প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৪ ২১:০৬ পিএম
আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২৪ ২১:১৮ পিএম
ফাইনালের আগে নেপালের বিপক্ষে প্রতিশোধের কথাই বলছিলেন বাংলাদেশি
যুবারা। ছয় বছর আগের ফাইনালের হিসাব এবং সবশেষ গ্রুপ পর্বের হার। সব মিলিয়ে নেপালের
বিপক্ষে প্রতিশোধের নেশাতেই আচ্ছন্ন ছিলেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ দলের ফুটবলাররা। ফাইনালে
ঘরের মাঠে হারের পর মাঠেই কান্নায় ভেঙে পড়েন নেপালের বেশ কয়েক খেলোয়াড়। জয়োল্লাস রেখে
বাংলাদেশের সাফ জয়ের নায়ক মিরাজুল ইসলাম ছুটে গেলেন তাদের সান্ত্বনা দিতে। তরুণ এই
ফরোয়ার্ড এবং দলের প্রধান কোচ মারুফুল হক পরে স্মরণ করেছেন দেশের বানভাসি মানুষদের;
সেই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রাণ হারানো শহীদদের।
বুধবার নেপালের ললিতপুরের আনফা কমপ্লেক্সে জোড়া গোলে ম্যাচের নায়ক
বনে যান মিরাজুল ইসলাম। প্রথমার্ধের অন্তিম মুহূর্তে দুর্দান্ত ফ্রি কিকে দলকে লিড
এনে দেওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধের ৫৪ মিনিটে লিড দ্বিগুণ হয় তারই গোলে। বাকি দুটি গোল করেছেন
পিয়াস আহমেদ নোভা ও রাব্বী হোসেন রাহুল। রাব্বীর গোলেও অবদান ছিল মিরাজুলের। ৭০ মিনিটে
তার বানিয়ে দেওয়া বলেই গোল করেন রাব্বী। ওই গোলে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার ৯ মিনিট
পর একটি গোল শোধ দেয় নেপাল। যোগ করা সময়ের ৫ মিনিটের মাথায় পিয়াস গোল করে স্বাগতিকদের
ম্যাচে ফেরার আশায় জল ঢেলে দেন। তাতে ফাইনালে স্বাগতিকদের ৪-১ ব্যবধানে হারিয়ে সাফ
অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতে বাংলাদেশ।
দেশকে সাফ জেতানোর পর এক ভিডিও বার্তায় মিরাজুল বলেছেন, ‘প্রথমবার
সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, শুকরিয়া। সত্যি কথা বলতে, আমি আজকে (বুধবার) মাঠে নামার পর…
আমি টপ স্কোরার হবÑ সেটা চিন্তাতেই ছিল না। ভেবেছিলাম দলটাকে এগিয়ে নিতে চেষ্টা করব,
এরপর সেট পিস থেকে গোল পেলাম, সত্যি ভাগ্যবান আমি।’ মিরাজুল কেবল ফাইনালেরই সর্বোচ্চ
গোলস্কোরার নন; টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি গোল করা তালিকাতেও সবার ওপরে তিনি। গ্রুপ
পর্বের দুই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ও নেপালের বিপক্ষে একটি করে গোলের সুবাদে সর্বোচ্চ চার
গোল তার। যে কারণে সর্বোচ্চ গোলের পুরস্কারÑ গোল্ডেন বুট জিতেছেন তিনি। এ ছাড়া আসরের
সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়ের খেতাবও জিতেছেন ১৭ বছর বয়সি এই স্ট্রাইকার। আর সেমিফাইনালের
নায়ক এবং ফাইনালে বেশ কয়েকটি সেভের সুবাদে সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার পেয়েছেন মোহাম্মদ
আসিফ হোসেন। নিজে ভালো খেলার পুরস্কার পেয়েও প্রতিপক্ষকে মূল্যায়ন করতে ভোলেননি মিরাজুল,
‘নেপাল ভালো খেলেছে, তাদের দলেও অনেক ভালো খেলোয়াড় আছে, কিন্তু ভাগ্য ওদের পক্ষে ছিল
না। আমাদের পক্ষে ছিল।’
