সাক্ষাৎকার
রুবেল রেহান
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৪ ১১:৪৪ এএম
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৪ ১২:৫৭ পিএম
জোবেরা রহমান লিনু। সংগৃহীত ছবি
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন থেকে একমাত্র ক্রীড়াবিদ যার নাম উঠেছিল গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডবুকে। টেবিল টেনিসে কিংবদন্তি তিনি। হয়েছেন ১৬ বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ছিলেন সাইক্লিংয়েও। ব্যক্তিটি জোবেরা রহমান লিনু। ক্রীড়াঙ্গনের সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় ও টেবিল টেনিস নিয়ে শুক্রবার তিনি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে।
প্রবা : আপা কোথায় আছেন, কী করছেন?
জোবেরা রহমান লিনু : আমি এখন কোথাও নেই। বিওএ-তে (বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন) ছিলাম, কিন্তু এখন নেই। বলতে পারেন বিশ্রামে আছি। প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয়নি বলে আমি পদত্যাগ করেছি (টেবিল টেনিস ফেডারেশন থেকে)। উইমেন্স কমপ্লেক্সে ছিলাম, সেটাও ভেঙে গেছে, এখন এই অবস্থায় আছি।
প্রবা : আপনাদের সময় তো টেবিল টেনিসের বেশ জনপ্রিয়তা ছিল। এখন এই হাল কেন?
জোবেরা রহমান লিনু : আমাদের সময় অনেক টুর্নামেন্ট হতো। বছরে ৭-৮টা টুর্নামেন্ট হতো, সারা বছরই খেলা ছিল। কিন্তু এখন বছরে দুইটা টুর্নামেন্টও হয় না। এখন ক্যাম্প হয়, ক্যাম্প থেকে কেবল বিদেশ ভ্রমণ হয়। কে এলো কে এলো না সেটা বিষয় না; খালি বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে পড়ে থাকে ফেডারেশনগুলো। শুধু ২৪-২৫ জনকে নিয়ে ক্যাম্প করে, জেলা পর্যায়ে কোনো টেবিল টেনিস খেলা হয় না, ন্যাশনালও হয় না। যে কারণে অংশগ্রহণ কমে গেছে, মানুষও জানে না খেলাটা সম্পর্কে; এটা একটা কারণ। তা ছাড়া আমাদের সময় আনন্দের খোরাক ছিল খেলাধুলা। এখন ইন্টারনেট আছে, বিনোদনের অনেক মাধ্যম, দর্শকশূন্যতায় খেলা হয়। এটা একটা কারণ।
প্রবা : খেলা নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ কিংবা পিকনিক সংস্কৃতি থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসতে পারি আমরা?
জোবেরা রহমান লিনু : আমি যখন সাধারণ সম্পাদক (টেবিল টেনিস ফেডারেশন) ছিলাম, তখন আমাকে সরানোর জন্য একটা গোষ্ঠী উঠে-পড়ে লাগল। সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে হারিয়ে দেওয়া হলো আমাকে। পরের নির্বাচনে বলেছিলাম আমাকে প্রথম সহসভাপতি পদে নির্বাচন করতে সুযোগ দেওয়ার। দেখা গেল আমাকে বাদ দিয়ে আমার থেকে অনেক জুনিয়র একজনকে বেছে নিল। এখন এসব দলীয়করণ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের। নতুন সরকার নিশ্চয়ই এসব বিষয়ে নজর দেবে।
প্রবা : কেমন সংস্কার চান আপনি?
জোবেরা রহমান লিনু : আমি চাই ফেডারেশনের কমিটিতে ৬০ শতাংশই থাকবে সাবেক খেলোয়াড়। বাকি ৪০ শতাংশ অন্যরা আসতে পারে।
প্রবা : এমনও তো হয় যোগ্য লোক ক্রীড়াঙ্গনের ক্ষমতায় বসে। কিন্তু অর্থের জোগান করতে না পারায় ক্ষমতাসীনদের কাছে হেরে যায়।
জোবেরা রহমান লিনু : আমি বলব না যে ভালো খেলোয়াড় হলেই সে ভালো সংগঠক হবে। আবার এখানে একটা কথা হচ্ছে, ফেডারেশনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক যারা হন, তাদের দুজনকেই কিন্তু সবকিছু ম্যানেজ করতে হয়। এই যেমন স্পন্সর ও আর্থিক বিষয়গুলো… কিন্তু এই পদে থেকেও যদি আপনি স্পন্সর আনতে না পারেন, তবে আপনাকে পদ ছাড়তে হবে। টেবিল টেনিসেই আমি দেখেছি, সভাপতি অন্যান্য কর্মকর্তার কাছ থেকে টাকা এনে খেলোয়াড়দের বিদেশ পাঠিয়েছেন। কিন্তু সেই টাকা এখন পর্যন্ত তারা ফেরত পায়নি। এরকম হলে তো হবে না।
প্রবা : ফেডারেশনগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে এগিয়ে আসা উচিত কি না?
জোবেরা রহমান লিনু : প্রথমেই সরকারকে দেখতে হবে, ক্রীড়াঙ্গনে যেন দলীয়করণটা না আসে। সাধারণত যখন যেই রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসে তারা তাদের লোকদের ফেডারেশনে বসায়। অনেকেই আছেন ১৫-৩০ বছর ধরে ক্ষমতা ধরে বসে আছে। খেলার কোনো উন্নতি নেই, কিন্তু কর্তারা ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে আছেন। ফুটবলের আজ কী অবস্থা দেখেন, ফুটবলের কোনো উন্নতি নেই, খেলাটা একদম রসাতলে চলে গেছে। কিন্তু ফুটবলে কেউ চেয়ার ছাড়ে না।
প্রবা : ফুটবলের প্রসঙ্গ যেহেতু উঠল, মেয়েদের ফুটবল কিছু বছর আগেও একটা ভালো জায়গায় ছিল, কিন্তু সবশেষ কয়েক বছরে নারী ফুটবল দলের সে অর্থে কোনো উন্নতি হয়নি।
জোবেরা রহমান লিনু : আমি কয়েকজনের (নারী ফুটবলার) সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, খেলে ওরা যে পরিমাণ অর্থ পায় সেটি খুবই নগণ্য। যেভাবে তারা সাফল্য পেয়েছে, সেভাবে তারা অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা পাচ্ছে না। ওরা ডিস্ট্রাক্ট হচ্ছে, ডিরেক্ট ডিস্ট্রাক্ট হচ্ছে। এখন ওখানে যারা কর্মকর্তা আছেন তারা কী করছেন? তারা যদি এদের জন্য লড়াই না করেন, তবে তারা কেন ক্ষমতায় বসে আছেন?
প্রবা : কিন্তু বাফুফের সেই কর্তারা তো ক্ষমতা ছাড়ছেনই না, উল্টো সামনের নির্বাচনে লড়বেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
জোবেরা রহমান লিনু : সবাই তো নির্বাচন করার কথা বলছে, কাউকেই তারা পাত্তা দিচ্ছে না। আমরা তাহলে কোথায় বাস করছি, এখানে তো সবকিছু গায়ের জোরে হচ্ছে। এটা তো ঠিক না।