প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৪ ১২:৪৩ পিএম
আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২৪ ১৩:৪৬ পিএম
রবিবার বাংলাদেশ সচিবালয়ের প্রেস ব্রিফিং কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। প্রবা ফটো
প্রথমাবারের মতো দেশে স্পোর্টস ইনস্টিটিউট তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। আজ রবিবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন তিনি। অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার পর এই প্রথম কোনো পরিকল্পনার ঘোষণা দিলেন আসিফ মাহমুদ।
ঘোষণায় তিনি বলেন, স্পোর্টস অ্যান্ড মিনিস্ট্রির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য আমরা নতুন ও যুগান্তকারী এক ঘোষণা দেওয়ার দ্বারপ্রান্তে আছি। যা এদেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে শুধু প্রথম যে তাই নয়, এটি খেলোয়াড় কোচ এবং ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার কাছে এটি হবে বিশেষায়িত স্থান। যেটি হবে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া এবং লক্ষ্য অর্জনের সহায়ক মাধ্যম। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ক্রীড়াবিদদের হাইপারফরম্যান্স, ক্রীড়ায় সামগ্রিক লক্ষ্য অর্জন, ক্রীড়াবিদদের মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, ক্রীড়া কৌশল ও নেতৃত্বগুনের মান উন্নয়ন তথা সামগ্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে জাতীয় গৌরব অর্জনের লক্ষ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘সেন্টার অব অ্যাক্সিলেন্স’ স্লোগানে বাংলাদেশের প্রথমবারের মতো নির্মিত হতে যাচ্ছে ‘বাংলাদেশ স্পোর্টস ইন্সটিটিউট’।
দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এই স্পোর্টস ইন্সটিটিউট কিভাবে সফলতা বয়ে আনবে এবং এটির কার্যকারীতা কেমন হতে পারে সেটির ব্যাখ্যায় আসিফ মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রে দক্ষ ক্রীড়াবিদ তৈরি এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও উচ্চ ফলাফল অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ স্পোর্টস ইন্সটিটিউট জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খ্যাতনামা স্পোর্টস প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কার্যকর কলাবোরেশনের মাধ্যমে বিশেষায়িত স্পোর্টস সেবা ও অবকাঠাগত সুযোগ সুবিধা প্রদান করবে।’
বেশ কিছু মিশন নিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ স্পোর্টস ইন্সটিটিউট। উন্নত বড় বড় দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এই ইন্সটিটিউট। এ বিষয়ে আসিফ মাহমুদের ব্যাখ্যা, ‘ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ফ্রান্স ও চিনসহ উন্নত রাষ্ট্র স্পোর্টস ও সায়েন্সের মেলবন্ধনে যে ফলাফল ও সাফল্য তারা অর্জন করেছে তা দেশের মাটিতেও নিশ্চিত করাই হবে আমাদের এই ইন্সটিটিউটের অন্যতম লক্ষ্য। বাংলাদেশ স্পোর্টস ইন্সটিটিউটের মিশন ও ভিশন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য অন্তর্ভূক্তিযোগ্য সেবাসমূহের মধ্যে রয়েছে- খেলোয়াড় ও অ্যাথলেটদের পারফরম্যান্স উন্নয়নে স্পোর্টস বায়োমেকানিক ইউনিট, স্পোর্টস সাইকোলোজিক ইউনিট, পারফরম্যান্স নিউট্রিশন ইউনিট, স্পোর্টস লিডারশিপ ইউনিটসহ স্পোর্টস ইনোভেশন ইউনিট। হাই ইন্টেনসিটিভ গেমের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ও টিম পারফরম্যন্স উন্নয়নে স্পোর্টস পারফরম্যান্স ডাটা ইউনিট, স্পোর্টস মেডিসিন ইউনিট, হাই পারফরম্যান্স কেয়ার ইউনিট।’ অপারেশনাল সার্ভিসেস ইউনিটে কি থাকবে সে ব্যাখ্যায় আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘ফিজিক্যাল কন্ডিশনাল ইউনিট, স্পোর্টস ফিজিওথেরাপি ইউনিট এবং টিস্যু থেরাপি ইউনিট।
সংবাদ সম্মেলনে আসিফ মাহমুদ আন্তসংস্থা নেটওয়ার্ক ও সমন্বয় নিয়ে বলেন, ‘স্পোর্টসের জন্য প্রাধ্যন্য পাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাবলিক-প্রাইভেট অ্যাকাডেমিয়া নেটওয়ার্ক। বিশেষায়িত শিক্ষা ও গবেষনাকার্যে যোগ হবে গুরুকত্বর্পর্ণ এবং সাইন্টিফিক সব বিষয়। যার মধ্যে রয়েছে স্পোর্টস বায়োমেকানিক, স্পোর্টস সাইকোলোজি, এক্সারসাইজ ফিজিওলোজি, স্পোর্টস সায়েন্স ও পিজিডি স্পোর্টস সায়েন্সসহ আরও বিশেষায়িত কার্যক্রম।’ স্পোর্টস ইন্টসিটিউটে যোগ হবে দেশ ও বিদেশের দক্ষ লোকবল। তবে আগে দেশের মধ্য থেকে দক্ষদের বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন আসিফ মাহমুদ।
এদিকে বিকেএসপি থাকতে তেন তবে এই স্পোর্টস ইন্সটিউট, এমন এক প্রশ্নের উত্তরে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার কথা, ‘বিকেএসপিতে শিক্ষাটা ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত। আরো উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা সেখানে নেই। যে কারণে আমরা স্পোর্টস ইন্সটিটিউট করার ঘোষণা দিয়েছি।’ এদিকে স্পোর্ট ইন্সটিটিউটের বাজেট কত হতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার পাসে বসা সচিব ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এটি এখনও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর্যায়ে যায়নি। আমরা এখনও বাজেট করিনি।’
সংবাদ সম্মেলনে ওঠে আসন্ন নারী বিশ্বকাপ প্রসঙ্গ। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বকাপ আয়োজন হাতছাড়া হতে পারে বলে গুঞ্জন উঠেছে। ভারতকে আয়োজনের প্রস্তাবও দিয়েছে আইসিসি। এ নিয়ে আসিফ মাহমুদের বক্তব্য, ‘টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বিষয় হচ্ছে… এটা আয়োজন করতে পারা আমাদের জন্য ভালো মাইলফলক হবে। যেহেতু বাংলাদেশ একটা সংকটকাল চলছে। আবার একই সঙ্গে যারা আমাদের মেহমান হয়ে আসবেন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও আমাদের দায়িত্ব।’
তবে বিশ্বকাপ আয়োজনের বিষয়টি আসিফ মাহমুদ ছেড়ে দিচ্ছেন সরকারের হাতে,‘সব কিছু বিবেচনায়, এটা তো ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে নেই, এটা রাষ্ট্রীয় ব্যাপার। ড. মুহাম্মদ ইউনুস স্যার আছেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নতুন নিয়োগ পেয়েছেন। সবার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেব। আইসিসির সঙ্গেও আমাদের আলোচনা চলমান আছে। তারপর এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে পারব।’
ক্রিকেটের আরও একটি বিষয় আলোচনায়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকে গাঢাকা দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। এর মধ্যেই গুঞ্জন ছড়ায়, পদত্যাগ করতে রাজি হয়েছেন তিনি। তাহলে এরপর বিসিবি কীভাবে চলবে অথবা বড় কোনো পরিবর্তন আসবে কি না, তাও জানতে চাওয়া হয় ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে। উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি আমরা সংস্কার করব সিষ্টেমের, ব্যক্তির না। সিষ্টেমকে যারা খারাপ করেছে তাদের ব্যাপারে বদল আসবে এটা সুনিশ্চিত। তবে বোর্ডের ব্যাপারে যেটা হলো গঠনতন্ত্র আছে যারা দায়িত্বে আসবে বা পাবে তাদেরকে গঠনতন্ত্র আরও গণতান্ত্রিক করে গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি যে অনিয়ম, দুর্নীতিগুলো এতদিন হয়েছে সেগুলো প্রকাশ করতে হবে। অন্য ফেডারেশন যেগুলো আছে সবার ক্ষেত্রে আমাদের একই পরিকল্পনা।’