সাক্ষাৎকারে সৈয়দ আশরাফুল হক
হেলাল নিরব
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৪ ১৫:৪০ পিএম
বিসিবিতেও সংস্কার চান ক্রিকেট কুটনৈতিক খ্যাত সৈয়দ আশরাফুল হক— সংগৃহীত ছবি
দেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ক্রিকেটাঙ্গনও অস্থির। বিসিবি কার্যালয়ে আসছেন না বিসিবি প্রধানসহ বেশিরভাগ বোর্ড পরিচালকই। নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে সেনাবাহিনী। মাঝেমধ্যে স্টেডিয়ামপাড়া কেঁপে উঠছে রাজনৈতিক স্লোগানে। জোরালো হয়ে উঠেছে বিসিবি সংস্কারের দাবি। সামনে নারী বিশ্বকাপ আয়োজনের চ্যালেঞ্জ। এমন সময়ে সবকিছু নিয়ে ক্রিকেট কূটনীতিক খ্যাত সৈয়দ আশরাফুল হক খোলামেলা কথা বলেছেন প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হেলাল নিরব।
প্রবা : রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্য সব বিভাগের মতো ক্রীড়াঙ্গনও স্বাভাবিক নেই। সংস্কারের ঢেউ উঠেছে বাংলাদেশে। বিসিবিতেও কি সংস্কার জরুরি?
সৈয়দ আশরাফুল হক : নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই। দেশের সবকিছু যখন সংস্কার হচ্ছে বিসিবি তখন বাদ পড়বে কেন! (সংস্কার) হওয়া তো উচিত। রিফর্মের কথা যদি আমি বলি, তাহলে সৎ এবং ভালো লোক সবার আগে দরকার। এখানে সৎ লোক বলতে যারা দুর্নীতি বরদাশত করবে না এবং সার্বিকভাবে ক্রিকেটের ভালো চায়, তাদের বুঝিয়েছি। যারা নিজের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে ক্রিকেটের জন্য কাজ করবে, তারা এবার আসুক। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যারা আসবে তারা যেন কাজের প্রতি সৎ থাকে।
প্রবা : আইসিসি থেকে মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভেন্যু পরিবর্তনের কথা উঠছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই বিষয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করছে। সমস্যা থেকে উত্তরণের কী পথ আছে বলে মনে করেন আপনি?
সৈয়দ আশরাফুল হক : দেখুন, ভেন্যু নিয়ে তো ঝামেলা হচ্ছে না। ভেন্যু তো বাংলাদেশেই আছে। সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি। কারণ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের এদেশে না আসতে বলেছে। এটাই প্রধান বাধা। এই বাধা যদি উতরানো যায়, মানে নিষেধাজ্ঞা যে দেশগুলো দিয়েছে (অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত ও নিউজিল্যান্ড) তারা যদি ফিরিয়ে নেয়। তাহলেই আমার মনে হয় বিশ্বকাপ আয়োজন সম্ভব। আরেকটা সমস্যা আছে। বিসিবির কার্যক্রমও স্বাভাবিক নেই। এটা যদিও খুব কঠিন কিছু না। বোর্ডে নতুন লোক নিয়ে সংস্করণ করা প্রয়োজন। এই বোর্ডে যারা সৎ আছেন, তাদের রেখে নতুন একটি কমিটি করে চালানো অসম্ভব কিছু নয়।
প্রবা : নতুন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এক্ষেত্রে কতটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন?
সৈয়দ আশরাফুল হক : ভালো ছেলে উনি। তবে সংস্কারের বিষয়টি তার ওপর নির্ভর করছে, আসলে তিনি কী চান, কীভাবে চান! আমার মতে, কিছু অভিজ্ঞ লোক থাকা উচিত এবং কিছু এই প্রজন্মের লোকও দরকার। কিছু ক্রিকেট খেলোয়াড় তো বোর্ডে অবশ্যই থাকা উচিত। একটা কথা, যিনি আসবেন তিনি যেন দুর্নীতি প্রশ্রয় না দেন। নিজের কাজে সৎ থাকেন। যারা নিঃস্বার্থে দেশের ক্রিকেটের জন্য কাজ করবে। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা আমাদের চেয়ে অনেক মেধাবী। তারা অনেক কিছু জানেন, যা আমরা এখনও জানি না। কিন্তু সবকিছুতেই একটা অভিজ্ঞতার দাম আছে, প্রয়োজন আছে। চ্যালেঞ্জ ততটা হবে না আশা করি।
প্রবা : বোর্ডপ্রধান হিসেবে বা বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে কাজ করতে আপনাকে ডাকা হলে, আপনি কি আসবেন?
সৈয়দ আশরাফুল হক : অবশ্যই। দেশের উপকারে আসতে পারলে নিশ্চিত আশা থাকবে, যদি আমাকে ডাকা হয় তবে আমি আসব। না আসার কোনো কারণ নেই! তারা আমার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাইলে, দেশের ক্রিকেটের উন্নতির জন্য কাজ করব। আমি এখন লন্ডন আছি। আমার প্রতি দেশের জনগণের যতটা আস্থা আছে, শুনে ভালো লাগে। সুযোগ থাকলে অবশ্যই কাজ করব।
প্রবা : বিসিবিতে কদিন ধরে রাজনৈতিক স্লোগান হচ্ছে। তা ছাড়া বোর্ডের অনেকে সরাসরি রাজনীতির সাথে যুক্ত। এটার প্রভাব আমাদের ক্রিকেটে কতটা পড়েছে বা সামনে পড়বে?
সৈয়দ আশরাফুল হক : স্পোর্টস শুড বি এভাব পলিটিকিস। খেলাধুলাতে রাজনীতি আসা একেবারেই কাম্য নয়। বিসিবিতে এখন যে রাজনৈতিক স্লোগানগুলো হচ্ছে, তা কোনো এক দল হয়তো করছে। এটা কখনোই উচিত না। শুধু ক্রিকেটই নয়, ক্রীড়ার কোনো অঙ্গনেই রাজনীতি আসা ঠিক না। ক্রিকেট বা অন্য যেকোনো খেলার গতি নির্ধারণ করবে স্পোর্টস পারসনরা বা যারা খেলাটাকে ভালোবাসে, সৎ, নিঃস্বার্থে উন্নতি করবে এবং যারা খেলার প্রতি দায়বদ্ধ— তারাই আসবে।
প্রবা : বিসিবিতে কোন বিষয়টি থাকা একেবারেই কাম্য নয়?
সৈয়দ আশরাফুল হক : গত ১০-১৫ বছর বা এর থেকে বেশি সময় যেভাবে বোর্ডটি চালানো হয়েছে তা পুরোপুরিই অগণতান্ত্রিক। একজনের ইচ্ছেমতো, তিনি যা বলতেন তা-ই হতো। এটা বন্ধ করতে হবে। গঠনতন্ত্রেও কিছু চেকস অ্যান্ড ব্যালান্সেস থাকা উচিত। যাতে কেউ সর্বেসর্বা হয়ে না উঠতে পারে।
প্রবা : দেশ ‘সংস্কারের’ যুদ্ধ চলছে। শহীদ জুয়েল আপনাকে যুদ্ধে যেতে নিষেধ করেছিলেন শুনেছি। সেই সময়ের সঙ্গে এই সময়ের মিল কতটা?
সৈয়দ আশরাফুল হক : জুয়েল (শহীদ ক্রিকেটার আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল) আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। জুয়েল তখন আমাকে বলেছিল, ‘তোমার এখন যুদ্ধে যাওয়া উচিত না।’ কেননা, তখন আমি সদ্য বিয়ে করেছিলাম। ও বলেছিল, এখান থেকে যতটা করা যায় দেশের জন্য ততটাই কর। কিন্তু সেই পরিস্থিতি এখন নেই! এখন যে যুদ্ধটা হচ্ছে, তা আসলে খেলাধুলার যুদ্ধ। এটা দেশ বা বেঁচে থাকার কোনো যুদ্ধ নয়। এই পরিস্থিতির সাথে ’৭১-এর সময়ের পরিস্থিতিতে অনেক পার্থক্য। তবে যদি আমাকে ডাকা হয়, তবে অবশ্যই আমি আসব। তখন যদি একলা থাকতাম, তখনও যুদ্ধে যেতাম।