রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৪ ২২:১৬ পিএম
স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে বাংলাদেশ জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারবে কিনা- এর জন্য আগামীকাল পঞ্চম ও শেষ দিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। তবে আজ শনিবার চতুর্থ দিন শেষে প্রথম টেস্টের নাগাল পুরোপুরি টাইগারদের হাতে। প্রথম ইনিংসে ১১৭ রানের লিড পেয়েছে বাংলাদেশ।
মিস্টার নির্ভরতা বিবেচিত মুশফিকুর রহিমের ১৯১ রান ছাড়াও চার হাফ সেঞ্চুরির সৌজন্যে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫৬৫ রান। যা পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। জবাবে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩ রান তুলতেই ১ উইকেট হারিয়েছে পাকিস্তান। চতুর্থ দিনের শেষে স্বাগতিকরা ৯৪ রানে পিছিয়ে। হাতে ৯ উইকেট।
আজ চতুর্থ দিনের নায়ক মুশফিক। পাকিস্তানি বোলারদের নির্বিষ করে ছাড়েন এই টাইগার রান মেশিন। তাকে সুযোগ্য সঙ্গ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সপ্তম উইকেট গড়েন ১৯৬ রানের রেকর্ড রানের জুটি। এত দিন ধরে এই রেকর্ড ছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সাকিব আল হাসানের দখলে।
২০১০ সালে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যামিল্টনে সপ্তম উইকেটে ১৪৫ রানের জুটি গড়েন এই দুজন। মুশফিক-মিরাজ জুটিতে ভর দিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ডও গড়ল বাংলাদেশ। এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল ৫৫৫। খুলনায় ২০১৫ সালে এই রান করেছিল টাইগাররা।
আজ চতুর্থ দিনের প্রথম দুটি সেশনে পাকিস্তান বোলারদের ওপর একচেটিয়া দাপট দেখায় বাংলাদেশ। প্রথম সেশনে একমাত্র ব্যাটার হিসেবে লিটন দাস আউট হলেও দ্বিতীয় সেশনে কোনো উইকেটই হারায়নি সফরকারীরা। তবে মুশফিক আউট হওয়ার পর দ্রুত উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শেষ সেশনে শেষ চার উইকেটের পতন হয় মাত্র সোয়া এক ঘণ্টার মধ্যেই।
আগের দিনের ৩১৬/৫ নিয়ে খেলতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। সাজঘরমুখো হন লিটন দাস। এ সময় নাসিম শাহের হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা বলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন তিনি। আগের দিনের সঙ্গে মাত্র ৪ রান যোগ করতে সমর্থ হন তিনি। আউট হয়ে যান ৫৬ রানে। তবে পাকিস্তান শিবিরে এই স্বস্তি স্থায়ী হতে দেয়নি মুশফিক-মিরাজ জুটি।
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে স্বাগতিক বোলারদের দুঃস্বপ্নে পরিণত হন দুজনে। শুরু করেন ধীরে সুস্থেই। দিনের প্রথম বাউন্ডারি আসে চতুর্দশ ওভারে মিরাজের ব্যাট থেকে। আগের ১৩ ওভারে ওঠে কেবল ২০ রান। এরপর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসনে দুজনই। লাঞ্চের একটু আগেই সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মুশফিক। ১১৬তম ওভারে প্রতিপক্ষ বোলার আগা সালমানের তৃতীয় বলটি ফাইন লেগে খেলে ২ রান নিয়ে তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছেন মুশফিক।
শূন্যে ব্যাট উঁচিয়ে গর্জন করে মেতে ওঠেন উদযাপনে। এটি তার ১১তম টেস্ট সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ডে ভাগ বসাতে আর একটি সেঞ্চুরি প্রয়োজন মুশফিকের। সর্বোচ্চ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান মুমিনুল হকের নামের পাশে ১২ সেঞ্চুরি।
পুরো দিনে বাংলাদেশের সেরা সময় কাটে দ্বিতীয় সেশনে। এই সেশনে কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। মিরাজ হাফসেঞ্চুরি করেন ১২০ বলে। এরপর গড়েন রেকর্ডের সৌধ। তবে সম্ভাবনা জাগিয়েও মুশফিক ডাবল সেঞ্চুরি পাননি আবার জুটিতেও দু-শ রান আসেনি।
মোহাম্মদ আলির স্টাম্পের বাইরের বল ফ্রন্টফুটে ড্রাইভ করার চেষ্টায় উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন মুশফিক। জুটিতে দু-শ হয়নি মাত্র ৪ রানের জন্য। আর ৯ রানের জন্য ক্যারিয়ারে চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরি পাননি মিস্টার ডিপেন্ডেবল। ৩৪১ বলে ২২টি চার ও ১টি ছক্কায় ইনিংসটি সাজান মুশফিক।
মুশফিকের বিদায়ের পর লড়াইটা হয়ে পড়ে মিরাজের একার। নতুন বলে পাকিস্তানি পেসাররা দ্রুতই গুটিয়ে দেন টাইগার ইনিংস। ১৮ বল খেলে শূন্য হাতে ফেরেন হাসান। তাকে ফিরিয়ে ভিন্ন উদযাপনে মাতেন প্রথম সন্তানের বাবা হওয়ার খবর পাওয়া শাহিন শাহ আফ্রিদি। মুশফিকের বিদায়ের পর বাংলাদেশের লিড বড় করার দায়িত্বটা এসে পড়ে মিরাজের কাঁধে।
তবে খুব বেশি দূর আগাতে পারেননি তিনি। ব্যক্তিগত ৭৭ রানে আফ্রিদির বলে স্লিপে সালমান আগার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মিরাজ। ১৭৯ বলের ইনিংসে ৬ বাউন্ডারি মারেন তিনি। শেষদিকে কিছুটা দৃঢ়তা দেখান শরিফুল ইসলাম। জোড়া চার ও ছক্কায় ১৪ বলে ২২ রান আসে তার ব্যাট থেকে। নাহিদ রানা অপরাজিত থাকেন ১ রানে।
দিনের শেষ বিকালে বল হাতে স্বস্তি এনে দেন শরিফুল। তুলে নেন ওপেনার সাইম আয়ুবের (১) উইকেট। টেস্টের যা অবস্থা তাতে করে জয়ের কথা ভাবতে পারে বাংলাদেশ। আর ড্র করতে হলেও বড় চ্যালেঞ্জই নিতে হবে পাকিস্তান ব্যাটারদের। একটা ভিন্ন রোমাঞ্চ নিয়ে শুরু হচ্ছে আজকের পঞ্চম ও শেষ দিনের খেলা।