প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৪ ১৮:৩৭ পিএম
আগের দিনের চাওয়া মতো রবিবার বর্তমান ফুটবলারদের মানববন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করতে যোগ দেন বেশ কয়েকজন সাবেক খেলোয়াড়। প্রবা ফটো
কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত দেশের ফুটবলপাড়া। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনসহ কমিটির আরও কয়েকজনের পদত্যাগ দাবিতে মুখোর ছিল বাফুফে ভবনের উঠোন। গত শনিবার নতুন করে আলোচনায় কয়েকটি ফুটবল ক্লাব। যারা আসন্ন মৌসুমে খেলবে না বলে সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। এরই মধ্যেই শনিবার লিখিত বক্তব্যে না খেলার কথা বাফুফেকে জানিয়েছে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। এমন অবস্থায় সাত দফা দাবি নিয়ে গত শনিবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ভবনে মানববন্ধন করেন প্রায় ৫০ জন রানিং খেলোয়াড়। সেই দাবির কতটুকু পুরণ হলো আর কতটুকুই বা হলো না, সে হিসাব মেলানো যায়নি রবিবার পর্যন্ত।
আগের দিনের চাওয়া মতো এদিন বর্তমান ফুটবলারদের মানববন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করতে যোগ দেন সাবেক বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়। যাদের মধ্যে অন্যতম সাবেক ফুটবলার ও কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক, সাবেক ফুটবলার ও বর্তমানে মোহামেডানের কোচ আলফাজ আহমেদ, সাবেক খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠক ইমতিয়াজ আহমেদ নকিব ও সাবেক ফুটবলার জাহিদ হোসেন এমিলি। দুপুর তিনটায় শুরু হওয়া মানবন্ধন শেষে খেলোয়াড়েরা বাড়ি ফিরেছেন কেবল আশ্বস্ততা নিয়ে! বর্তমান খেলোয়াড়দের অনেকেই এখনও জানেন না আদৌ তাদের দল খেলবে কিনা, কিংবা কোনো দলে ঠাই হকে কিনা।
ক্ষতিগ্রস্তের মুখে পড়া খেলোয়াড়দের জন্য ক্রীড়ায় পুষ্ঠপোষকেরদ একপ্রকার মিনতিই করলেন সাবেক ফুটবলার মানিক। খেলোয়াড়দের মাননবন্ধনে নিজের অবস্থান জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমরা গতকালই (শনিবার) জেনেছি এবং তাদের (বর্তমানে আন্দোলনরত খেলোয়াড়দের) ইচ্ছানুযায়ী আমরা এখানে এসেছি। একজন সাবেক খেলোয়াড় হিসেবে আমরা তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি। অচিরেই যেন ফুটবল লিগটা হয়, সব দলগুলো যেন অংশগ্রহণ করে। এখন তো যে পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, তিন-চারটা দল খেলবে না, এমন অবস্থায় একশ’র ওপরে খেলোয়াড় আছেন, তারা কী করবে।’ প্রিমিয়ার লিগকে রাজনৈতিক উর্ধে রেখে স্পন্সরদের এগিয়ে আসতে আবহান জানিয়েছেন তিনি। সর্বশেষ লিগে শেখ রাসেলকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে একটি শিল্পগোষ্ঠী পরিবার। তাদেরকে ফের পৃষ্ঠাপোষকতা করার আহবান জানিয়েছেন মানিক। গুঞ্জন আছে লিগে খেলবে না চট্টগাম আবাহনীও। দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে শোনা যেত রুহুল আমিন তরফদারের নাম। তার প্রসঙ্গ টেনে সাবেক এই ফুটবলার বলেন, আমি মনে করি উনি রাগের মাথায় বলেছেন যে থাকবেন না। কিন্তু তার উচিত চট্টগ্রাম আবাহনীর হাল ধরা। আর যদি না ধরেন, তবে ভেবে নেবো উনি হয়ত রাজনৈতিক কারণে এসেছিলেন, সে কারণেই আবার চলেও গেছেন।’
আন্দোলনরত খেলোয়াড়দের একটি দাবির মধ্যে আছে বিদেশি খেলোয়াড় ছাড়া লিগ আয়োজন করা। তাতে অনেকই প্রশ্ন তুলেছেন পেশাদারিত্ব নিয়ে। এ প্রসঙ্গে মানিক বলেন, ‘আগেও আমরা বিদেশি খেলোয়াড় ছাড়া খেলেছি। দেশের এই পরিস্থিতিতে তবে কেন নয়? এমনটা হলে বর্তমান জাতীয় দল উপকৃত হবে, অনেক খেলোয়াড়ই উপকৃত হবে।’
এদিকে আন্দোলনরত খেলোয়াড়দের নাকি আশ্বস্ত করেছে কাজী সালাউদ্দিন। তার সঙোগ বৈঠকের পর রবিবার ইতিবাচক কিছুর জন্য অপেক্ষা করছেন চট্টগ্রাম আবাহনীর গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা, ‘আমরা ৮-৯ নয় খেলোয়াড় গতকাল সন্ধ্যায় (শনিবার) সালাউদ্দিন ভাইয়ের বাসায় গিয়েছিলাম। সার্বিক বিষয়ে ওনার সঙ্গে আমাদের মিটিং হয়েছে। উনি আমাদের বিষয়টা নিয়ে খুবই ইতিবাচক। উনি প্রায় সব ক্লাব অফিসিয়ালদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং সর্বোচ্চ পর্যাযের অনুরোধ করেছে। কয়েকটি ক্লাবও তাকে আশ্বস্ত করেছে বলে জানিয়েছেন। উনি বলেছে এটা এখন ফিফটি ফিফটি, আশা করি একদিনের মধ্যে আমরা ইতিবাচক কিছু তোমাদের শুনাতে পারব।
সর্বশেষ মৌসুমে আবাহনীর জার্সিতে খেলা রতমত মিয়া নতুন মৌসুমের জন্য সাইন করেন শেখ রাসেলে। কিন্তু তাদের লিগ থেকে সরে যাওয়ার খবরে মন ভালো নেই তার। চার অচিরেই মাঠে নামতে, ‘খেলোয়াড় হিসেবে আমরা সবাই ব্যক্তিগতভাবে এই সময়টাতে (ছুটি) প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। টিমের ক্যাম্পে ফিরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। সত্যি বলতে খেলায় ফেরার জন্য, মাঠে ফেরার জন্য আমাদের তর সইছিলো না। কিন্তু এখনকার এই পরিস্তিতিতে আমরা ভালো নেই।
শেখ রাসেল থেকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে তারা খেলবে না। যদিও তাদের খেলা নিয়ে ফিফটি ফিফটি চান্স আছে বলে জানিযেছেন বাফুফে সভাপতি। এ নিয়ে রহমত বলেন, ‘আমি আজকেই জেনেছি শেখ রাসেল খেলবে না। তবে আমি ইতিবাচক কিছু খবর পেয়েছি, যারা খেলতে চায়নি শুনেছি তারা শিগগিরই একটি সিদ্ধান্তে আসবে। যদি শেখ রাসেল দল না করে তবে অবশ্যই আমাকে কোথাও না কোথাও যেতে হবে। মূলকথা হলো, মাঠে তো খেলতে হবে।’
ফুটবলারদের মানববন্ধনে এসে আলফাজ আহমেদ বলেছেন, ‘এই যে ফুটবলাররা একটা চরম অবস্থায় আছে, আসলে আমি এখানে এসেছি একজন সাবেক খেলোয়াড় হিসেবে। মূলত আমরা আমাদের সময় আন্দোলন করেছি লিগ হয় না বলে। বেশ কয়েকবার আমরা লিগ খেলতেও পারিনি। এক বছর যখন লিগ হয় না তখন সব খেলোয়াড়ই খেলতে পারে না। আর এখন যেটা হলো তিন-চারটা দল খেলতে চায় না। এতে অনেক খেলোয়াড় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা তো ওদের রুটিরুজির ব্যাপার। আমার মনে হয় যে যারা আছে এখানে প্রায় অনেকেই জাতয়ী দলের খেলোয়াড়। তাদের ভবিষ্যতের একটা ব্যাপার আছে। আমি চাই যেন সবাই খেলতে পারে, সব দলই লিগে অংশগ্রহণ করে। ক্রীড়া সচিবের কাছে আমার আবেদন তিনি যেন আমাদের এই ব্যাপারটা দেখে, যেন ফুটবলটা মাঠে থাকে, এটাই আমার প্রত্যাশা।’ সবশেষে ক্রীড়াঙ্গনটা যেন রাজনীতিমুক্ত থাকে, এমনটাই প্রত্যাশা মোহামেডানের এই কোচের।
পরিস্থিতি এমন যে এটার সমাধান বাস্তবিক অর্থে বাফুফের হাতেও নেই। ফেডারেশন চাইলে খেলতে না চাওয়া ক্লাবগুলোকে শাস্তির আওতায আনতে পারে। এর বাইরে পারে কেবল অনুরোধ করতে, যাতে ক্লাবগুলো লিগে খেলতে রাজি হয়। বাফুফে সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেনের কথাতেও ছিল সেটির ছাপ, ‘আমি সচিব মহোদযের কাছে গিয়েছিলাম। উনি আমাকে উপদেষ্টার (ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া) সঙ্গে বসিয়ে দেন। সেখানে আমি বর্তমান পরিস্থিতি তুরে ধরি। আপনাদের কাছ থেকে এবং বিভিন্ন খেলোয়াড়দের কাছ থেকে শোনা যে, দুইটা বা তিনটা ক্লাব এবার লিগে আসবে না। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রই কেবল আমাদের গতকাল (শনিবার) ৫টার পর জানায় তারা এই লিগে অংশগ্রহণ করবে না। খেলোয়াড়েরা আমাদের প্রেসিডেন্ট সাহেবের (বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন) সঙ্গে বসেছে। তিনি শেখ জামাল, শেখ রাসেল এবং চট্টগ্রাম আবাহনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, খেলার জন্য তাদের অনুরোধও করেছে। এই অবস্থাই আমি উপদেষ্টা মহোদয়কে জানালাম। উনি আমাকে বলেছে যে ক্লাবগুলোর স্পন্সরশিপ যেহেতু ক্লাবগুলোকেই করতে হয় তাই এটা তারাই করার চেষ্টা করুক।’