এবার নেপালে যাওয়ার আগেই সাফ শিরোপা জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিল
পুরো দল। আগের দুইবারের হতাশা মুছে হিমালয় দেশে শিরোপা জয়ে চোখ ছিল আর সবার মতো মিরাজুলেরও।
এদিকে বন্যার কারণে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নাজেহাল। দূর দেশে থেকে বানভাসিদের জন্য
মন কেঁদেছে তার। ফাইনাল জেতার পর সেই অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন এভাবে, ‘প্রথম থেকে লক্ষ্য
ছিল ফাইনালে খেলা। দেশে এখন খারাপ অবস্থা, অনেক কিছু হয়েছে, বন্যা চলছে, এই পুরো খেলাটা
আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য খেলেছি। নিজের জন্য আমরা খেলিনি। ফুটবল যেন এগিয়ে যায়
এজন্য খেলেছি।’
সবশেষ আসরে ভারতের বিপক্ষে হৃদয় ভাঙলেও ২০১৭ সালে এই নেপালের বিপক্ষেও
একবার ফাইনাল হেরেছিলেন বাংলাদেশি যুবারা। তা ছাড়া গ্রুপ পর্বেও বাংলাদেশকে হারের তেতো
স্বাদ উপহার দিয়েছিল নেপাল। যে কারণে ফাইনালে বেশি মনোযোগী ছিলেন বলে জানান উইঙ্গার
রাব্বী হোসেন। বলেছেন, ‘গ্রুপ পর্বে আমরা নেপালের কাছে হেরেছিলাম। এবার আমাদের লক্ষ্য
ছিল, যেভাবেই হোক ফাইনাল জিততে হবে। খেলায় সেভাবেই মনোযোগ আমাদের ছিল। স্টেডিয়ামে পরিবেশ,
সমর্থক সবকিছুই দারুণ ছিল। আমরা খুব উপভোগ করেছি। এই উপভোগ্য পরিবেশের মধ্যে সেরাটা
দিতে পেরেছিÑ এ কারণে জিততে পেরেছি।’
বাংলাদেশের বন্যার পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রাণ হারানোদের
স্মরণ করেছেন কোচ মারুফুল হকও। শিরোপা জয়ের পরও যে কারণে খুব একটা আনন্দ উল্লাস করেননি
বলে জানিয়েছেন তিনি। অথচ পুরো ম্যাচে প্রতিপক্ষের চাপের মধ্যে নিজের কৌশলের জন্য এই
ম্যাচে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। কেননা পুরো ম্যাচেই দারুণ খেলেছে নেপাল। অনেকটা
স্রোতের বিপরীতেই গোল পেয়েছেন বাংলাদেশি যুবারা। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে মারুফুলের দুটি
পরিবর্তনকেও অনেকে কার্যকরী ছিল বলে মনে করেছেন। ম্যাচ শেষে মারুফুল হক বলেছেন, ‘আজকের
(গতকাল) ম্যাচের আগে আমাদের পরিকল্পনা ছিল ধীরলয়ে খেলার। গত পরশুই আমরা একটা ম্যাচ
খেলেছিলাম (ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনাল)। অন্যদিকে নেপাল দুই দিন সময় পেয়েছিল বিশ্রামের
জন্য। ভেবেছিলাম, শুরুতে তেড়েফুঁড়ে খেলতে যাওয়াটা ছেলেদের জন্য চাপের হয়ে যাবে। শুরুর
১০ মিনিটে নেপাল আসলেই ভালো ছিল। সত্যি বলতে ওদের দলে মেধাবী খেলোয়াড় আছে; তা সত্ত্বেও
দেখলাম তারা চাপ অনুভব করছে। তখন ছেলেদের বললাম, যদি তোমরা সহজাত খেলতে পার, পাস-মুভ
ধারাবাহিকভাবে করে যাও (ফল আসবে)।’
ম্যাচ শেষে বানভাসি ও বন্যার্তদের স্মরণ করে মারুফুল বলেন, ‘প্রথমত,
আমি এই ট্রফি উৎসর্গ করছি নতুন বাংলাদেশের জন্য যে নায়করা জীবন দিয়েছেন, তাদের উদ্দেশে।
গত মাসে আমরা অনেক নায়ককে হারিয়েছি। এরপর গত কিছুদিন ধরে ভীষণ বন্যা চলছে। আমি মনে
করি, এই জয় নতুন বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে সবাইকে অনুপ্রাণিত করবে।’