের শুভাকাঙ্ক্ষী-স্বজন, বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ।